শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
একজন মেডিকেল ছাত্র আল-মামুন ও তার মমতাময়ী মায়ের গল্প

একজন মেডিকেল ছাত্র আল-মামুন ও তার মমতাময়ী মায়ের গল্প

 

 

১৯৭৯ সালে পড়ালেখা মেয়েদের জন্য কতোটা কঠিন ছিলো তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেই সময় একজন মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে কুষ্টিয়া জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেন। তিনি আমার মা। মায়ের ইচ্ছা ছিলো বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। কিন্তু অভাবের সংসারে তা কি আর হয়? সংসারে টানাপোড়েনে পড়ে শেষ পর্যন্ত মায়ের ডাক্তার হওয়া হলোনা। পড়াশোনা কিছুদূর এগিয়েই বসতে হলো বিয়ের পিড়িতে।

আমার যখন জন্ম হলো, সেই শুভক্ষণে মায়ের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিলো, “ছেলেকে ডাক্তার বানাবো।” কিন্তু, তার সেই ইচ্ছা পূরণের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও আমার মধ্যে ছিলোনা। আমি গ্রামের অন্য ছেলেদের মতোই পড়াশোনায় খুব একটা মনোযোগ দিতাম না। ফলস্বরুপ, টিচারদের অনুরোধ করে প্রত্যেক বছর আমাকে পরের শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ নিতে হতো। এভাবে ঢিমে তালে পড়াশোনা এগুতে থাকলো। দেখতে দেখতে পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরিক্ষা চলে আসলো। মায়ের শতো অনুরোধেও আমি ভালো পড়াশোনা করলাম না। যা হওয়ার তা-ই হলো। আমি বৃত্তি পেলাম না। মা সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। অনেক কান্নাকাটি করেছিলেন, সারাদিন না খেয়ে ছিলেন। আমার কাছে আমার মা জীবনের শ্রেষ্ট সম্পদ ছিলেন। তার এই কান্না আমাকে প্রচন্ড ভাবে নাড়া দিলো। নিজের ভিতরে প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করতে থাকলো। নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, “কেনো আমি ভালো ছাত্র না? আমি কি ভালো ছাত্র হতে পারবোনা?”

আমি ভালো ছাত্র হতে পারিনি। তবে সেদিন থেকে আমি পরিশ্রমী হয়েছিলাম। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি বইখাতা হাতে নিয়েছিলাম। জীবনের মোড়টাই ঘুরে গিয়েছিলো তারপর থেকে। পাড়ার ছেলেদের সাথে ঘুরাঘুরি কমিয়ে দিয়েছিলাম। ক্লাসে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করতাম। নিজের ভিতর একটা প্রোগ্রাম সেট করে নিয়েছিলাম যে, মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে, যে করেই হোক।

আমাদের গ্রামটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সুবিধাবঞ্চিত গ্রাম। এখানে বৃষ্টির সময় স্যান্ডেল পড়ে যাওয়া যায়না। কাছে কোথাও স্বাস্থ্য কেন্দ্র নাই। কেউ অসুস্থ হলে দশ কি.মি. হেটে শহরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। একদিন রাতে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রচুর বমি করছিলাম। আব্বু রাতের বেলায়ই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে ডাক্তার দেখে বলেছিলেন, আমার জন্ডিস হয়ে লিভার বড় হয়ে গেছে। অনেক ভুগেছিলাম সে সময়। সেই থেকে জন্ডিস, লিভার নিয়ে আমার খুব জানার আগ্রহ তৈরী হয়েছিলো।

আমি এলাকায় সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে মিশেছি। তবে দরিদ্র কিংবা নিম্নবিত্ত মানুষের কষ্ট আমাকে খুব বেশি পীড়া দিতো। মায়ের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি এদের জন্য কিছু করার জন্যেও প্রতিজ্ঞা করেছিলাম।

আমার জীবনের শ্রেষ্ট দিন ছিলো যেদিন মেডিকেল এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। মায়ের স্বপ্ন,নিজের প্রতিজ্ঞা এভাবে বাস্তব হয়ে যাবে এটা আমার কল্পনাতীত ছিলো। এখন আমার একটাই ইচ্ছা। গ্রামে একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবো আমার মায়ের নামে। যে হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে লিখা থাকবে, “এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়।”

অস্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পাওয়ার পর কুষ্টিয়া জেলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “বড় হয়ে কি হতে চাও?” আমি কিছু না ভেবেই উত্তর দিয়েছিলাম “ভালো মানুষ হতে চাই।” এখনো কেউ জিজ্ঞেস করলে এই কথাটাই বলি। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, ভালো মানুষ হলে ভালো ডাক্তার হওয়া সম্ভব। মেডিকেলে এসে প্রফেসর রওশন স্যারকে দেখে একজন গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলজিস্ট হওয়ার স্বপ্ন দেখি।

যখন বন্ধুদের ফোনে আম্মু কল দিয়ে বলেন, ” আমি ডা:মামুনের আম্মু বলছি” তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়। কারণ, আমি মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছি।

মো: আল-মামুন
পঞ্চম বর্ষ (ঝয-০৯)
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ

It’s not necessary to mention how difficult it was for girls studying in 1979. At that time a girl got her first position in Kushtia district in class five and received scholarship in Talentpool. He is my mother. The mother’s desire was to become a doctor. But how could it be possible in a needy family. Eventually she couldn’t make it happen. She had to sit for marriage in her early age.

When I was born, my mother told everyone that “My son will be a doctor.” But, I did not have the slightest chance of fulfilling that desire. I did not pay much attention to studies like other boys in the village. As a result, by requesting teachers, I had to take the opportunity to get admission in the next class. In this way, the study continued to slow down. The fifth grade scholarship exam was knocking at the door. I did not study well at the mother’s hundred requests. That is what happened. I did not get scholarship. Mother was very sad that day. He made many sobs, did not eat all day. To me my mother was the best asset of life. Her tears made me tremendously sad. I was feeling immensely guilty. I asked myself, “Why am I not a good student? Can’t I be a good student?”

I could not be a good student. But from that day I was working hard. Looking at the mother’s face, I took the book back. From that moment, life was changed. I reduced traveling with the boys of the ladder. I tried to be attentive in the class.I set a program within myself that the dream of the mother must be fulfilled, however.

Our village is one of the most under privileged villages in Bangladesh. Sandals can not be allowed during the rain. There is no health center anywhere near. When someone gets sick, he has to go to the nearest hospital in the city by walking ten km path. One night I became very sick. I was vomiting a lot. Dad brought me to the hospital on that night. The doctor told that my liver became bigger and I was suffering from jaundice. At that time it was a lot of suffering. From that incident, I had a lot of interest in liver.

I’ve met all type of people in the area. But the pain of the poor had given me much pain. Besides fulfilling the dreams of the mother, I also promised to do something for them.

The best day of my life was the day when the results of the Medical Admission Test were published. I could not believe my eyes that I got chance. It was my fantasy that mother’s dreams, my own promise will become real in this way. Now my only wish is, I will establish a hospital in my mother’s name. At the hospital entrance, there will be written “Free treatment is available here.”

After receiving scholarship in the eighth class, the Deputy Commissioner of Kushtia district asked me, “What would you like to be?” I did not answer anything but “Want to be a good man.” If someone still asks I say this. Because, I believe, being a good man is a must to become a good doctor. When I came to the medical, I see the dream of becoming a Gastro-Enterologist by seeing Professor Dr. Rowshan Sir.

When mom call my friends on the phone and say, “I am the mother of Dr. Mamun”, then I feel as the happiest person in the world. Because, I’m going to fulfill Mother’s dream.

Md. Al-Mamun
5th year (Sh-09)
Shaheed Suhrawardy Medical College

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel