সৈয়দ আলী আহসানঃ খোকসা জানিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মৌটুসি। খোকসা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের চুনিয়াপাড়ার বাসিন্দা সে। বাবা রাজ মিস্ত্রী ও কৃষক মাফুজুর রহমান। এক বছর আগে প্রতিবেশীরা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করার পর থেকে অবরুদ্ধ ছিল পরিবারটি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পথ না থাকায় গত এক বছর মৌটুসিকে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়েছে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশীদের দেয়াল টপকে। এ সমস্যা সমাধানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের দরবারে গত এক বছরে কমপক্ষে ১২ বার সালিশ হয়। কিন্তু কোন সুরাহ হয়না।বাড়ি থেকে বের হবার রাস্তা না থাকায় মৌটুসি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের বাড়ির মধ্যে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশী সনাতন বিশ্বাসের দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছিল। মঙ্গলবার এ ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নজরে আসে জেলা পুলিশ সুপারের এবং সমাধানের নির্দেশ দেন।এরই মধ্যে থানায় আরও এক দফা সালিশ ডাকা হয়। তবে দেয়াল তুলে বাড়ির রাস্তা বন্ধ করা প্রতিবেশীরা সময়মতো সেখানে হাজির হয়নি। সে রাতেই পুলিশ ভুক্তভোগী মাফুজুর রহমানের কাছ থেকে নতুন করে আরেকটি অভিযোগ গ্রহণ করে। পরে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূর-এ-আলম, খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সসম্পাদক,পৌরসভার সুযোগ্য মেয়র প্রভাষক তারিকুল ইসলাম ও থানার অফিসার ইনচার্জ এ বি এম মেহেদী মাসুদের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে সমঝোতা বৈঠক বসে। প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর অবরুদ্ধ কৃষকের বাড়ির দক্ষিণ দিকের প্রতিবেশী সনাতন বিশ্বাসের জমির পূর্ব পাশের আইল দিয়ে চার ফুট চওড়া রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। বিনিময়ে কৃষককে তার জমি থেকে ১.২৬ শতাংশ পরিমাণ জমি ছেড়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের দলিলে দুই প্রতিবেশী স্বাক্ষর করে। এর পর তাৎক্ষণিক সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দেয় খোকসা পৌরসভার মেয়র। মৌটুসির পরিবারের রাস্তা মুক্ত করে দেওয়া হয়। থানার অফিসার ইনচার্জ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।কথা হয় মৌটুসির সাথে।সে বলে এখন আর দেয়াল টপকাতে গিয়ে তাকে হাত-পায়ে আঘাত পেতে হবে না। বিনা বাধায় এখন স্কুলে যেতে পারবে। পড়ালেখার সুযোগ পাবে। মাফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী মিতা আফরোজ এ জন্য গনমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত সাংবাদিকদের ফোনে জানায়, ঘটনাটি ছিল খুবই অমানবিক। শিশু ও শিক্ষার্থীর পরিবার একেবারে চার দেয়ালে বন্দি হয়ে পড়েছিল। বিষয়টির সমাধান হওয়ায় খোকসা পৌরসভার মেয়র, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ দুই পরিবারকে তিনি ধন্যবাদ জানান। খোকসা পৌরমেয়র প্রভাষক তারিকুল ইসলাম তারিক, বলেন সবার আন্তরিকতার ভিত্তিতেই সুন্দর সমাধান করা হয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূর-এ-আলম বলেন, বিষয়টি জটিল হয়ে উঠেছিল। তবে দুই পক্ষের সমঝোতার মানসিকতা থাকায় বিষয়টি এত দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে তিনি মনে করেন
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com