শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
প্রাপ্তবয়স্ক যে কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্কে অংশ নেয়া অপরাধ নয়

প্রাপ্তবয়স্ক যে কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্কে অংশ নেয়া অপরাধ নয়

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: ২০০৯ সালের ২ জুলাই দিল্লি হাইকোর্টে বিচারপতি এ পি শাহ এবং বিচারপতি এস মুরলীধরের বেঞ্চ ঘোষণা করেছেন, ‘যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যে যৌন সম্পর্কে অংশ নেবেন, তাকে অপরাধ বলে চিহ্নিত করা মানে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হরণ করা।’ দিল্লি হাইকোট স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন সমকামিতা কোনো মানসিক রোগ নয়। ওই রায়ের ৩৭৭ ধারায় ‘প্রকৃতি বিরুদ্ধ’ যৌনাচার অপরাধ হলেও সেই তালিকা থেকে সমকামিতাকে বাদ দেয়া হয়। ১৮৬০ সালে লর্ড মেকলের তৈরি ওই আইনে বলা হয়েছে, ‘প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ’ যেকোনো যৌন সংসর্গের অপরাধে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- পর্যন্ত।

এদিকে মাসিক অবস্থায় কোনো নারীর সঙ্গে জোর করে যৌনমিলন করলে ধর্ষণের আওতায় পড়বে না। একটি মামলায় শুনানিতে এমনটাই রায় দিয়েছেন দিল্লি হাইকোর্ট! ভারতের নিম্ন আদালতে এক ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল আচেয় লাল নামের এক ব্যক্তি। তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ-ের নির্দেশ দেন নিম্ন আদালত। হাইকোর্ট সেই আচেয় লালকেই বেকসুর খালাস দিয়েছেন।

হাইকোর্টের বিচারপতি প্রদীপ নন্দরাজোগ ও মুক্তা গুপ্তার মতে, যেহেতু নির্যাতিতা ঘটনার সময় মাসিক পেরিয়ে গিয়েছিলেন, তাই এ ক্ষেত্রে ‘সঙ্গমের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করা হলেও এই ঘটনাকে জবরদস্তি বলা যায় না।’ ৪০-৫৫ এই বয়ঃসীমার এর কাছাকাছি যেকোনো সময়ে যদি কোনো অস্বাভাবিক কারণ ছাড়া টানা ১২ মাস নারীর মাসিক বন্ধ থাকে, তবে তাকে মেনোপজ বলে। নিগৃহীতা নারীর ঘটনার সময় বয়স ৬৫ থেকে ৭০-এর মধ্যে ছিল।

 

পাঠক এবার আসল কথায় আসি। সারা পৃথিবীতে সমকামী, বিকৃত যৌনাচার, সমমৈথুন, পশুমৈথুন নিয়ে আন্দোলন চলছে, পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে, চলতে থাকবে। বাংলাদেশ দন্ড বিধির ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে কোন পুরুষ, নারী বা জন্তুর সহিত প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সহবাস করে সেই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদ-ে বা যেকোন বর্ণনার কারাদ-ে-যার মেয়াদ দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে-দন্ডিত হবে এবং তদুপরি অর্থদ-েও দ-নীয় হবে।
এ ধারায় সম্মতিক্রমে অস্বাভাবিক বা বিকৃত যৌনাচার করলেও অপরাধ হবে। এখানে সম্মতির কোন মূল্য নেই। কেউ স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় যেনীপথ ব্যতিত অন্য কোনভাবে যা গুহ্যদ্বার, মুখের মধ্যে বা অন্য কোন মাধ্যমে সংগম অন্তে বীর্যপাত করলে এ ধারার আওতাধীন অপরাধ হবে।

এক ব্যক্তি ছাইফুল্লাহ নামক একটি বালকের সাথে সমমৈথুন করে। অভিযুক্ত আপিলকারীর বয়স ছিল ১৬ বছরের কম। তাকে ফৌজদারী কার্যবিধির পদ্ধতি অনুযায়ী বিচার করা যায় না। সে অনুপ্রবেশ করেছিল। কাজেই অভিযুক্তের কেসটি ১৯৭৪ সালের শিশু আইনের (৩৯ নং আইন) এর আওতায় আসবে।

এ ধারা অপরাধ প্রমাণ করতে হলে চারটি প্রমাণিতব্য বিষয়ের দিকে দৃষ্টি দিতে হয়। তন্মধ্যে ১। আসামী কোন পুরুষ, নারী বা জন্তুর সাথে যৌন সহবাস করেছিল, ২। যৌনসঙ্গমটি প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে ছিল, ৩। যা স্বেচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছিল, ৪। অনুপ্রবেশ ঘটেছিল।

 

আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে দুজন পুরুষ ও মহিলা ইচ্ছার বিরুদ্ধে, সম্মতি ব্যতীত, ভয় দেখিয়ে বা প্রলোভনের দ্বারা সম্মতি আদায়ের মাধ্যমে অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন মহিলাকে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতীত যৌন সহবাস করে তবে তা দ-নীয় অপরাধ হিসেবে গন্য হয়। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্ক দুজন পুরুষ ও মহিলা কোন প্রকার প্রলোভন ও ভয়ভীতি ছাড়া স্বেচ্ছায় জনসম্মুখের অগোচরে বেশ্যাবৃত্তির উদ্দেশ্য ব্যতীত যৌন সহবাস করে তবে তা অপরাধ নয়।

অথচ যদি পূর্ণ সম্মতিতে কোন প্রকার প্রলোভন ও ভয়ভীতি ব্যতীত দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ নিজেদের সাথে যৌনসহবাস করে; বা দু’জন মহিলা নিজেদের সাথে যৌনসহবাস করে; বা একজন পুরুষ একজন মহিলার সাথে ভ্যাজাইনাল যৌনসহবাস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে যৌনসহবাস করে, তবে তা আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ১ ধারায় সকল মানুষ স্বাধীন এবং সম মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে বলে ঘোষনা করা হয়েছে। ফলে লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার (এলজিবিটি)সহ সকল মানুষ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী জীবনের অধিকার; ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার; স্বেচ্ছাচারী আটক,গ্রেফতার ও নির্যাতিত না হওয়ার অধিকার; মত প্রকাশ,সংগঠন করা ও শান্তিপূর্ন সমাবেশের অধিকারসহ একজন মানুষ হিসেবে প্রাপ্য সহজাত সকল অধিকার পূণরুপে উপভোগ করার অধিকারী।

লেবাননে প্রাণীর সাথে হস্তমৈথুন বৈধ তবে সেটা অবশ্যই স্ত্রী লিঙ্গের পশু হতে হবে। যদি কোনো পুরুষ কোনো পুরুষ পশুর সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হলে তার শাস্তি মৃত্যুদ-।

কারণ অযৌনপ্রজদের যৌনপ্রজদের মত সময় নষ্ট করে সঙ্গী খুজে জোড় বাঁধতে হয় না। সংগম করে করে শক্তি বিনষ্ট করতে হয় না। নিজের বা সঙ্গির বন্ধ্যাত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। বুড়ো বয়সে ভায়াগ্রা সেবন করতে হয় না। কিংবা সন্তানের আশায় হুজুর সাঈদাবাদীর কাছে ধর্ণা দিতে হয় না। যথাসময়ে এমনিতেই তাদের বাচ্চা পয়দা হয়ে যায়। কিভাবে? আমরা এখন যে ক্লোনিং এর কথা জেনেছি, এদের প্রক্রিয়াটা অনেকটা সেরকম। এক ধরনের ‘প্রাকৃতিক ক্লোনিং’ এর মাধ্যমে এদের দেহের অভ্যন্তরে নিষেক ঘটে চলে অবিরত। ফলে কোন রকম শুক্রানুর সংযোগ ছাড়াই দেহের ডিপ্লয়েড ডিম্বানুর নিষেক ঘটে চলে। জীববিজ্ঞানে এর একটি গালভরা নাম আছে পার্থেনোজেনেসিস।

 

যৌনপ্রজরা যে সময়টা ব্যয় করে সংগি খুঁজে তোষামোদ, আদর সোহাগের পশরা খুলে ধুঁকতে ধুঁকতে জিন সঞ্চালন করে, সে সময়ের মধ্যে অযৌনপ্রজরা গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা পয়দা করে ফেলতে পারে এবং বাইরের কারো সাহায্য ছাড়াই। ফলে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে’ এরা বাড়তে থাকে গুনোত্তর হারে। ‘হুইপটেল গিরগিটিকূল’ নামে একটি প্রানী, যারা সবাই মহিলা। কিন্তু তারপরও তাদের মধ্যে সেক্স- সদৃশ একধরনের ব্যাপার ঘটে। দেখা গেছে এক গিরগিটি আরেক গিরগিটিকে যদি জড়িয়ে ধরে রাখে তাহলে তাদের ডিম পাড়ার হার বেড়ে যায়। প্রকৃতির সমকামী প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত! তাই জীববিজ্ঞানী জোয়ান রাফগার্ডেন আমেরিকার দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে দেখতে পাওয়া এই গিরগিটিগুলোকে ‘লেজবিয়ন লিজার্ড’ হিসেবে তার ‘ইভল্যুশনস রেইনবো’ বইয়ে উল্লেখ করেছেন। ২০০৬ সালে সরিসৃপকুলের আরেক প্রজাতি কমোডো ড্রাগন কোন পুরুষসঙ্গী ছাড়াই লন্ডনের চিড়িয়াখানায় বাচ্চা পয়দা করে রীতিমত আলোড়ন ফেলে দেয় । বিজ্ঞানীরা ২০০১ সালে নেব্রাস্কার ডুরলি চিরিয়াখানার হাতুরীমুখো হাঙ্গরেরও প্রজনন লক্ষ্য করেছেন কোন পুরুষসঙ্গীর সাহায্য ছাড়াই।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা, গবেষক ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel