বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫০ অপরাহ্ন
সিরাজ প্রামাণিক: কুষ্টিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে ‘সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ ও সুরক্ষা’ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্লাষ্ট কুষ্টিয়া ইউনিটের আয়োজনে আজ বিকলে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের আব্দুর রাজ্জাক মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন ও সাংবাদিকদের মতামত গ্রহণ করেন বিচারপতি নিজামুল হক। কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালতের বিজ্ঞ জিপি আ.স.ম. আক্তারুজ্জামান মাসুম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্লাষ্ট কুষ্টিয়া ইউনিটের সমন্বয়কারী এ্যাড. শংকর মজুমদার, ব্লাষ্ট কুষ্টিয়া ইউনিটের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সংস্কৃতিসেবী আলম আরা জুঁই, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও বিশিষ্ট সাংবাদিক খন্দকার আল-মামুন সাগর। মতবিনিময় সভার শুরুতেই ব্লাস্ট্রের ষ্টাফ অফিসার মাহবুবা খাতুনের উপস্থাপনায় ‘সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ ও সুরক্ষা’ বিষয়ক একটি মাল্টিমিডিয়া সেসন অনুষ্ঠিত হয়। সেসন শেষে আলোচনায় অংশ নেন দি ডেইলী অবজারভার পত্রিকার কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি পি.এম. সিরাজুল ইসলাম, সমকাল পত্রিকার প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা, প্রথম আলোর তৌহিদ আলম, নয়া দিগন্ত প্রতিনিধি নুরুল কাদের, বাংলাদেশের খবর পত্রিকার প্রতিনিধি ডালিয়া পারভীন, আক্তার হোসেন ফিরোজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে বিচারপতির নিজামুল হককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সেই সাথে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী গবেষক সিরাজ প্রামাণিকের লেখা আইনবিষয়ক গ্রন্থ বিচারপতির হাতে তুলে দেয়া হয়।
এসময় বিচারপতি নিজামুল হক বলেন, ২০০০ সালে প্রণীত আমাদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারায় নির্যাতিত নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশে বাঁধা-নিষেধ রয়েছে। ১৪(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত সংবাদ এমনভাবে ছাপাতে হবে, যাতে ওই নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়। ১৪ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো সংবাদপত্রে নির্যাতিত নারী ও শিশুর পরিচয় ছাপানো হয়, তবে তার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের প্রত্যেকে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদ- বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা তিনি বা তারা উভয়দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।
অন্যদিকে ২০১৩ সালে প্রণীত শিশু আইনের ৮১ ধারায় সংবাদ মাধ্যম কর্তৃক কোনো গোপন তথ্য প্রকাশের দ- প্রদান সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই ধারা অনুসারে, শিশু আইনের অধীনে বিচারাধীন কোনো মামলা বা বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোনো শিশুর স্বার্থের পরিপন্থী এমন কোনো প্রতিবেদন, ছবি বা তথ্য প্রকাশ করা যাবে না যার মাধ্যমে শিশুটিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শনাক্ত করা যায়।
কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে তা আইনের অধীনে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং এই অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অনধিক এক বছর কারাদ- কিংবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা উভয়দ-ে দ-িত হতে পারেন। কোনো কোম্পানি, সমিতি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এই বিধান লঙ্ঘন করলে সেই কোম্পানি, সমিতি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন অনধিক দুই মাসের জন্য স্থগিত রাখাসহ সেটিকে অনধিক দুই লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। আগের আইনে বিশেষ অবস্থা বিবেচনায় আদালত নাম-পরিচয় প্রকাশের অনুমতি দিতে পারলেও নতুন আইনে সেই বিধান রাখা হয়নি।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা ১৪ এর উপধারা (১) এ বলা হয়েছে দহনকারী, ক্ষয়কারী অথবা বিষাক্ত পদার্থ দ্বারা কোন শিশু বা নারীর মৃত্যু ঘটানো বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা, পতিতাবৃত্তি বা বেআইনী বা নীতিবহির্ভূত কোন কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে কোন নারীকে বা শিশুকে বিদেশ হইতে আনা বা বিদেশে পাচার বা প্রেরণ অথবা ক্রয় বা বিক্রয় বা কোন নারীকে ভাড়ায় বা অন্য কোনভাবে নির্যাতনের উদ্দেশ্যে হস্তান্তর, নারী বা শিশুকে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে কোন নারী বা শিশুকে আটক, নারী বা শিশুকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের চেষ্টা এবং ধর্ষণজনিত কারণে মৃত্যু ঘটানো, নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া, যৌন পীড়ন করা, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো বা জখম, ভিক্ষাবৃত্তি বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে শিশুকে অঙ্গহানি ইত্যাদি এমন সব অপরাধের শিকার হয়েছেন এমন নারী বা শিশুর ব্যাপারে সংঘটিত অপরাধ বা এসম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্য কোন তথ্য কোন সংবাদ পত্রে বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাবে যাতে ঐ নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়৷