সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারের পরিপাটি চেহারার এক ষোড়শী নারী মামলা করেছেন থানায় একজন তরুণ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ হচ্ছে, শিক্ষক বেচারা তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করায় এখন সে সন্তান সম্ভাবা। অপরাধ খুবই গুরুতর। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩)-এর ৯ ধারায় শিক্ষক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সহসা জামিনের আশা নেই। কারণ, প্রথমত ধারা জামিন অযোগ্য অপরাধ, দ্বিতীয়ত এ মামলায় জামিন শুনানী করার এখতিয়ার নিম্ন আদালতের নেই। সে কারণে অভিযোগকারিনী মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন আসামীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে শিক্ষক বেচারা গা-ঢাকা দিয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলাকালে মহিলা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। দীর্ঘ তদন্তের পর আদালত মহিলার পক্ষে রায় দেন এবং ধর্ষক শিক্ষককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেন। আদালত শিশুটির ভরণপোষণের জন্য জেলা প্রশাসনকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা প্রদান করতে নির্দেশ দেন। আসলে এই রায়ই কি যথেষ্ট ধর্ষিতা ও তাঁর সন্তানের জন্য? চলুন জানা যাক এ বিষয়ে আইন কী বলে
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩)-এর ধারা ১৩-তে বলা হয়েছে যে, ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুটির তত্ত্বাবধান করবেন শিশুটির মা অথবা মা-পক্ষের আত্মীয়স্বজন। এ সময় শিশুটি মায়ের অথবা বাবার অথবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে। আরো বলা হয়েছে যে, শিশুটির ভরণপোষণ ব্যয় বহন করবে সরকার। এ ক্ষেত্রে শিশুটি ছেলে হলে ২১ বছর আর মেয়ে হলে বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত সরকার তার ভরণপোষণ ব্যয় বহন করবে। তবে শিশুটি যদি প্রতিবন্ধী হয়, তবে যত দিন পর্যন্ত সে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে না পারে, তত দিন পর্যন্ত সরকার ভরণপোষণ দেবে। আদালত এ ক্ষেত্রে নির্ধারণ করে দেবেন যে শিশুটিকে প্রতি মাসে ভরণপোষণ বাবদ কত টাকা দেওয়া হবে। ধারা ২০-এ বলা হয়েছে যে, এ আইনে দায়ের করা প্রতিটি মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। ধারা ১৩(৩) এ বলা হয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুটির ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। কিন্তু পরে আদালতের নির্দেশে ধর্ষণকারীকে শিশুর ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হবে। ধর্ষক ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে শিশুর ব্যয়ভার বহন করা হবে। ধারা-১৩ ও ১৫ তে বলা হয়েছে যে, ধর্ষকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহকৃত টাকা পর্যাপ্ত না হলে সে ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারী হবে এমন সম্পত্তি থেকে ভরণপোষণ ব্যয় নির্বাহ হবে। এ ক্ষেত্রে ওই সম্পত্তির ওপর কোনো ব্যাংক লোন অথবা বন্ধকি থাকলেও শিশুটির অধিকার আগে প্রাধান্য পাবে। ধারা ১৬ তে বলা হয়েছে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টর প্রথমে ধর্ষণকারীর সব প্রকার সম্পত্তির একটি তালিকা তৈরি করবেন এবং সরাসরি নিলামের মাধ্যমে সেই সম্পত্তি বিক্রি করে শিশুর ভরণপোষণ ব্যয় নির্বাহ করবেন
ধারা ১৪ তে বলা হয়েছে ধর্ষিতা ও সন্তানের ছবি, নাম, বাসা অথবা স্থায়ী ঠিকানা কোনোটাই পত্রিকা অথবা মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। যদি কেউ জানা সত্ত্বেও ভিকটিমের পরিচয় বা ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ করেন, তবে তিনি এক লাখ টাকা অর্থদ-সহ জেল ভোগ করবেন। ধারা ২৪-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো পক্ষ আদালতের রায়ের ফলে নিজেকে বঞ্চিত মনে করেন, তাহলে ওই রায় ঘোষণা হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেই কথায় ফিরে যাই। শিশুকে এই পৃথিবীতে বাসযোগ্য করতে পারি বা না পারি অন্তত মাতৃগর্ভে তার সঠিক পরিচর্যা করা খুব বেশি জরুরি নয় কি? সৃষ্টিকর্তার কি অপার মহিমা, একটি শরীরের ভেতর আরো একটি শরীর গঠন। ধিক সেই স্বামীকে যে তার স্ত্রীকে পরিপূর্ণ মর্যাদা দিতে পারে না। শত-সহস্র কোটি ঘৃণাতে বিলীন হয়ে যাক সেই স্বামী যে তার স্ত্রীকে তার আপনদের একজন ভাবতে পারে না, হৃদয়ের সবটুকু অনুভূতি দিয়ে স্ত্রীকে ভালোবাসায় সিক্ত করতে পারে না।