সোমবার, ০৫ Jun ২০২৩, ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ইবি প্রধান ফটক আটকে বিক্ষোভ, ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা স্ত্রী স্বামীর সংসারে না ফেরায় আইনগত প্রতিকার বনাম বাস্তবতা! মিথ্যা মামলায় জড়িত হলে কিভাবে প্রতিশোধ নিবেন? Protecting bidi industry from aggression of BAT demanded in Kushtia বাপ দাদা ও নানা বাড়ির সম্পত্তি কিভাবে উদ্ধার করবেন? বাবাকে ভর্তি কমিটিতে না রাখায় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতিকে লাঞ্ছিত করলো ছাত্রলীগ সম্পাদক তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর যৌতুক মামলা বনাম আইনী বাস্তবতা! সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিষোদগার বনাম মানির মান আল্লাহ রাখার গল্প! ব্যাচ ভিত্তিক অনুষ্ঠানে দ্বন্দ্বের জেরে বহিরাগতদের নিয়ে সহপাঠীকে মারধর চিরকালের রবীন্দ্রনাথ ও পদ্মা প্রবাহ চুম্বিত শিলাইদহ
স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে

স্বামী-স্ত্রী বিচ্ছেদের পর সন্তান কার কাছে থাকবে

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

অনেক আশা-স্বপ্ন নিয়ে দুজন মানুষ একসঙ্গে পথচলা শুরু করে। সেই পথচলা সবসময় মসৃণ হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই দুজনের সম্পর্ক এমন এক অবস্থায় এসে দাঁড়ায় যাতে বিচ্ছেদই হয়ে উঠে একমাত্র সমাধান। সিথি ও সুজনের (ছদ্মনাম) দাম্পত্য জীবনে এমনটিই ঘটেছিল।

তাঁদের দাম্পত্য জীবনে কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা ও পুত্র সন্তান। কিন্তু বিচ্ছেদের পর এ সন্তানদের আইনগত অবস্থান কী হবে, তারা কার কাছে থাকবে, কে বহন করবে তাদের ভরণপোষণ- এ নিয়ে শুরু হয় তাদের মধ্যে টানপোড়েন।

মুসলিম আইন অনুযায়ী, পিতাই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আইনগত অভিভাবক আর মা হচ্ছেন সন্তানের জিম্মাদার মাত্র। বিচ্ছেদ হলেও মা তাঁর সন্তানের তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা হারান না। ছেলের ক্ষেত্রে সাত বছর বয়স পর্যন্ত এবং মেয়ে সন্তানের বয়ঃসন্ধি বয়স পর্যন্ত মা সন্তানদের নিজের কাছে রাখতে পারবেন। সন্তানের মঙ্গলের জন্য যদি সন্তানকে মায়ের তত্ত্বাবধানে রাখার আরও প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে এ বয়সসীমার পরও মা সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে পারবেন। তবে এ জন্য ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হতে পারে। তবে মা যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেন, তাহলে সন্তানকে নিজের হেফাজতে রাখার ক্ষমতা হারাতে হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে ‘ইমামবন্দি বনাম মুসাদ্দির’ মামলায় বলা হয়েছে, ‘মুসলিম আইনে সন্তানের শরীরের ব্যাপারে লিঙ্গভেদে কিছু বয়স পর্যন্ত মা তত্ত্বাবধানের অধিকারীনি। মা স্বাভাবিক অভিভাবক নন। একমাত্র পিতাই বা যদি তিনি মৃত হন তাঁর নির্বাহক আইনগত বা বৈধ অভিভাবক।’ তবে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করলে মা এ অধিকার হারাবেন। [হেদায় ১৩৮, বেইলি ৪৩৫] সস্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ বাবার। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে ক্ষেত্রে অবশ্য মায়ের দ্বিতীয় স্বামী সন্তানের রক্ত সর্ম্পকীয় নিষিদ্ধ স্তরের মধ্যে একজন না হলে মা তার তত্ত্বাবধানের ক্ষমতা হারাবেন [২২ ডিএলআর ৬০৮]।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ১৬ ডিএলআর এ জোহরা বেগম বনাম মাইমুনা খাতুন মামলায় আদালত বলেন, নিষিদ্ধ স্তরের বাইরে মায়ের বিয়ে হলেই মায়ের কাছ থেকে হেফাজতের অধিকার চলে যাবে না। মা যদি তার নতুন সংসারে সন্তানকে হেফাজতে রাখতে পারেন, সেক্ষেত্রে তাকে সন্তানের জিম্মাদারি দিতে কোনো সমস্যা নেই।

তবে যদি আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান মায়ের হেফাজতে থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, সন্তানের কল্যাণ হবে এবং স্বার্থ রক্ষা হবে- সেক্ষেত্রে আদালত মাকে ওই বয়সের পরেও সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন। আবু বকর সিদ্দিকী বনাম এস এম এ বকর ৩৮ ডিএলআরের মামলায় এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নাবালকের কল্যাণের বিষয়টি হচ্ছে মূল কথা। আদালত নাবালকের কল্যাণ কীভাবে নিহিত আছে, সেটিই বিবেচনা করবেন। কোনো বাবা নিজের অচরণের কারণে সন্তানের তত্ত্বাবধানের অধিকার হারাতে পারেন। কোনো বাবা সন্তানের ভরণপোষণ দিতে অপারগ থাকলে সে ক্ষেত্রে বাবাকে মায়ের কাছ থেকে অধিকার সমর্পন করা ঠিক নয়। আবার মা যদি তাঁর নাবালক সন্তানের তাঁর স্বামীর আর্থিক সাহায্য ছাড়াই নিজ খরচে লালন-পালন করে থাকেন, তবে সে সন্তানকে আদালত বাবার তত্ত্বাবধানে দিতে অস্বীকার করতে পারেন। [১৭ ডিএলআর ১৩৪]। যদি কোনো নাবালকের কেউ না থাকে, আদালত নিজ বিবেচনায় অভিভাবক নিয়োগ করেন।

মায়ের অগোচরে যদি বাবা জোরপূর্বক সন্তানকে নিজের হেফাজতে গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে পিতার বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা পর্যন্ত দেয়া যাবে। এই প্রসঙ্গে,“৪৬ ডিএলআর এর আয়েশা খানম বনাম মেজর সাব্বির আহমেদ” মামলার মাধ্যমে এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অনেক সময় সন্তানের যদি ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা থাকে, তাহলে সন্তানের মতামতকেও আদালত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এ জন্য প্রয়োজন হলে সন্তানকে আলাদা করে বিচারক নিজের কাছে নিয়ে তার মতামত জেনে নিতে পারেন। আবার মা-বাবা পর্যায়ক্রমে সন্তানকে কাছে রাখা কিংবা একজনের কাছে থাকলে অন্যজনকে দেখা করার অনুমতিও দিয়ে থাকেন। পারিবারিক আদালতে নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সন্তানকে কাছে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫-এর ৫ ধারা মতে সন্তানের কাস্টডির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একচ্ছত্র এখতিয়ার পারিবারিক আদালতের। আর কাস্টডি প্রদানের ক্ষেত্রে আদালত কী কী বিবেচনা করবেন, সেগুলো গার্ডিয়ানস এন্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট, ১৮৯০-এর ১৭ ধারায় বিস্তারিত বলা রয়েছে। ওই ধারার বিধান মতে, নাবালক-নাবালিকা যে ধর্মীয় অনুশাসনের অধীন সেই অনুশাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে এবং তার সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করে আদালত অভিভাবক নিয়োগ করবেন। নাবালক-নাবালিকার কল্যাণ কী হবে, তা নির্ধারণ হবে নাবালক-নাবালিকার বয়স, লিঙ্গ, ধর্ম, প্রস্তাবিত অভিভাবকের চরিত্র, সামর্থ্য ও নাবালকের সঙ্গে নৈকট্য ও আত্মীয়তার সম্পর্ক, মৃত মা-বাবার কোনো ইচ্ছা (যদি থাকে) এবং প্রস্তাবিত অভিভাবক নাবালক-নাবালিকার সম্পত্তির বিষয়ে সম্পর্কযুক্ত কি-না ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে। এতদবিষয়ে নাবালক-নাবালিকার কোনো বুদ্ধিদীপ্ত মতামত থাকলে আদালত সেই মতামতকে প্রাধান্য দেবেন।

 

মা কখন সন্তানের জিম্মাদার হারান
১. নীতিহীন জীবনযাপন করলে,
২. যদি এমন কারো সঙ্গে তার বিয়ে হয় যিনি শিশুটির নিষিদ্ধ স্তরের মধ্যে ঘটলে তার ওই অধিকার পুনর্জীবিত হয়,
৩. সন্তানের প্রতি অবহেলা করলে ও দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে,
৪. বিয়ে থাকা অবস্থায় বাবার বসবাসস্থল থেকে দূরে বসবাস করলে,
৫. যদি সে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করে,
৬. যদি সন্তানের পিতাকে তার জিম্মায় থাকা অবস্থায় দেখতে না দেয়।

 

সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব কার
বিচ্ছেদের পর সন্তান যদি মায়ের কাছেও থাকে, তবে সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণ বাবার। অর্থাৎ মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ হলে কিংবা মা-বাবা আলাদা বসবাস করলে বাবাকেই সন্তানদের ভরণপোষণ দিয়ে যেতে হবে। ইচ্ছে করলে মা আলাদা থেকেও বিবাহবিচ্ছেদ হোক বা না হোক, সন্তানের ভরণপোষণ আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট সময়েরর মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করে ভরণপোষণের অধিকার আদায় করতে পারেন।

লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel