শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ অপরাহ্ন
ষ্টাফ রিপোর্টার: পাবনায় নারী সাংবাদিক সুবর্ণা নদীকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস এই তথ্য জানিয়েছেন।
সুবর্ণা বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘আনন্দ টিভি’র পাবনা প্রতিনিধি। পাশাপাশি দৈনিক জাগ্রতবাংলা পত্রিকায় পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাবনা পৌর সদরের রাধানগর মহল্লায় আদর্শ গার্লস হাইস্কুলের সামনে সুবর্ণার বাসার কলিং বেল টিপে কয়েকজন দুর্বৃত্ত। এসময় সুবর্ণা গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে সুবর্ণাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এদিকে সুবর্না আক্তার নদী হত্যার সন্দেহের তীর পাবনার একটি ওষুধ কোম্পানী, একটি ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালের মালিক আবুল হোসন ও তার সন্তান রাজিব হোসেনের (সাবেক স্বামী) দিকে। সন্দেহের তালিকায় রয়েছে বাড়ির কেয়ারটেকারও। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নদীর স্বজনরা জানান, প্রায় দেড় বছর আগে আবুল হোসেনের ছেলে রাজিব হোসেনের সঙ্গে নদীর বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি আবুল হোসেনের পরিবার মেনে নেয় না। একপর্যায়ে রাজিব নদীকে তালাক দেয়। এ ঘটনায় নদী আদালতে যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুবর্ণা আক্তার নদী তার সাবেক স্বামী রাজিবের বিরুদ্ধে একটি যৌতুক মামলা করেছিলেন। ঘটনার দিন নিহতের বড় বোনের স্বাক্ষীর দিন ছিলো। স্বাক্ষ্য আসামির বিপক্ষে হওয়ায় তাদের সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে বাকবিতন্ডা হয়। পরে নদী তার অফিসে এসে রাতে কাজ শেষে বাড়ির গেইটে প্রবেশ করা মাত্রই দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাথারী কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে তার মা পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বড় বোন চম্পা বেগম বলেন, মঙ্গলবার সকালে আমার বোনের যৌতুক মামলার স্বাক্ষীর দিন ছিলো। স্বাক্ষ্য আসামির বিপক্ষে যাওয়ায় রাজীব ও তার সহযোগিরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। একপর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমরা তখন সেখান থেকে বাড়িতে চলে আসি।
এ ব্যাপারে নিহতের মা মর্জিনা বেগম বলেন, আমি আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে আমাকে তার ওপর হামলাকারীদের নাম বলে। সে বলে আবুলের ছেলে রাজীব, সহকারী মিলনসহ কয়েকজন আমাকে কুপিয়েছে। আমি তাদের চিনতে পেরেছি।
বাড়ির কেয়ারটেকার ইমরান হোসেনের ছোট ভাই মেহেদী বলেন, আমার ভাই এই বাড়ির কেয়ারটেকার। ঘটনার সময় আমার ভাই বাড়ি ছিলেন না। পরে খবর পেয়ে ভয়ে বাড়ি ফেরেন নাই। রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি আসলে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে এবং সঙ্গে তার আরও কয়েকজন বন্ধুকে ধরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমলা ডায়াগনস্টিক এন্ড হাসপাতালের একজন কর্মচারী বলেন, রাতেই আমাদের মালিক আবুল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
এদিকে, বেলা ১২টায় হত্যার প্রতিবাদে পাবনার সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন থেকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, প্রেস ক্লাব সভাপতি অধ্যাপক শিবজিত নাগ, সম্পাদক আখিনুর ইসলাম রেমন, বিটিভি প্রতিনিধি আব্দুল মতীন খান, সাবেক সভাপতি রবিউল ইসলাম রবিসহ অনেকে।
এ ঘটনায় নদীর মা মর্জিনা বেগম বাদি হয়ে সদর থানায় আবুল হোসেন, তার ছেলে রাজিব ও মিলনসহ অজ্ঞাত ৬/৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।