শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিকঃ একমাত্র উইল এবং অসিয়ত ছাড়া অন্য যে কোনভাবে জমি হস্তান্তর করতে চাইলে রেজিষ্ট্রি দলিলের মাধ্যমে করতে হয়ে। রেজিষ্ট্রি দলিল ছাড়া মালিকানা হস্তান্তর হয় না। আবার দলিল রেজিষ্ট্রি করেই দিলেই হয় না। মিউটেশন করে জোত নম্বর নিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয়। জমি পরিমাপ করে দখল নিয়ে ফসলাদি উৎপন্ন করে ভোগ দখল করতে হয়।
উপরোক্ত উইল এবং অসিয়ত সম্পর্কে পাঠকের জ্ঞাতার্থে জানাই, মৃত ব্যক্তি কর্তৃক মৃত্যুর আগে তার সম্পত্তি বিলি ব্যবস্থা সংক্রান্ত দলিলকে উইল বলে। একজন মুসলমান যখন ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী উইল করেন তখন তাকে অসিয় বলে। উইল বা অসিয়ত জীবদ্দশায় বাতিল করা যায় কিংবা একাধিকরার করা যায় তাই রেজিষ্ট্রি করার কোন দরকার হয় না।
বিক্রির ক্ষেত্রে দুটো পক্ষ থাকে এক পক্ষ ক্রেতা ও অপর পক্ষ বিক্রেতা। নাবালক বা পাগল জমির মালিক হলেও বিক্রি করতে পারে না। নাবালকের পক্ষে অভিভাবক জমি বিক্রি করতে পারে। ছেলে মেয়ে যেই হোক ১৮ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নাবালক থাকে। জমি বিক্রি করতে হলে ক্রেতা বিক্রেতার সম্মতি দরকার। আপনি বিক্রি করতে রাজি না হলে কেউ জোর করে আপনার জমি কিনতে পারবে না। আপনি যে জমির মালিক সে জমি বিক্রি করতে পারেন। ভবিষ্যতে যে জমির মালিক হবেন সে জমি এখন বিক্রি করতে পারবেন না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রহিমের বাবার ১০ বিঘা জমি আছে। রহিম তার বাবার একমাত্র ছেলে। বাবা মারা গেলে ইসলামি উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সেই সম্পূর্ণ জমির মালিক হবে। কিন্তু বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় রহিম বাবার মালিকানাধীন জমি বিক্রি করতে পারবে না। কারণ বাবা বেঁচে থাকাকালীন পর্যন্ত রহিম জমির মালিক না।
আপনি বিক্রেতা হলে দাম পরিশোধ করার সাথে সাথে জমি রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারেন। আবার আগামীতে দাম পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও জমি রেজিষ্ট্রি করতে আইনত কোন বাধা নেই। তবে দাম না নিয়ে রেজিষ্ট্রি করে দিলে পরবর্তীতে ক্রেতা দাম নিয়ে টালবাহানা করতে পারে। দাম শোধ করার আগে রেজিষ্ট্রি করে দেয়ার পর বাকী টাকা না দিলে রেজিষ্ট্রি বাতিল হবে না। আপনি দাম পাননি বলে আদালতে মামলা করে দাম আদায় করতে পারেন। তবে সেটা সময় এবং প্রমাণ সাপেক্ষের ব্যাপার। তাই দাম শোধ করার পর রেজিষ্ট্রি করুন। রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিষ্ট্রির আগে দাম নিতে পারেন। সাব-রেজিষ্ট্রার রেজিষ্ট্রি করার আগে আপনি দাম পেয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করে থাকেন। নগদ টাকা নিলে ছিনতাইকারী পিছনে লাগতে পারে। জমি বিক্রির টাকা বাড়িতে রাখাও বিপদজনক। একটা একাউন্ট খুলে ব্যাংকে রাখা নিরাপদ। আজকাল একাউন্ট খুলতে হলে ফটো লাগে। টাকার পরিমাণ বেশি হলে নগদ টাকা না নিয়ে ব্যাংক ড্রাফ্ট বা চেক দিতে পারেন। আপনার ব্যাংক একাউন্ট থাকলে কোন অসুবিধা নেই। আর একাউন্ট না থাকলে একটি একাউন্ট খুলে নিন। প্রতি উপজেলায় ব্যাংক আছে। চেক নিলে চেকের টাকা জমা হওয়ার পর দলিল রেজিষ্ট্রি করুন। কারণ অনেক সময় একাউন্টে টাকা না থাকলেও চেক দেয়। তবে এরূপ করলে মামলা করে জেল জরিমানা করা যায়।
জমি বিক্রেতার দায়িত্ব
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ সালের ৫৫ ধারা অনুযায়ী জমির মালিকানা বা দখল নিয়ে কোন ঝামেলা থাকলে বিক্রেতা ক্রেতাকে তা জানাতে বাধ্য। বিক্রির আগে ক্রেতা দলিল পত্র দেখতে চাইলে বিক্রেতা তা দেখাতে বাধ্য। দখল বুঝিয়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত বিক্রেতা জমির যতœ নিতে বাধ্য। বিক্রির আগ পর্যন্ত সময়ের জন্য বিক্রেতা ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা দিতে বাধ্য। বিক্রির পর বিক্রেতা ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দিতে বাধ্য। বিক্রেতা জমির বায়া দলিলসহ অন্যান্য কাগজপত্র ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিবেন। তবে একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করলে সকলকে একটি দলিল বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব না। সেক্ষেত্রে নকল নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। আপনি ক্রেতা হলে বায়া দলিলের নকল আগেই তুলে রাখুন তাহলে প্রয়োজনের সময় আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। বিক্রেতা এসব দায়িত্ব পালন না করলে জজ কোর্টে মামলা করে বিক্রেতাকে তা করতে বাধ্য করা যায়। এই দায়িত্ব পালন না করার দরুণ ক্রেতার ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করার জন্য মামলা করা যায়।
জমি ক্রেতার দায়িত্ব
একজন ক্রেতা বিক্রিত জমির সমুদয় দাম পরিশোধ করতে বাধ্য। দাম পরিশোধ করার পর বিক্রেতা ক্রেতাকে দখল হস্তান্তর করতে বাধ্য। দাম পরিশোধ করার পর বিক্রেতা দখল হস্তান্তর না করলে সম্পত্তির উপর ক্রেতার অধিকার থাকবে। বিক্রিত জমি আগে থেকে বন্ধক দেয়া থাকলে বিক্রেতা বন্ধকের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য। বিক্রিত জমিসহ বিক্রেতার একাদিক খন্ডের জমি বন্ধক থাকলে ক্রেতা বিক্রিত জমির বন্ধকের টাকা অন্য বন্ধকী জমি খন্ড হতে পরিশোধ করে নেয়ার জন্য বন্ধক গ্রহীতাকে বলতে পারেন।