বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
স্বামীর কাছে গাড়ি-বাড়ি যৌতুক চাওয়ায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা ও ফলাফল

স্বামীর কাছে গাড়ি-বাড়ি যৌতুক চাওয়ায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা ও ফলাফল

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: কুষ্টিয়ার হরিশংকরপুর গ্রামের সজীব হাসানের সাথে বছর তিনেক আগে কমলাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে নাজমুন নাহারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের ঘরে আসে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। বিয়ে মানুষের জীবনে সুখকর অনুভূতির জন্ম দিলেও কখনও কখনও তা অভিশাপ রুপে দেখা দেয়। নাজমুন নাহার নিজের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠে। সজীবের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা অথবা সেখানে বিল্ডিং বানিয়ে দেয়া অথবা একটি ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার দাবিতে নির্যাতন শুরু করে নাজমুন। নিজের সীমাবদ্ধতার কথা জানালে স্ত্রী নাজমুন তাকে বিভিন্ন সময় চড়, থাপ্পড়, কিল-ঘুষিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতে থাকে। সামাজিক সম্মানের ভয়ে তিনি এসব কাউকে প্রকাশ না করে মুখ বুজে সংসার করতে থাকে। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তিনি অবশেষে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক চেয়ে না পেয়ে স্বামীকে নির্যাতন করায় মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় অভিযোগ গ্রহণ করে স্ত্রীকে হাজিরের জন্য সমন জারি করেন। বিভিন্ন সময় পুরুষ-নারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হলেও সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে মামলা করত না।

পাঠক উপরোক্ত আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, যৌতুকের শিকার হলে যে কোন পক্ষ স্বামী অথবা স্ত্রী মামলা দায়ের করতে পারেন। কোনো পক্ষ তার কাবিননামাসহ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সরাসরি এ মামলা করতে হয়। মারধরের শিকার হলে চিকিৎসা সনদ সহকারে মামলা করা উচিত, না হলে মামলা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বিয়ের সময় কাবিননামা নিজের সংগ্রহে রাখতে হবে। কারণ কাবিননামা ছাড়া এ মামলা করা সম্ভব হবে না। যৌতুকের মিথ্যা মামলা করলে মিথ্যা মামলাকারীকে শাস্তি পেতে হবে।

যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০-এর ৪ ধারা মতে, এই আইনটি বাস্তবায়নের পর থেকে যদি বর বা কনে পক্ষের বাবা-মা বা অভিভাবকের কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো যৌতুক দাবি করে তবে তাকে এক থেকে পাঁচ বছরের জেল বা জরিমানা বা উভয়ই দেয়া হবে। তবে সম্প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ ‘৭ এএলআর ২০১৬(১), এনএম শফিকুর রহমান বনাম রাষ্ট্র’ মামলায় যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন যাতে যৌতুকের সংজ্ঞা যেমন স্পষ্ট হয়েছে তেমনি সংজ্ঞাটিও যথেষ্ট সহজলভ্য হয়েছে।

যৌতুক চেয়ে সাজা পেলেন স্ত্রী
২০১৩ সালের ২১ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে উর্মি এবং তার বাবা মনির আহম্মেদ সেলিম এবং মা সফুরা খাতুনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় মামলা করে স্বামী শামসুর রহমান। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি যৌতুক হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে স্ত্রী ও তার পিতা-মাতা। দাবি করা টাকা দেওয়া না হলে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন তারা। ওই বছরের ২৭ এপ্রিল স্ত্রী উর্মীকে সংসারে ফিরে আসার অনুরোধ জানায় স্বামী সামছুর রহমান। তবে টাকা না পেলে সংসারে ফিরবে না বলে জানিয়ে দেয় উর্মী। মামলাটিতে প্রথমে পুলিশি তদন্ত এবং পরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। বিচার বিভাগীয় তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে উর্মির বাবা-মাকে বাদ দিয়ে শুধু উর্মির বিরুদ্ধে মামলাটি আমলে নেন মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান। পরে উর্মিকে আদালতে তলব করা হলে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। ২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন মহানগর হাকিম এম এ সালাম উর্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। এ মামলার বিচারকালে বাদী পক্ষে পাঁচজন এবং বিবাদী পক্ষে দুই জনের সাফাই সাক্ষ্য নেন বিচারক অমিত কুমার দে। বিচারিক রায়ে স্ত্রীকে এক হাজার টাকা জরিমানা এবং তা অনাদায়ে তিন দিনের সাজা দেয় আদালত। রায় ঘোষণার পর পরই উর্মি তা মেনে নিয়ে একহাজার টাকা আদালতে জমা দিয়ে হাজতবাসের দায় থেকে পার পেয়ে যান। এ রায়ের মধ্য দিয়ে নারীর হাতে পুরুষ নির্যাতন বা স্ত্রীর হাতে স্বামী নির্যাতনের সত্যতা প্রকাশ পায়।”

১৯৮০ সালের যৌতুক নিষিদ্ধকরণ আইনের ৩ ধারা মোতাবেক যৌতুক দেওয়া ও ৪ ধারা মোতাবেক যৌতুক নেওয়া দুটোই নিষিদ্ধ এবং অপরাধ। ৩ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ যৌতুক দেয় বা আদান-প্রদানে সহায়তা করে বা কু-প্ররোচনা দেয় এ রকম সবাই আইনে শাস্তি পাবে। যে কোনোভাবে যৌতুক দাবি করার করুক না কেন, সে সর্বাধিক পাঁচ বছর এবং এক বছরের নিচে নয় মেয়াদের কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হতে পারে। যদিও বাস্তবে কেউ যৌতুক দাবি করলেও সাক্ষী-প্রমাণ রাখে না, তাই অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel