শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
কেউ হুমকি দিলে, বিরক্ত করলে কিংবা শান্তি নষ্ট করলে কি করবেন?

কেউ হুমকি দিলে, বিরক্ত করলে কিংবা শান্তি নষ্ট করলে কি করবেন?

SAMSUNG DIGITAL CAMERA

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিকঃ কোন ব্যক্তির শান্তি বিনষ্ট হলে কিংবা অবৈধ কাজের আশংকা দেখা দিলে কিংবা বিরক্তিকর কোন কাজ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিংবা হুমকি দিলে সাধারণত ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১০৭/১১৭ (সি) ধারায় মামলা রুজু করে প্রতিপক্ষকে শান্তিশৃঙ্খলার বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়।

এক কথায় ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ কিংবা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমরা একে অপরকে ভয়ভীতি কিংবা হুমকি প্রদর্শণ করে থাকি। এ ধরণের কর্মকান্ড থেকে কাউকে নিবৃত করার ক্ষেত্রে ১০৭ ধারা একটি বলিষ্ট হাতিয়ার।

তবে এ ধারার মামলা একটি জামিনযোগ্য অপরাধ। অপরাধীকে মুচলেকার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতেই এ ধারাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

এ মামলার খারিজ আদেশ বা ১১৭ (সি) ধারার বন্ড প্রদানের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ বা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৪৩৫/৪৩৯ (এ) ধারামতে রিভিশন দায়ের করে প্রতিকার পেতে পারেন।

ধরুণ, আপনার প্রতিবেশী মামুন সাহেব বিনা কারণে আপনাকে উৎপাত করছেন বা হুমকি দিচ্ছেন। জমি দখলের চেষ্টা, ভয়ভীতি দেখানো কিংবা রাস্তায় বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন। এ অবস্থা থেকে প্রতিকার পেতে আপনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা মতে মামুন সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবেন। তবে আদালতে যাওয়ার আগে একটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করে রাখতে পারেন নিকটস্থ থানায়। অনেক সময় অভিযোগটি গুরুতর হলে পুলিশ এ জিডি থেকেই নন-প্রসিকিউশন প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এ ছাড়া আপনি যদি মনে করেন কারও দ্বারা আপনার পারিবারিক বা সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কোনো কলহ-বিবাদ তৈরির আশঙ্কা রয়েছে কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা রয়েছে তাহলে আপনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন।

কেউ আপনাকে অযথাই হুমকি-ধমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালেও ১০৭ ধারার আশ্রয় নিতে পারেন। এই ধারায় প্রতিকার সাধারণত শান্তি রক্ষার মুচলেকার মামলা বলেই পরিচিত। ১০৭ ধারায় মামলা রুজু করে প্রতিপক্ষকে কিংবা দায়ী ব্যক্তিকে শান্তি বজায় রাখার জন্য বন্ড বা মুচলেকা সম্পাদনের জন্য বাধ্য করা যায়। এ ধরনের মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আইনজীবীর মাধ্যমে আরজি উপস্থাপন করতে হবে। আরজিতে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম-ঠিকানাসহ কেন, কী কারণে আপনার শান্তি বিনষ্ট করছে এবং কোনো ভয়ভীতি দেখালে কখন ঘটনাটি ঘটেছে তা স্পষ্ট করে লিখতে হবে। আরজির সঙ্গে কোনো প্রমাণ থাকলে তা দাখিল করতে হবে। কোনো সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করা থাকলে তাও দাখিল করতে হবে। ১০৭ ধারায় দায়ী কোনো ব্যক্তি জামিন পাওয়ার যোগ্য। এ ধারায় মামলার উদ্দেশ্য হলো দায়ী ব্যক্তি বা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুচলেকা সম্পাদনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা।

১০৭ ধারায় আশ্রয় নিলে আদালত প্রাথমিক শুনানিতে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুচলেকা সম্পাদনের জন্য আদেশ দেবেন। তখন দায়ী ব্যক্তিকে আদালতে হাজির হয়ে মুচলেকা সম্পাদন করতে হবে। মুচলেকায় বলতে হবে ভবিষ্যতে তিনি আর কোনো ধরনের উৎপাত করবেন না এবং ভয়ভীতি দেখাবেন না। দায়ী ব্যক্তি যদি মুচলেকা সম্পাদন করতে না চান এবং নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন, তাহলে জবাব প্রদান করতে পারেন লিখিতভাবে। এ জবাবেও ভবিষ্যতে কোনো প্রকার ভয়ভীতি দেখাবেন না কিংবা কোনো ধরনের শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করবেন না এ মর্মে অঙ্গীকার করতে পারেন। যদি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো দোষ স্বীকার না করেন, তাহলে সাক্ষ্য শুরু হতে পারে আদালতে। সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হলে মুচলেকা সম্পাদনের আদেশ দিতে পারেন আদালত। সাধারণত ১০৭ ধারায় মামলা করা হলেও আদালতে ১০৭ ধারার সঙ্গে ১১৭ (গ) ধারা অনুযায়ী মূলত মুচলেকা সম্পাদনের প্রতিকার চাইতে হয়। আদালতও সে অনুযায়ী আদেশ দিয়ে থাকেন। এ ধারার মামলার আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়েরের সুযোগ রয়েছে।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক দৈনিক ‘ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel