বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:১৯ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও হার মানেনি আরজিনা খাতুন

শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও হার মানেনি আরজিনা খাতুন

নিজস্ব প্রতিনিধি/মঙ্গলবার, ০৩ জুলাই ২০১৮:  শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও হার মানেনি আরজিনা খাতুন। অদম্য ইচ্ছা শক্তির কারণে ২০১৫ এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে এ শিক্ষার্থী রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সবাইকে।

 

 

কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এ কৃতি শিক্ষার্থীর এ সাফল্যে শিক্ষক-সহপাঠী ছাড়াও উচ্ছ্বসিত স্থানীয় এলাকাবাসী ও তার পরিবার। বানিয়াপাড়া এলাকার নৌকার মাঝি মোঃ মজনু বিশ্বাসের অভাবের সংসারে এবং টাকার অভাবে তার মেয়ে আরজিনার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।

 

 

এনিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক এস এম জামাল-এ প্রতিবন্ধি আরজিনাকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকাসহ অনলাইন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নজরে আসে বিষয়টি। কোন এক বুধবার গণশুনানীর দিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আরজিনা ও তার অভিভাবককে ডেকে তাকে প্রতিমাসে পড়ালেখার জন্য এক হাজার করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন সহৃদয় জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। সেসময় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, তার (আরজিনার) পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিমাসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক হাজার করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি (জেলা প্রশাসক) যদি নাও থাকি পরবর্তীতে যেই জেলা প্রশাসকই আসুক না কেন সে প্রতিমাসের টাকা পেতে পারে তার ব্যবস্থা করেছি। যাতে করে সে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে।’

 

 

 

সুমাইয়ার বড় বোন মুসলিমা জানান, জন্মের পর থেকেই সুমাইয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার দু’পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাইরের দিকে বাঁকা। আর ডান হাতের তালু পর্যন্ত থাকলেও ছোট ছোট আঙ্গুল দিয়েই তিনি লেখাপড়া চালিয়েছেন নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। এ কারণে আরজিনা আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠেনি। তবে শৈশব থেকেই পড়ালেখায় ছিল ব্যাপক আগ্রহ। তার এ ফলাফলে আমরা আনন্দিত।

 

 

পড়ালেখার জন্য প্রতিমাসে এক হাজার করে টাকা পাওয়ার পর অনুভুতিতে আরজিনা বলেন, ‘আমি তো প্রতিবন্ধী। পড়ালেখার প্রতি আমার প্রবল ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু অভাবের তাড়নায় হয়তোবা আমার আর পড়ালেখা হতো না। ডিসি স্যার আমাকে প্রতি মাসে এক হাজার করে টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন এতে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি পড়ালেখা করতে চাই।’ পরিবারর বোঝা হতে চাই না। পড়ালেখা শিখেই আমি পরিবারকে সহযোগীদা করতে চাই। পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হানও তার এ সাফল্যে অবাক হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য এবং সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। এস এসসি পাশের পর কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ থেকে সম্প্রতি এইচএসসি পাশ করে অনার্স এ ভর্তি হয়েছে আরজিনা। এরই মাঝে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য শহর সমাজসেবা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেন আরজিনা। সেখানকার কর্মকর্তা শহর সমাজসেবা অফিসার কেকেএম ফজলে রাব্বী তাকে বিনামল্যে ৬ মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন এবং প্রতিদিন যাতায়াত বাবদ সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা চালু করেন সেই কর্মকর্তা। শহর সমাজসেবা অফিসের সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে ৬ মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করে এ প্লাস পেতে সক্ষম হন সেই আরজিনা।

 

 

 

সোমবার সকালে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে সনদপত্র বিতরণ করেন অতিথি বৃন্দ। এ সময় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রোকসানা পারভীন, সহকারি পরিচালক মুরাদ হোসেন ও সমন্বয় পরিষদের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, শহর সমাজসেবা অফিসার একেএম ফজলে রাব্বী উপস্থিত ছিলেন। আরজিনার এ্ সাফল্যে সকলেই শুধু হতবাকই হয়েছেন। সদনপত্র নিতে এসে দমে না যাওয়া আরজিনা সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, মনের জোরেই আজ আমি এ পর্যন্ত এসেছি। নিজের ইচ্ছা শক্তি থাকলে অনেকদুর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব যার প্রমান এই আমি নিজে। তিনি বলেন, আমি পড়ালেখা শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। আমি প্রতিবন্ধী হওয়া স্বত্বেও পড়ালেখা করে চাকুরী করে আমি আমার পরিবারকে সহযোগীতা করতে চাই।

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel