শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
আমাদের মায়াকান্না, দেশপ্রেম, ত্রানচুরি ও বাস্তবতা!

আমাদের মায়াকান্না, দেশপ্রেম, ত্রানচুরি ও বাস্তবতা!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: কান্না দেখেনি কিংবা কান্না করেনি-এমন মানুষ পৃথিবীতে নেই বললেই চলে। তবে ছেলে বেলা আমি রীতিরকম কান্নার হাট বসতে দেখেছি। আমরা গ্রামের মানুষ। গ্রামের কেউ মারা গেলে আমরা সবাই মিলে কাঁদতাম। এ ছাড়া স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া লাগলেও একচোট কান্নাকাটি হতো। গ্রামের মেয়েরা এসব কান্নার সঙ্গে সুর মেলাতেন। আমরা যারা ছিচকাঁদুনে স্বভাবের বাচ্চা ছিলাম তারাও কাঁদতাম সমানতালে কোনো ভালো-মন্দ বাছবিচার না করেই। একবার তো কান্নার জন্য খুব মার খেয়েছিলাম। কোনো এক বর্ষণমুখর বিকালে আমাদের গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে তিনটি গরু মারা গেল। তাও আবার বজ্রপাতে। আমরা দেখতে গেলাম। দেখি, বাড়ির ছেলেবুড়ো এবং মেয়েরা কাঁদছে। গরুর শোকে ওই বাড়ির বাচ্চারাও কান্নাকাটি করছিল। বর্ষাকালের কাদাযুক্ত উঠানে তারা গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছিল। আমি স্থির থাকতে পারলাম না। আমিও তাদের সঙ্গে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে থাকলাম।

বড় হয়ে দেখলামথ শুধু আমি নয়, সারা বাঙালি জাতিই কাঁদতে ভালোবাসে। কোনো এক কবি তার কবিতায় বাঙালিকে উপদেশ দিলেন কাঁদো বাঙালি কাঁদো। বাঙালির চিরায়ত এই কান্নার অভ্যাস যেন তার জাতিসত্তারই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যে বাঙালি কাঁদতে জানে নাথ তার যেন কোনো সমস্যা রয়েছে, এমনটিই ধরে নেওয়া হয় সচরাচর ক্ষেত্রে। কেন এই কান্না? সবাই বলেন, আবেগের জন্য। আমার জানতে ইচ্ছে করে, আবেগটা কখন ও কীভাবে হয়! এটি কি মস্তিষ্ক থেকে উৎসরিত কিংবা মন থেকে! আবার মনের অস্তিত্বই বা কোথায়। এভাবেই বাঙালি কেঁদে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। যেদিন বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা পলাশীর প্রান্তরে পরাজিত হয়ে রাজধানীতে পালিয়ে এলেন, সে দিন খুব কাঁদলেন, জনগণ হাসল। কিন্তু কয়দিন পর যখন নির্মমভাবে সিরাজউদ্দৌলাকে মেরে ফেলা হয় তখন জনগণ শুরু করল কান্না। সেই যে শুরু এর পর থেকে কান্না আর থামেনি। আমাদের নাটক, সিনেমা, সাহিত্য এবং কবিতাথ সবই যেন কান্নায় ভরপুর। কান্না নিয়ে লাখ লাখ অসাধারণ গান রচিত হয়েছে। লেখা হয়েছে গীতি কবিতা। নজরুলের গান ‘এতো জল ও কাজল চোখে, পাষাণী আনলে কবে বল।’ কিংবা ‘নয়নভরা জলগো তোমার আঁচল ভরা ফুল’, রবীন্দ্রনাথও কম যাননি। অসংখ্য গান ও কবিতায় তিনি কান্নাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

এবার আমি বাঙালির আবেগ এবং সাহসের একটি অনবদ্য উদাহরণ দিতে পাঠকদের নিয়ে যেতে চাই সুদূর অতীতে। চতুর্দশ শতাব্দীতে। আজ থেকে প্রায় ৬২৫ বছর আগে। বাংলা তখন দিল্লির অধীনে। দিল্লির মনোনীত গভর্নর ছিলেন ইলিয়াস শাহ। কেন্দ্রীয় সরকারে নতুন সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বাংলার আমির-ওমরারা গভর্নর ইলিয়াস শাহকে প্ররোচনা দিতে থাকল বিদ্রোহ করার জন্য। ইলিয়াস শাহ আবেগী বাঙালির প্রলোভনে পা দিলেন। তিনি প্রকাশ্যে দিল্লির অধীনতা অস্বীকার করে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন।ইলিয়াস শাহের তাঁবুতে নিয়মিত লাঠি খেলা হতো। ধুতি পরে কিছু লোক লাঠিখেলার বাহাদুরী দেখাত। তাদের ছিল বিশাল মেদবহুল শরীর এবং বড় পেট। সারা শরীরে তারা তেল মেখে এর পর লাঠিখেলায় অবতীর্ণ হতো। খেলার মাঝখানে তারা জোরে জোরে লাফ মারত এবং অদ্ভুতভাবে বিকট স্বরে আউ, আউ করে মুখ দিয়ে শব্দ করত।

বাঙালিদের এহেন কর্মকান্ড দেখে সুলতান ভারী আশ্চর্য হলেন। তিনি গুপ্তচর মারফত লাঠিখেলা এবং আউ আউ শব্দের তাৎপর্য বোঝার ব্যবস্থা করলেন। গুপ্তচর তাকে জানাল, লাঠিখেলায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের স্থানীয় পরিচয় হলো আবু বঙ্গালা বা বাঙালিদের পিতা। আবু বঙ্গালারা গভর্নর ইলিয়াস শাহকে বুঝাচ্ছে যে, তাদের লাঠির শক্তি দিল্লি বাহিনীর তলোয়ারের চেয়ে অনেক বেশি। তাদের আউ আউ শব্দের প্রচন্ডতায় দিল্লি বাহিনীর অনেকেই ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জ্ঞান হারাবে এবং দাঁতের পাটি লেগে যাবে। সুলতান শুনলেন এবং মুচকি হেসে জবাব দিলেন ও আচ্ছাথ অবশেষে যুদ্ধ বাধল এবং মাত্র ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ইলিয়াস শাহের শিবির ফাঁকা হয়ে গেল দিল্লির রাজকীয় বাহিনীর আক্রমণে। হতাহত তেমন একটা হলো না। সুবা বাংলার বাহিনীর কয়েকশ মৃতদেহ পাওয়া গেল যুদ্ধক্ষেত্রে। বাকি ৬০ হাজার সৈন্যের সবাই পালালো বিপুল বিক্রমে। সুলতান গিয়াস উদ্দিন তুঘলক প্রবল আগ্রহে হুকুম দিলেন মৃত সৈনিকের মধ্যে কতজন আবু বঙ্গালা আছে তা খুঁজে বের করার জন্য। হুকুম তামিল হলো এবং দেখা গেল মাত্র দুজন আবু বঙ্গালা মারা গেছেন। কিন্তু আজব হলেও সত্যি যে, তাদের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। সম্ভবত তারা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। বীরত্ব ও আবেগ নিয়ে বাঙালির গর্বের অন্ত নেই। সুসময়ে বাঙালি খুবই হাসি-তামাশায় মগ্ন থাকে। বিপদের সময় প্রচ- বেগে দৌড় মারে এবং দৌড় শেষ হলে শুরু করে কান্না।

এবার লেখার একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।আমমাার এক বন্ধু আওয়ামীলীগের বেশ বড় মাপের নেতা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ধর আওয়ামীলগ সরকার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এবং বিএনপি সমর্থিত জোট সরকার ক্ষমতায় আসল সে ক্ষেত্রে তুমি কি করবে। সে উত্তর করল প্রথমেই কাপড়-চোপড় খুলে কাদার মধ্যে গড়াগড়ি করব। তারপর পাগলের বেশে উলঙ্গ হয়ে সীমান্ত পাড়ি দেবৃ! ভদ্রলোকের বক্তব্যের পর আমি অনেকক্ষণ হাসলাম। সে কিন্তু হাসল না। বরং নিজের জীবনের কিছু করুণ ও মর্মান্তিক ঘটনা বর্ণনা করল। আমার চিন্তাজগতে বার বার একটি প্রশ্ন নাড়া দিচ্ছে আজ যারা রাজনৈতিক অঙ্গন অযথা উত্তেজিত করছে সেই নব্য আবু বঙ্গালাদের কি সময়মতো খুঁজে পাওয়া যাবে?

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রš’ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel