শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
সাকিব আহমেদ:
আইন গবেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিরাজ প্রামাণিক এর ২৫ তম আইনগ্রন্থ ‘ধর্ষণ মামলা পরিচালনার কলা-কৌশল’ বইটি আমি মনোযোগ সহকারে পড়েছি। আইনের ভাষা কিছুটা জটিল, তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা হয়েছে সহজ, বোধগম্য ভাষায় বইটি লেখার জন্য। লেখকের উচ্চতর গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান মন্ডল স্যারের নিকট থেকেও বইটি লিখতে ও প্রকাশ করতে অসাধারণ পরামর্শ এসেছে। ধর্ষণ মামলা সম্পর্কে জানতে বুঝতে বিচারক, আইনজীবী, আইনের ছাত্রসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের আইন সচেতন হতে এ বইখানি খুবই সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
মানব জাতির শুরু থেকেই ধর্ষণ সমস্যার সৃষ্টি এবং পৃথিবীর সব দেশেই এ সমস্যা কমবেশী বিদ্যমান। পুরুষ নারীকে আজো বস্ত, উপভোগ্যতম বস্তু বলেই গণ্য করে। দিকে দিকে তাকে নিষিদ্ধ করে রাখতে চায় এবং তার জন্য নিষিদ্ধ রাখতে চায় সব কিছু। এ বইয়ে একজন ধর্ষিতা নারীর আইনগত অধিকার; অন্যদিকে আসামীপক্ষের ডিফেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে দিক-নির্দেশনা অলোচিত হয়েছে। ধর্ষণ মামলা পরিচালনার যাবতীয় নিয়ম-কানুন, জামিন, জবানবন্দি, জেরা ও যুক্তিতর্ক প্রভৃতি বিষয় নিয়ে লেখক এ বইটি লেখার সাহস দেখিয়েছি।
বইটির ভূমিকায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক মোঃ আব্দুল আজিজ মন্ডল লিখেছেন “কুষ্টিয়ায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় ¯েœহাস্পদ এ লেখকের সাথে আমার পরিচয়। সে সময় বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় তাঁর আইনবিষয়ক গবেষণাধর্মী নিবন্ধ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশেষ করে আইনের দুর্বোধ্য ভাষাকে প্রাণবন্ত করে উপস্থাপনের যে নৈপুন্যতা-তা রীতিরকম বিস্ময়ের দাবীদার”।
আমরা সবাই জানি মানুষের অধিকার, মর্যাদা এবং স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য আইনের সৃষ্টি। মানব জাতির শুরু থেকেই নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়ে আসছেন। পুরুষ শাসিত সমাজে ধর্ষিতার জন্য যেসব আইন রয়েছে; সেগুলোতে ধর্ষিতার অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা রীতিরকম দৃশ্যমান। এ বাস্তবতার নিরিখেই লেখকের এ বইটি। তাঁর লেখালেখির মধ্যে কোন অষ্পষ্টতা বা জটিলতা নেই। ফলে আলাদা করে লেখাগুলির ভূমিকা পাঠকদের কাছে একটা বাড়তি বোঝা মনে হতে পারে। আমাদের দেশে বাস্তব কেইস স্টাডি সম্বলিত শুধুমাত্র ধর্ষণের উপর আইন বইয়ের বেশ অভাব রয়েছে। তার উপর এ বিষয়ে উপমহাদেশের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তগুলো একত্রে পাওয়াও দুঃসাধ্য ব্যাপার। এ বইটিতে লেখক অনেকটায় স্বতন্ত্র অবস্থান করে নিয়েছেন।
বইয়ের সন্নিবেশিত ধর্ষিতার জবানবন্দি, জেরা, যুক্তিতর্ক, জামিন, নালিশী আরজি ও বেশ কিছু নিবন্ধ আমার নজরে এসেছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবভিত্তিক বিষয়গুলির বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এক কথায় ধর্ষণ মামলা পরিচালনা কিংবা প্র্যাকটিস বুঝতে, শিখতে এবং তা আদালতে প্রয়োগ করতে কিংবা ধর্ষিতা নারীর অধিকার, মানবাধিকার এবং অভিযুক্ত পক্ষের ডিফেন্স নেওয়ার প্রশ্নে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর অনুকূলে যে নীতি ও আইন রয়েছে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ বইটির ভূমিকা অপরিসীম।
দেশের অভিজাত লাইব্রেরীগুলোতে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি অধ্যায় আইনের গৎবাঁধা মারপ্যাঁচের শব্দ পরিহার করে সহজবোধ্য করে রচিত হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ে দেখানো হয়েছে উদাহরণ। এতে আইনের বিষয়গুলো আর তাত্ত্বিক থাকেনি, হয়ে উঠেছে ব্যবহারিক। ফলে পাঠক সহজেই তাঁর সমস্যার সহজ সমাধান খুঁজে পাবেন। প্রতিটি বিষয়ে সর্বশেষ সংশোধনী থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছে। সুবিন্যস্তভাবে সাজানোর কারণে বিষয়গুলো হয়ে উঠেছে সাবলীল। আইনের ভাষা কঠিন, পড়ে বোঝা কষ্টকর এ ধারণা পাল্টে যাবে বইটি পড়লে। ধর্ষণ মামলা নিয়ে কোনো আইনি ঝামেলায় পড়লে কী করতে হবে, নিয়মকানুন কী, কোথায় যেতে হবে, কত খরচ হবে পাঠক খুব সহজেই এ বই থেকে পাবেন। ৫৫ গ্রাম অফসেট কাগজে ছাপা বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২০৮। মূল্য ২৫০ টাকা মাত্র। চমৎকার প্রচ্ছদ। বইটি পেতে যোগাযোগ করুন-০১৭১৬-৮৫৬৭২৮।
লেখকঃ এলএল.বি (অনার্স), এলএল.এম (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), আইন গবেষক।