শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
আইনে ত্যাজ্য পুত্র-কন্যা বলে কিছুই নেই!

আইনে ত্যাজ্য পুত্র-কন্যা বলে কিছুই নেই!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: সিথি ও রুনা একে অপরকে ভালবাসে। তাদের ভালবাসাকে বাস্তবে রুপ দিতে একে অপরকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সাবালক-সাবালিকা হিসেবে এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ও আইনগত অধিকার তাদের আছে। সেই অধিকারের ভিত্তিতে তারা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় উভয় পরিবারের পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন। সিথি ও রুনার উভয় পরিবারই প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ত্যাজ্য পুত্র-কন্যা হিসেবে সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণা দেন। এটা আমাদের সমাজের একটি পরিচিত ঘটনা। অনেকে হলফনামার মাধ্যমে নোটারি পাবলিকের সামনে সন্তানকে ত্যাজ্য বলে ঘোষনা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে। কিন্তু প্রচলিত আইনে ত্যাজ্যপুত্রের ঘোষণার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এটি নিছক একটি ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। ত্যাজ্য বলে ঘোষণা করলেই পুত্র-কন্যা ত্যাজ্য হয়ে যায় না। এটি লোকমুখে প্রচলিত একটি শব্দ। আসলে আইনে ত্যাজ্য বলে কোন কথা নেই।

আমাদের সমাজে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, যদি কোনো মা-বাবা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন তবে সেই সন্তান চিরতরে তাঁর মা-বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। মুসলিম পারিবারিক আইনে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া আছে কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন। জন্মসূত্রে একজন পরিবারের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন করেন এবং এ অধিকার থেকে তাকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যায় না।

তবে কোনো মা-বাবা দান, উইল বা বিক্রয়ের মাধ্যমে তাঁদের সম্পত্তি যে কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। এখানে মনে রাখতে হবে মুসলিম আইনে উইলের দ্বারা এক-তৃতীয়াংশের বেশি হস্তান্তর করা যায় না। তবে এ উইল ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা কার্যকর হয়। জীবিতকালে কোনো মা-বাবা তাঁদের সম্পত্তি অন্য কাউকে যথাযথ উপায়ে দান না করে গেলে কিংবা বিক্রয় করে না গেলে মৃত্যুর পর তাঁদের সন্তানেরা অবধারিতভাবেই উত্তরাধিকারী হিসেবে সেই রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশীদার হবেন।

কাজেই যেকোনো দলিল সম্পাদন কিংবা হলফনামার মাধ্যমে ত্যাজ্য করার ঘোষণা আইনের চোখে অচল এবং আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করার সুযোগ নেই। যদি এমন হয় যে, বাবা-মা ত্যাজ্যপুত্র বলে সন্তানদের ঘোষণা দিয়ে গেছেন এবং এ জন্য অন্য অংশীদারেরা তাঁদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন তাহলে সন্তানেরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ১৮৯৩ সালের বাটোয়ারা আইনে ৫০০ টাকা কোর্ট ফি দিয়ে দেওয়ানি আদালতে বাটোয়ারা মামলা করা যায়। কোনো বাবা-মা যদি তাঁদের অবাধ্য সন্তানকে কোনো সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চান তাহলে জীবিতাবস্থায় ওই সম্পত্তি অন্য কাউকে দান করে কিংবা বিক্রি করে সম্পত্তির দখল ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে যেটুকু সম্পত্তিই বাবা-মা নিজের নামে রেখে যান না কেন তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁর বৈধ উত্তরাধিকারীরা এ সম্পত্তির অংশীদার হবেন।

তবে কোন পিতা মাতা অবাধ্য পুত্র-কন্যাকে সহায়-সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে অন্য পুত্র-কন্যার নামে তাদের সমস্ত সম্পত্তি সাফ কবলা রেজিষ্ট্রি বা দান শর্তে রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারে। এতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা বলা যায় যে, সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এবং ইসলামী আইনের বিধান অনুসারে একজন ব্যক্তি সম্পত্তি বিক্রয়, দান এবং উইল করে নিস্বত্ববান হতে পারে।

তবে নরহত্যাজনিত অপরাধে অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করলে সে ব্যক্তি সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে এবং যদি সে ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে তাতেও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

হিন্দু আইনে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ধর্মান্তরিত হওয়া, দুশ্চরিত্র হলে, শারীরিক বা মানসিকভাবে অসমর্থ হলে, হত্যাকারী হলে, সন্ন্যাসী হলে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তবে ১৮৫০ সালের Caste Disabilities Removal Act পাস হওয়ার পর ভারতে ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। অপরদিকে মুসলিম আইনের বিধানে শুধু নরহত্যার ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।Email: seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel