মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ! নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের থেকেই ভিসি নিয়োগের অনুরোধ ইবি শিক্ষকদের সংবিধান সংস্কারঃ সংশোধন না-কি পুনর্লিখন?  সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতাঃ আইন কি বলে?
থাইল্যান্ড ভ্রমন-২ পাতায়া যেনো রীতিরকম ‘গণিকাবৃত্তির রাজধানী’

থাইল্যান্ড ভ্রমন-২ পাতায়া যেনো রীতিরকম ‘গণিকাবৃত্তির রাজধানী’

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক, থাইল্যান্ড থেকে ফিরেঃ পতিতাবৃত্তির অপর নামসমূহ গণিকাবৃত্তি, যৌনবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি ইত্যাদি। ইতিহাসের আদিকাল থেকে এদের বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়। যেমন-দেহপসারিণী, বেশ্যা, রক্ষিতা, খানকি, উপপত্নী, জারিণী, পুংশ্চলী, অতীত্বরী, বিজজব্রা, অসোগু, গণিকা, কুলটা, বারণবণিতা, কুম্ভদাসী, নটি, রুপজীবা ইত্যাদি। এ পেশায় নিয়োজিতরা নিজদেহ নিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে। অর্থাৎ নিজদেহ স্বেচ্ছায় অপরকে ভোগ করার সুযোগদানের বিনিময়ে অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন। জর্জ স্কট তার ‘পতিতা বৃত্তির ইতিহাস’ নামক বইয়ে পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন-‘পতিতারা হলো সেই সম্প্রদায়ভূক্ত নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করাতে নিজেদের দেহ দিয়ে জীবিকা অর্জন করে।’ অক্সফোর্ড ডিকশনারি মতে বেশ্যা হল একজন নারী যে তার দেহ ভাড়া দেয় যথেচ্ছ যৌন-সংসর্গের জন্য।

সম্প্রতি থাইল্যান্ড একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগদান ও সেখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে আমার এ নিবন্ধ। শুরুতেই যাই রঙের নগরী পাতায়া। ভিনদেশিদের আড্ডা আর হইচই মাতিয়ে রাখে পুরো এলাকা। এই ওয়াকিং স্ট্রিট জাগেই রাত ১২টার পর, মধ্যরাতের এই আয়োজন সরেজমিন অবলোকন করেছি ওয়াকিং স্ট্রিটের বর্ণিল জগতে। এরপর এখানকার পরিবেশ নিয়ে লেখার আগ্রহ থেকেই সংগ্রহ করি ইতিহাসটি।

একসময় পাতায়া নামের জায়গাটি ছিল থাইল্যান্ড উপসাগরের একটি জেলেপল্লি। সাগরে অল্প কয়েকটি নৌকা এবং তীরে গ্রামবাসীর থাকার জন্য কিছু কুঁড়েঘর বাদে সেখানে আর কিছুই ছিল না।

১৯৫৯ সালের ২৯ জুন নাখন রাচাসিমার সামরিক ঘাঁটিতে থাকা ৫০০ সদস্যের একটি মার্কিন সেনাদল এক সপ্তাহের বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য পাতায়ায় যায়। ওই সেনারা সৈকতের দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তে স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে কয়েকটি বাড়ি ভাড়া নেয়। তখন থেকেই ঘুমন্ত জেলেপল্লির জন্য প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যায়। মার্কিন সেনাদের মধ্যে পাতায়ার সৌন্দর্যের খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি কংক্রিটের নগর ব্যাংককের পরিবর্তে জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয়। ভূতাত্ত্বিক তথ্যব্যবস্থায় (জিআইএস) বিনোদনের জন্য সেরা সৈকত হিসেবে মানচিত্রে স্থান পায় পাতায়া।

থাইল্যান্ডের সমাজে জীবিকার জন্য দেহ ব্যবসা নতুন কিছু নয়। ১৬৮০ সালে আয়ুথাইয়া যুগ থেকেই সেখানে পতিতাবৃত্তি বৈধ। এমনকি সেখানে সরকার পরিচালিত যৌনপল্লি ছিল। তবে এই দেহ ব্যবসা কেবল ব্যাংকক অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে যখন থেকে আন্তর্জাতিক সেনারা আসতে শুরু করেন, তখন থেকেই যৌনকর্মীদের নতুন গন্তব্যে পরিণত হয় পাতায়া। যৌনকর্মীরা নতুন খদ্দেরদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেন এবং তাঁরা মুদ্রার বিনিময় হার সম্পর্কে জানতে পারেন। পাশাপাশি তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের রক অ্যান্ড রোল ধারার সংগীত ও অশ্লীল শব্দের সঙ্গে পরিচিত হন। যুদ্ধে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে বিনোদনের জন্য ছুটে আসা তরুণ সেনাদের মনোরঞ্জন করতে থাকেন যৌনকর্মীরা।

১৯৭৫ সালে উত্তর ভিয়েতনামিরা যখন যুদ্ধে জিতে যায়, তখন পাতায়াতে সাময়িক মন্দাভাব চলে আসে। সব সেনা সেখান থেকে চলে যায়। অনেক বার ও ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। অনেক যৌনকর্মী আগাম অবসরে যেতে বাধ্য হন। তবে ধীরে ধীরে কাছের এবং দূরের দর্শনার্থীদের ¯্রােত আসা শুরু হলে আবার উজ্জীবিত হয় থাইল্যান্ড। ১৯৭৮ সালে পাতায়া শহরের নামকরণ করা হয়। বৃহত্তর পরিসরে শহরটিতে পর্যটকদের জন্য বাজার তৈরি হতে থাকে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর অনেক সেনা কর্মকর্তা পাতায়াতেই থেকে যান। তাঁরা থাই নারীদের বিয়ে করেন এবং বার ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসা চালু করেন। আজকের দিনেও প্রতিবছর কয়েক লাখ সেনা কর্মকর্তা কোবরা গোল্ড নামে পরিচিত থাই-মার্কিন সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে পাতায়া আসেন।

নিঃসঙ্গ বয়স্ক মার্কিন নাগরিক ম্যাট। ক্যালিফোর্নিয়ায় বাড়ি ফিরে গিয়ে বিয়ে করার জন্য সুন্দরী কোনো তরুণীকে খুঁজে নেওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তবে ৬০ বছর বয়সী ম্যাট তাঁর সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেননি। পশ্চিমা নারী বিয়ে করার প্রচেষ্টা তিন দফায় ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি শ্বেতাঙ্গ মেয়ে খোঁজা বন্ধ করে দেন। কারণ তিনি মনে করেন, তাঁরা ভালোবাসার যোগ্য নন। তিনি এশীয় মেয়ে খোঁজা শুরু করেন। ম্যাট বুঝতে পারেন, তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য পাতায়াই একমাত্র জায়গা।

১০ বছর আগে ম্যাট পাতায়ায় আসেন। ম্যাট বলেন, ‘এখানে প্রতিদিনই ভালোবাসা পাওয়া যায়। আমি সাধারণত বছরে তিন মাসের জন্য এখানে আসি। আমি আমার কেনা সস্তা অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। আমি আমার ভালোবাসার নীড়ে কতজনকে এনেছি, তা আপনাকে বলতে পারব না।’

ম্যাট বলেন, ‘ভালো লোকেরা স্বর্গে যায়, আর খারাপ লোকেরা পাতায়ায়।’ ম্যাটের এ অভিব্যক্তি পাতায়া শহরের স্লোগান বলেই প্রতীয়মান হয়। এই স্লোগানের মধ্যে বিদ্রুপের গন্ধ থাকলেও পাতায়ায় আসা অনেক পর্যটকের মানসিকতা যে এটাই, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

২৮ বছর বয়সী যৌনকর্মী কাঞ্চি। বয়স যখন ২১, তখন এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি এখানে আসেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুরিন প্রদেশ থেকে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর অর্থ জোগাড় করতে সুপিন বাড়ি ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। পাতায়া আসার এক বছর আগে রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশকের কাজ করতে তিনি প্রথম ব্যাংককে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি দৈনিক ২৮০ বাথ (থাই মুদ্রা) পেতেন। এর সঙ্গে টিপস থাকত। ওই অর্থ পুরো পরিবারের ভরণপোষণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। কেননা, দুই সন্তান রেখে তাঁর স্বামী চলে যাওয়ার পর সব দায়দায়িত্ব তাঁর ঘাড়েই এসে পড়ে। কাঞ্চিকে তাঁর এক বন্ধু পরামর্শ দিয়ে বলেন, পাতায়াতে রোজগারপাতি বেশি। সেখানে কী কাজ করে বাড়তি আয় হবে, সে ব্যাপারে কাঞ্চি সচেতন ছিলেন। তিনি প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে যেকোনো কিছুই করতে প্রস্তুত ছিলেন।

৪৮ বছর বয়সী মানবাধিকারকর্মী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব থানাদ্দা নিং সোয়াংনেতর যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখে পুরস্কার পেয়েছেন। আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি কীভাবে এই পেশা বেছে নিতে বাধ্য হন, বইটিতে তাঁর বর্ণনা দিয়েছেন। থাই ভাষায় লেখা পুরো বইটির ইংরেজি ভার্সন আমি পড়ে ফেলেছি।

নিং বলেন, ‘কম বয়সে অরক্ষিত শারীরিক সম্পর্কের কারণে আমি একটি বাচ্চার জন্ম দিই। বাচ্চাটিকে গড়ে তুলতে আমার অনেক টাকার দরকার হয়ে পড়ে।…এক বন্ধুর পরামর্শে পাতায়ায় এসে বারে কাজ শুরু করি। সেখানে পানীয় পরিবেশন করে মাসে আমি পাঁচ হাজার বাথ পেতাম। পরে আমি যৌনকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি।’ নিং বলেন, এটা এমন এক পেশা, যা কারও কাছে গর্ব করে বলা যায় না। তাই তিনি বহুবার এই কাজ ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেছেন। তবে দিনের শেষে এ পেশাই তাঁর পরিবারের জন্য অর্থ এনে দিয়েছে। তিনি মাঝে মধ্যে অন্য কাজ করেছেন। তবে যৌনকর্মী হিসেবে তিনি যা আয় করতেন, অন্য কাজে তার থেকে অনেক কম আয় হতো।

ওয়াকিং ষ্টিটে দাঁড়িয়ে বিদেশী সাংবাদিক পরিচয়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের ভাষায়, ‘থাই মেয়েরা যদি কোনো বিদেশির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন, তবে সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। পরস্পরকে পছন্দ করে বন্ধ কক্ষে তাঁরা কিছু করলে তাতে আমরা ভুল কিছু দেখি না। এই এলাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ হিসেবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি যে পাতায়া এখনো পরিদর্শনের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর জায়গা।’

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel