শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৬ ও ৩৭ অনুচ্ছেদে মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাঁধা নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পূনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে-যা সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে ষ্পষ্ট করে বলা আছে। অপরদিকে সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা নিষেধ সাপেক্ষে শান্তি পূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।
সংবিধানে এসব কিছু বলা সত্ত্বেও গণউপদ্রব নিবারণকল্পে বা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ম্যাজিষ্ট্রেকে কিছু নির্দেশ দেওয়ার অধিকার দিয়াছে। এগুলো মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নয়, বরং মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষনের সহায়ক। ম্যাজিষ্ট্রেট যখন বুঝিতে পারেন যে, গণ-উপদ্রব গুরুতর আকার ধারণ করিতে যাইতেছে অথবা এমন মারামারি বা দাঙ্গা বাঁধিয়া যাওয়ার উপক্রম হইয়াছে, সেই অবস্থায় ম্যাজিষ্ট্রেট ১৪৪ ধার জারি করিতে পারে।
অন্যদিকে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার মামলা শুধুমাত্র স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে বিরোধের ফলে উদ্ভূত শান্তি ভঙ্গের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। স্থাবর সম্পত্তি দখল এবং বেদখল এর কারণে ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। দখল ও বেদখলকে কেন্দ্র করে শাস্তি শৃঙ্খলার অবনতি এমনকি রক্তারক্তি, খুন, জখমের সম্ভাবনা থাকে। এসব থেকে রক্ষা পেতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের করা যায়। ২০০৭ সালে মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর থেকে ১৪৫ ধারার মামলা দায়ের ও বিচারের কর্মকান্ড নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত এর উপর অর্পণ করা হইয়াছে। তবে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করতে হলে অবৈধভাবে বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে, বেদখল হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকতে হবে, শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি আশঙ্খা থাকতে হবে, মারামারি, ঝগড়া বিবাদ, রক্তারক্তির আশঙ্খা বিদ্যমান থাকতে হবে, সেইসাথে নিরংকুশ মালিকানা স্বত্ব বিদ্যমান থা তে হবে।
তবে মনে রাখা উচিত যে দীর্ঘদিন বেদখলে থাকালে এবং সম্পত্তি দখলে না থাকলে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার মামলা করা যায় না। সেক্ষেত্রে Declaration suit করে Tittle প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
উদাহরণঃ
রহিম মিয়া একটি বড় পুকুরের মালিক। সেখানে ভাল মাছ চাষ হয়। তার প্রতিবেশী লোকজনের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই পুকুরের মাছের উপর। একদিন লোকবলে বলীয়ান হয়ে জোরপূর্বক পুকুরে মাছ ধরতে আসে। রহিম মিয়া বাঁধা দিলে তারা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চলে যায়। তারা জনবলে বলিয়ান। যে কোন মুহুর্তে তারা জোরপূর্বক পুকুরের মাছ ধরতে পারে। রহিম মিয়া বাঁধা দিলে রক্তারক্তি হবে। এক্ষেত্রে রহিম মিয়া ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারা মতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করিতে পারে
মহানগর এলাকার ক্ষেত্রে
১৯৭৬ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশ গঠনের পর মহানগর এলাকায় ১৪৪ ধারা প্রয়োগের ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেটের বদলে পুলিশ কমিশনারের কাছে দেয়া হয়। তাই মহানগর এলাকায় ১৪৪ ধারা প্রযোজ্য নয়। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ২৮ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পুলিশ কমিশনার অস্ত্র বহন, শ্লোগান প্রদান ইত্যাদি নিষিদ্ধ করে আদেশ দিতে পারেন।
লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, , মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮