শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
জেলা প্রতিনিধি : নদীঘেরা সুউচ্চ পর্বতমালা, সারি সারি সবুজ পাহাড় আর ১১টি নৃগোষ্ঠীর জীবন ধারা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র সব দিকে দিয়েই পার্বত্য জেলা বান্দরবানকে আলাদা করা যায়। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে এই জেলায়। গত দশ বছরে পর্যটন শিল্পে আশাতীত সাফল্য এসেছে। নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র ও অবকাঠামোও গড়ে উঠেছে এ জেলায়। কিন্তু সে তুলনায় পর্যটক নেই। দেশি পর্যটকতো বটেই বিদেশি পর্যটকদের আগমনও কমে গেছে। গত কয়েক বছর ধরে পর্যটকদের আগমন কমেছে এ জেলায়। ফলে পর্যটন কেন্দ্রীক ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। লোকসান গুণছেন ব্যবসায়ীরা।
এত বৈচিত্র, সম্পদ ও সম্ভাবনা থাকার পরও কেনো পর্যটক নেই বান্দরবানে। এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য। ঢাকার পর্যটক দম্পতি আশরাফ হোসেন ও তার স্ত্রী নাজনিন বেগম নতুন বিয়ে করেই বান্দরবানে বেড়াতে এসেছেন। শহরের কাছে নীলাচল স্বর্ণ মন্দির ঘুরে বেড়ানো, চিম্বুক পাহাড়ের নীলগিরি, শৈল প্রপাত ঝরণা দেখা একদিনেই তাদের খরচ দশ হাজার টাকা ছুঁয়েছে। তারা জানালেন বান্দরবানে ঘুরে বেড়ানোর খরচ বেশি। প্রায় একই খরচ দিয়ে এখন ভারত, নেপাল ভুটানসহ বিভিন্ন এলাকা বেড়ানো যায়।
বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা জানান, চিম্বুক পাহাড়ের নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র বেড়াতে জিপ ভাড়া নেওয়া হয় ৪৩’শ টাকা। হোটেলে খাওয়া খরচ অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি। পর্যটন মৌসুমের সময় এই খরচ দ্বিগুণ হয় বান্দরবানে। অথচ পর্যটকদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা নেই।
পর্যটক আশরাফ হোসেনের মতো সবারই প্রায় একই অভিযোগ। বান্দরবান প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের অন্যতম স্থান হলেও পর্যটন খাতের উন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা নেই। রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। প্রশাসনিক জটিলতায় বিদেশি পর্যটকরাও এখন খুব একটা আসতে চান না পাহাড়ে।
অন্যদিকে দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, ভালো যানবাহনের অভাব ও পর্যটন কেন্দ্রীক বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটক কমছে বান্দরবানে। এছাড়া প্রতিবছরই পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগও পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে।
বান্দরবান হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান পাহাড় ধসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক প্রাণহাণির ঘটনার পর পর্যটন শিল্পে এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বান্দরবানে পর্যটকের আগমন অনেক কমেছে। শহর ও আশেপাশের এলাকায় নতুন নতুন হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্র বাড়লেও সেই তুলনায় পর্যটক বাড়ছে না।
এখন একসাথে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে বান্দরবানে, যা গত পাঁচ বছর আগেও ছিল না। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র ও অবকাঠামো করা হচ্ছে। তবে পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রচার প্রচারণার দিকে খেয়াল দিতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়াতে প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে হবে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।
ঢাকায় মতিঝিলে ব্যবসা করেন আলী হাসান। গত আগষ্টে বন্ধুদের সাথে বান্দরবানে বেড়াতে আসেন। থানছি উপজেলার নাফাখুম ও রুমা উপজেলার তিনাফ সাইথার ঝরণায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও নিরাপত্তার কারণে তারা সেখানে যেতে পারেন নি। বান্দরবানের নতুন নতুন এসব ঝরণা ও স্থানগুলো পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে পর্যটকরা এসব জায়গায় সব সময়ে যেতে পারছেন না।
বান্দরবান জিপ চালক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ হারুন জানান পর্যটক না থাকায় অনেক পরিবহন শ্রমিক দুর্ভোগে পড়েছে। গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় পর্যটকরা ভিন্ন উপয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকে বান্দরবানে না এসে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। পর্যটকদের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা বান্দরবানে আসতে উৎসাহ হারাচ্ছেন। পর্যটন শিল্পের সমস্যাগুলেলা চিহ্নিত করে দ্রত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান পরিবহন শ্রমিকরা।
থানছির সাংবাদিক অনুপম মারমা জানান পর্যটকরা এখন অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। তারা নতুন নতুন এলাকা ঘুরে বেড়াতে চান। দুর্গম নাফাখুম, সাত ভাই খুম, ডিম পাহাড়, দামতুয়া ঝরণা, দেবতা খুম, রিজুক ঝরণা, অমিয়া খুম, তিনাপ সাইথার, জাদি ফাই ঝরণাসহ কেউক্রাডং তাজিং ডং পাহাড়ের বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় এখন সব চেয়ে বশি পর্যটক বেড়াতে যাচ্ছেন।
কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা বা নিরাপত্তার অভাব রয়েছে এসব এলাকায়। নিরাপত্তা বাড়ানোসহ প্রশাসনের পক্ষ পর্যটকদের জন্য সুবিধা বাড়ানো গেলে এসব এলাকা পর্যটন শিল্পের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের বিকাশে নানা উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এর মধ্যে পর্যটনের নতুন নতুন এলাকাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসকা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম।