শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৫ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
হাইকোর্টে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির নতুন বিধান নিয়ে বিতর্ক

হাইকোর্টে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির নতুন বিধান নিয়ে বিতর্ক

স্টাফ রিপোর্টার: হাইকোর্টে নতুন আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির জন্য করা নতুন একটি বিধান নিয়ে বিতর্ক ও বিভক্তি দেখা দেয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। অনেকে বিধানটিকে সমর্থন করলেও আইনজীবীদের একটি বড় অংশ মনে করেন নতুন নিয়মে ২৫ বছর নিম্ন (অধঃস্তন) আদালতে প্রাকটিস করার অভিজ্ঞতা থাকলে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে শুধু মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার নিয়মটি সঠিক হয়নি। এ কারণে সরকারের আনা নতুন এই সংশোধনীর গেজেটটি বাতিল চেয়ে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন তারা।

আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার’স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। সম্প্রতি আইনটির একটি বিধানে সরকার সংশোধনী এনেছে। বার কাউন্সিলের আগের বিধান অনুসারে নিম্ন আদালতে দুই বছর প্রাকটিসের পর হাইকোর্টের আইনজীবী হতে প্রার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হতো। কিন্তু, সরকারের নতুন সংশোধনীতে বলা হচ্ছে, নিম্ন আদালতের আইনজীবীদের ২৫ বছরের প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা থাকলে তাকে আর হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তিতে লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে না। শুধুমাত্র সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হলেই তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে প্রাকটিস করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুমার দেবুল দে গণমাধ্যমকে বলেন, জুডিশিয়াল অফিসার (বিচারক) থেকে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করতে চাইলে তাকে ১০ বছর বিচারক হিসেবে কাজ করতে হয়, তাই তার ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা না দিয়ে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকে। কিন্তু আইনজীবীদের ক্ষেত্রে তা ২৫ বছর করায় এটা আইনজীবীদের প্রতি বৈষম্য হয়েছে। তাই আমি মনে করি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তিতে নিম্ন আদালতে ১০ বছরের প্র্যাকটিসের অভিজ্ঞতা চাওয়া উচিত ছিল। তাছাড়া হাইকোর্টের লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি ও প্রশ্ন খুব একটা মেধাভিত্তিক হয় না। তাই এমন পরীক্ষা না দিতে আইনজীবীদের ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়ার বিষয়টি তুলনামূলক অবমাননাকর। ভারতের ক্ষেত্রে দেখেছি, কেউ অ্যাডভোকেট হলে তিনি হাইকোর্ট পর্যন্ত প্র্যাকটিসের সুযোগ পান। অথচ আমাদের এখানে শুধুমাত্র নিম্ন আদালত পর্যন্ত প্র্যাকটিসের সুযোগ দেওয়া হয়। আমি মনে করি এ পদ্ধতিরও প্রয়োজন রয়েছে।

বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার’স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ এর ৪০ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ওই সংশোধনী আনে। রুলসটির ৪০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বার কাউন্সিল কোনও রুলস না করা পর্যন্ত এই অনুচ্ছেদের অধীনে সরকার অবশ্যই রুলস তৈরির ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে।

আর গত ৩০ জুলাই প্রকাশিত সরকারি গেজেটের নতুন রুলসে বলা হয়েছে, আইন বিষয়ে ডিগ্রিধারী কোনও ব্যক্তি বাংলাদেশের যে কোন নিম্ন আদালতে একাধারে ২৫ বছর আইন পেশায় নিয়োজিত থাকলে তাকে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তিতে লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে না, তবে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে ইন্টারভিউয়ের জন্য আবেদন করতে হবে।

তবে গেজেটটির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এই গেজেটটির দ্বারা বৈষম্য হচ্ছে- আমি তা বলতে রাজি নই। নিম্ন আদালত আর হাইকোর্টে প্রাকটিসের মধ্যে বেশ কিছু ভিন্নতা রয়েছে। তাই আমার মতে এটা এমন হওয়া উচিত ছিল যে- নিম্ন আদালতে পরীক্ষা দিয়ে প্রবেশের আগে যেমন ৬ মাস প্র্যাকটিস করার নিয়ম রয়েছে তেমনি হাইকোর্টেও প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্তত পক্ষে তিন মাসের প্র্যাকটিসের সুবিধা রাখা প্রয়োজন ছিল। এই তিন মাসে তারা হাইকোর্টের নিয়ম-কানুন ভালো করে শিখতে পারতেন।

রবিউল ইসলাম নামের এক আইনজীবী বলেন, দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বার কাউন্সিলের সনদ পেয়ে আইন পেশায় নিযুক্ত হতে হয়। সেক্ষেত্রে ২৫ বছরের আইন পেশায় অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষার দ্বারা হাইকোর্টে যুক্ত করাটা বৈষম্যের মধ্যে পড়ে। তাই এ বৈষম্য দূর করতে গেজেটটি বাতিল করতে হবে। নাহলে নিম্ন আদালত বা হাইকোর্টে প্রবেশের ক্ষেত্রে একই বিধান রাখতে হবে।

এদিকে গেজেটটি নিয়ে বিতর্কের কথা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গণমাধ্যমকে বলেন, এটি নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এ নিয়ে আমি এখনই মন্তব্য করতে চাই না। গেজেটটি বার কাউন্সিলে এসেছে। এখন এটি নিয়ে কী করণীয় হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী মাসে কাউন্সিলের সভা হবে, সেখানে বিষয়টি তোলা হবে। এর আগে এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel