শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির এক ফেরাউন ও নির্মম পতনের ইতিহাস

কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির এক ফেরাউন ও নির্মম পতনের ইতিহাস

 

লেখাটি একটি বিখ্যাত উক্তি দিয়েই শুরু করতে চাই। দিনের শুরু এবং শেষ যেমন আছে, তেমনি দিনের অতীত এবং ভবিষ্যতও আছে। এ লেখাটি যখন লিখছি, তখন আমার সামনের বেশ ক’টি দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম “টাকা চুরির অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে নুরুল ইসলাম দুলাল বহিষ্কার”। এ শিরোনামটি যখন পড়ছি তখন আমার মনে পড়ছে অত্যাচারী জালিম শাসকদের শেষ পরিণতি নিয়ে সহীহ বুখারি শরিফের একটি হাদিস। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা জালিমকে দীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। জালিমদের শেষ পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহর নিদর্শন পর্যায়ক্রমিক রূপে এসেছে এবং অত্যাচারীদের উপর তাঁর শাস্তি বিরতিহীন রূপে এসে পড়েছে। প্রত্যেক শুরুরই শেষ আছে এবং প্রত্যেক শাসনকালের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে। মহান আল্লাহ জালিমদের শেষ পরিণতির জন্য কারণ তৈরি করেছেন এবং তাদের জুলুমের বিনিময়ে মর্মন্তুদ শাস্তির বিধানও রেখেছেন। এক যুগ শাসন করা কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রটারী নুরুল ইসলাম দুুলালের অত্য্যাচার, নির্যাতন, জুলুম, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাতকে দিন আর দিনকে রাত করার মহা ক্ষমতা খুব কাছ থেকে দেখার আমার সৌভাগ্য হয়েছে।

আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ “ফিরাউনের বংশধররাও তাদের পূর্ববর্তীদের মত আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা মনে করেছিল। ফলে আল্লাহ তাদের পাপের জন্য তাদেরকে শাস্তি দান করেছিলেন। বস্তুত আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১] যারা দুলাল উকিলকে ভাঙিয়ে খেয়েছো, এখনও খেয়ে যাচ্ছ হাড্ডিসার পর্যন্ত, তারাও এ আযাব থেকে রক্ষা পাবেন না। কারণ যুগে যুগে বিভিন্ন ভূখন্ডে ফিরাউনের মত জালিম শাসকদের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু কোন জালিমই চিরস্থায়ী হতে পারে নি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেছেন। আর আখিরাতে জাহান্নামের লেলিহান আগুনের শাস্তি তো তাদের জন্য বরাদ্দ আছেই। জালিমরা শ্রেষ্ঠত্ব চায় ও মুমিনদের ইচ্ছাকে দমিয়ে দিতে চায়। কিন্তু ফিরাউনরা যা চায় আল্লাহ তা চান না এবং তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আল্লাহ তা’আলার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলালকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ক্ষমতার অপব্যবহার ও সমিতির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গত সোমবার সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ মো: আবু সাঈদ স্বাক্ষরিত সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারের চিঠি বিভিন্ন দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। এ দিকে সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম দুলাল ক্ষমতায় থাকাকলীন জাল অডিট রিপোর্ট তৈরি করে সমিতির বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছে সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শেখ মো: আবু সাঈদ।

সমিতি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ মেয়াদে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন নুরুল ইসলাম দুলাল। ক্ষমতায় থাকাকালীন ‘রহমান মুস্তাফিজ হক অ্যান্ড কোং’ নামে একটি চাটার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের নামে জুনিয়র আইনজীবী আরিফুল ইসলাম রিপনের সহযোগিতায় আয়-ব্যয়ের একটি জাল ও ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেন। সেই জাল অডিট রিপোর্ট ৩১ জানুয়ারি ২০১৯ সালে সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থাপন করে তার কপি সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করেন।

গত সোমবার বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে আইন পেশাসহ এতদসম্পর্কিত যাবতীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নুরুল ইসলাম দুলালকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়াও আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আত্মসাতের ২৮ লাখ ৪০ হাজার ২২৭ টাকা সমিতির তহবিলে জমা প্রদান করতেও বলা হয়েছে।

আইন পেশায় এসে এ ফেরাউনের সঙ্গে আমার দেখা হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে এক বছর কাজ করার সুযোগও হয়েছিল। মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি ফেরাউনের মুরীদকেও দেখার সুুযোগ হয়েছিল। পৃথিবীর তাবৎ অত্যাচারী ও নৃশংস রাজা-বাদশাহর প্রতি মানুষের এক ধরনের নিষিদ্ধ আকর্ষণ থাকে। মানুষের আকর্ষণ আছে চেঙ্গিস খাঁ, হালাকু খাঁ, তৈমুর লং, হিটলার প্রমুখের প্রতি। অতি সম্প্রতি ভারতে এক জরিপে দেখা যায়, মানুষ মহাত্ম গান্ধীর তুলনায় এডলফ হিটলারকেই বেশি পছন্দ করে। এ যেন এক নিষিদ্ধ প্রেম। এ ধরনের এক নিষিদ্ধ প্রেমই আমাকে এ লেখাটি লিখতে উৎসাহ করে চলেছে।

অত্যাচারী যখন দুর্বলের প্রতি তার অত্যাচার চালায় তখন তার মনে হয়, সে-ই বুঝি অনেক ক্ষমতাবান। তার শক্তি ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী। কিন্তু সে ভুলে যায়- ওই অসহায় লোকটির পক্ষে কেউ না থাকলেও আল্লাহ সবই দেখেন ও হিসাব রাখেন। মানুষের ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী- তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ এরশাদ করেন, ‘আর জমিনে বড়াই করে চলো না; তুমি তো কখনও জমিনে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনও পাহাড় সমান পৌঁছতে পারবে না।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত :৩৭)। অত্যাচারী বা জালিম যতই শক্তিশালী হোক না; তার পরাজয় নিশ্চিত।

ফ্যাক্টঃ কথায় কথায় ডিস-বারের হুমকি দিত। এখন নিজেই ডিস-বার)

অত্যাচারীদের ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতার উল্লেখ করতে গিয়ে নবীজি বলেছেন, ‘আল্লাহ জালেমকে অবকাশ দেন। অবশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন তখন তার পলায়নের অবকাশ থাকে না।’ [বুখারি :৪৬৮৬] তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, এই জুলুমবাজদের কাজের আজাব শুধু তারা নয়; সবাইকেই বহন করতে হয়। অত্যাচারীরা যখন দুর্বলের ওপর অত্যাচার চালায় তখন অনেকেই প্রতিবাদ না করে মুখ লুকিয়ে থাকে বা অত্যাচারীর সঙ্গ দেয়। ভাতিজাকে ফেরাউন হয়ে উঠতে যে চাচা সবচেয়ে বেশী সহায়তা করেছেন, তিনি নাকি এখন মৃত্যুশয্যায়। মৃত্যুর আগে দুনিয়ার উপর ঁেবচে থাাকার আযাব আইনজীবীরা দেখে যেতে চায়।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে, যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু জালিমদের ওপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আজাব প্রদানে কঠোর।’ [সূরা আনফাল-২৫]

মূলত এই আজাব হচ্ছে জুলুমকারীদের কাজের দুনিয়াবি শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যে উপদেশ তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল, যখন তারা তা ভুলে গেল তখন আমি মুক্তি দিলাম তাদেরকে, যারা মন্দ হতে নিষেধ করে। আর যারা জুলম করেছে তাদেরকে কঠিন আজাব দ্বারা পাকড়াও করলাম। কারণ তারা পাপাচার করত।’ [সূরা আল-আ’রাফ-১৬৫]

আল্লাহ আরও বলেন, ‘অতঃপর তোমরা যা বল তারা তা মিথ্যা বলেছে। অতএব তোমরা আজাব ফেরাতে পারবে না এবং কোনো সাহায্যও করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে যে জুলুম করবে তাকে আমি মহাআজাব আস্বাদন করাব।’ [সূরা আল-ফুরকান-১৯]

জালেমদের জন্য দুনিয়াতে যেমন বিভিন্ন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, তেমনি মৃত্যুর পর তাদের ভয়ানক পরিণতি হবে। আল্লাহতায়ালা জালেমদের আখিরাতে ভয়ানক শাস্তি দেবেন। সূরা বুরুজের ১০নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের নির্যাতন করে, তারপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব। আর তাদের জন্য রয়েছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার আজাব।’

জালেমের মতো হতভাগা আর কেউ নেই। রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কি জানো- গরিব কে? সাহাবিরা বললেন, আমাদের মধ্যে যার সম্পদ নেই সে হলো গরিব লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে হলো গরিব, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে অথচ সে অমুককে গালি দিয়েছে, অমুককে অপবাদ দিয়েছে, অন্যায়ভাবে লোকের মাল খেয়েছে, সে লোকের রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং কাউকে প্রহার করেছে। কাজেই এসব নির্যাতিত ব্যক্তিকে সেদিন তার নেক আমলনামা দিয়ে দেওয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [তিরমিযি :৪১৮]
ইসলামের চতুর্থ খলিফা ও মহান জ্ঞানতাপস হজরত আলী (রা.)-এর উক্তি উদ্ধৃত করে লেখা শেষ করছি। হজরত আলী (রা.) বলেন

‘কখন বুঝবে একটি দেশ ও সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে?

যখন দেখবে দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে,

মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে, জ্ঞানীরা পালিয়ে যাচ্ছে

এবং শাসকরা মিথ্যা কথা বলছে।’

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel