এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: থুথু, কফ, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনা ভাইরাসসহ সার্চ, মার্স, যক্ষা, শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি বা অ্যাজমা, কাশি, মাথাব্যথাসহ বহু রোগের বিস্তার ঘটায়। ফলে যত্রতত্র থুথু ফেলানো প্রতিরোধে রয়েছে আইন। যা অমান্য করলে রয়েছে শাস্তির ব্যবস্থা। কিন্তু আইনটি কাগজে কলমে। বাস্তবে এ আইনের প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এখন সময় এসেছে করোনাসহ অন্যান্য সংক্রামক ব্য্যধি প্রতিরোধে এ আইনটি প্রয়োগ ও ব্যবহার অতি জরুরী।
বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় জনসমক্ষে থুথু ফেলাকে। যেখানে সেখানে যখন তখন কফ থুথু ফেলা শুধু বদ অভ্যাসই নয় এর কারণে আর্থিক ও সামাজিকভাবে একটা দেশ অনেক ক্ষতির শিকার হয়। থুথুর ওপর মশা বা মাছি বসে। পরে ওই মশা বা মাছি খাবারের ওপর বসলে জীবাণু ছড়ায়। থুথুর মাধ্যমে যক্ষ্মারোগের জীবাণু ছড়ানোর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। থুথু শুকিয়ে বাতাসের মাধ্যমে জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ফলে মানুষ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগসহ যেমন ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা ইত্যাদিসহ ভাইরাসজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয় বলে চিকিৎসকদের অভিমত।
বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ৬০(১) ধারায় বলা আছে যে, “প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক আবর্জনা ফেলার বাক্স ও পিকদানী থাকতে হবে এবং সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।’’
৬০(২) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনও প্রতিষ্ঠানের আঙিনার মধ্যে কেউ বাক্স ও পিকদানী ছাড়া ময়লা বা থুথু ফেলতে পারবেন না। ৬০(৩) ধারায় উল্লেখ আছে, এই বিধান লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এছাড়া রাজশাহী মহানগরী পুলিশ আইন-১৯৯২ এর ৮৬ ধারায় উল্লেখ আছে, কোনও ব্যক্তি সরকারি বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নোটিশ অমান্য করে ধূমপান করলে বা থুথু ফেললে তাকে একশ’ টাকা জরিমানা করা যাবে। তবে সিলেট মহানগরী পুলিশ আইন-২০০৯ ও বরিশাল মহানগরী পুলিশ আইন-২০০৯ অনুযায়ী তিনশ’ টাকা জরিমানা করা যায়। তবে দ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স, দ্য চিটাগং মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স এবং দ্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্সে একশ’ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে।
শুধু বাংলাদেশে না, অনেক দেশেই যত্রতত্র থুথু ফেললে শাস্তির বিধান রয়েছে। যেমন সৌদিআরবে রাস্তায় থুথু ফেললে ১০০ থেকে ১৫০ রিয়াল জরিমানা করা হয়। গঙ্গায় বর্জ্য বা থুথু ফেললে তিন বছর কারাদ- বা ১০ হাজার রুপি জরিমানার বিধান রেখে ভারতে ২০১১ সালে আইন করা হয়। আর ২০১৫ সালে মুম্বাইয়ের রাস্তায় থুথু বা পানের পিক ফেলার দায়ে পাঁচ হাজার রুপি জরিমানা ও ১ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত সরকারি দফতর ও রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কারের বিধান রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের আইন এত কঠোরও নয় তবে আইন প্রয়োগে উদাসীনতা থাকায় এ বিষয়ে জনসচেতনতা তেমন একটা বাড়ছে না।
একটু খেয়াল করলে দেখা যায় রাস্তায় চলতে থাকা পথচারী, দাড়িয়ে বা অলস বসে থাকা অনেক মানুষকেই রাস্তা, ফুটপাত বা মার্কেটের সামনে অবলীলায় থুথু, কফ, পানের পিক ফেলে। দৃশ্যটি বাংলাদেশের যে কোন বড় শহরের বাসিন্দাদের জন্য স্বাভাবিক। যেখানে সেখানে যখন তখন কফ থুথু ফেলা বদ অভ্যাস বলে মনে করা হয় কিন্তু এই অভ্যাসের কারণে আর্থিক ও সামাজিকভাবে একটা দেশ অনেক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তাছাড়া কফ থুথু শুধুমাত্র অপরিচ্ছন্নতা বা দেখতে নোংরা লাগার বিষয় না এটি পরিবেশেও মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। ব্যর্থতা যে আমরা অনেক আইনই প্রয়োগ করতে পারি না। যখন সবাই আইন অমান্য করেন তখন আইন প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
এছাড়া আমাদের রয়েছে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮।এ আইনের ২৫ (২) বিধান মতে, কেউ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে বাঁধা দিলে বা নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানালে তাকে তিন মাস কারাদ-, অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেয়া যাবে। আর ২৬ এর উপধারা ২ মতে, যদি যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেন তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তাকে অনূর্ধ্ব ২ (দুই) মাস কারাদন্ডে, বা অনূর্ধ্ব ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ধারা-১৪ তে বলা আছে, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীরা যদি মনে করে, কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করা না হলে তার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে, তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তর বা জনবিচ্ছিন্ন করা যাবে।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, গবেষক, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com