শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন
জনাব রহিম মিয়া মারা যাওয়ার সময় স্ত্রী, এক মেয়ে এবং এক ভাই রেখে যান। মুসলিম আইন অনুসারে তার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেক তার মেয়ে এবং এক-অষ্টমাংশ পাবেন তার স্ত্রী। সে হিসেবে পুরো সম্পত্তির আট ভাগের পাঁচ ভাগ এ দুজনের মধ্যে বণ্টন হওয়ার পর বাকি আট ভাগের তিন ভাগ আসাবা হিসেবে পেয়ে যাবেন রহিম মিয়ার ভাই। পক্ষান্তরে রহিম মিয়া যদি মারা যাওয়ার সময় স্ত্রী, ভাই এবং এক মেয়ের সঙ্গে একজন ছেলে সন্তানও রেখে যেতেন, সে ক্ষেত্রে সম্পত্তি বণ্টনের হিসাব-নিকাশ অন্যরকম হয়ে যেত। এ অবস্থায় স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ নেয়ার পর বাঁকি আট ভাগের সাত ভাগ তার ছেলে-মেয়ের মধ্যে ২:১ হারে বণ্টিত হয়ে যেত এবং রহিম মিয়ার ভাই সম্পত্তিতে কোনো অংশ পেতেন না।
এর অর্থ হলো রহিম মিয়ার মৃত্যুর পর তার ছেলে না থাকলে সম্পত্তির বড় একটা অংশ পরিবারের বাইরে অর্থাৎ তার ভাইয়ের কাছে চলে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে মৃত্যুকালে ছেলে রেখে গেলে তার এ সম্পত্তি পরিবারের বাইরে যাচ্ছে না।
তবে পুত্রসন্তানের অনুপস্থিতির কারণে যে অংশটুকু পরিবারের বাইরে চলে যাওয়ার কথা, সেটুকু অংশ পিতা তার জীবদ্দশায় কন্যাসন্তানের অনুকূলে উইল করে দিয়ে যেতে পারেন। অথবা জীবদ্দশায় কন্যাসন্তানকে সেই অংশটুকু হেবা করে দিতে পারেন। তবে এ দুই উপায়েই বিশেষ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তিতে যারা নির্ধারিত অংশ পাবেন, তাদের উইল করতে হলে যার অনুকূলে উইল করা হবে, তার সহ-শরিকদের মতামত গ্রহণ করতে হয়। সে হিসেবে কন্যা যেহেতু পিতার সম্পত্তিতে নির্দিষ্ট অংশ পেয়ে থাকে, তার অনুকূলে সম্পত্তি উইল করতে হলে পিতাকে অন্য সহ-শরিকদের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে; যা বাস্তবে বেশ কঠিন ব্যাপার। আবার জীবদ্দশায় কন্যাসন্তানের অনুকূলে হেবা বা সম্পত্তি দান করারও একটা ঝুঁকি রয়েছে। হেবা সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয় বলে হেবা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তার মালিক হয়ে যায় হেবা গ্রহিতা। এখন সম্পত্তি যদি বাবা-মা তার মেয়ের অনুকূলে হেবা করে দেন, সে ক্ষেত্রে বাবা তার জীবদ্দশায় অনিরাপদ বোধ করতে পারেন, কারণ সম্পত্তি তখন আইনগতভাবে আর তার মালিকানায় থাকে না। সম্পত্তিহীনভাবে বাঁকি সময়টা মেয়ের গলগ্রহ হয়ে পড়ে থাকার ঝুঁকি তাই কোনো বাবা-মা নিতে চান না।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে। ধরা যাক, মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগনের মধ্যে আছে স্ত্রী, ২ কন্যা ও ১ ভাই এবং মোট সম্পত্তি ১০০ শতক। মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর যদি কোন সন্তান থাকে তাহলে উক্ত স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি ১/৮ অংশ পাবে।
অর্থাৎ ১০০ শতক জমির ৮ ভাগের ১ ভাগ পাবে স্ত্রী। ১০০/ ৮= ১২.৫ শতক।
দুই কন্যা কি পরিমাণ সম্পত্তি পাবে?
কোন ব্যক্তি যদি শুধুমাত্র ২ জন কন্যা সন্তান থাকে তাহলে উক্ত কন্যা সন্তানের প্রত্যেকেই পিতার মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশের মালিক হবে।
অর্থাৎ পিতার মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ করে দুই কন্যাই পাবে।
অতএব, ১০০/ ৩ = ৩৩.৩৩ শতক প্রত্যেক কন্যা পাবে।
এখন জানা যাক মৃত ব্যক্তির ভাই কত অংশ পাবে?
মোট সম্পত্তি ১০০ শতক এর মধ্যে-
স্ত্রী পেয়েছে- ১২.৫ শতক
১ম কন্যা- ৩৩.৩৩ শতক
২য় কন্যা- ৩৩.৩৩ শতক
স্ত্রী ও দুই মেয়ে মিলে পেয়েছে মোট ৩৩.৩৩+৩৩.৩৩= ৭৯.১৬ শতক
অবশিষ্ট সম্পত্তি ১০০-৭৯.১৬ =২০.৮৪ শতক ভাই পাবে।
যোগাযোগঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮