বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন
ষ্টাফ রিপোর্টারঃ নিমোরী খাতুন, অসহায় নারী। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে ভেদামারী গ্রামে বাস। করোনার এ মহামারী থাবায় স্বামী ফারুক হোসেনের কোন কাজ নেই। তাই ঘরে খাবারও নেই। ভিজিডি চালের কার্ড আছে। মাসিক চলমান কর্মসূচীর আওতায় দুস্থ্য মহিলাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণকৃত ভিজিডি’র এ কার্ডের সুবিধা পায়নি এ নারী। ৩০০ কেজি চাল ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চাল আনতে গেলে চেয়ারম্যান খারাপ আচরন করে বলে এ ভূক্তভোগী মহিলা অভিযোগ করেন।
কুর্শা ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের সিরাজ হোসেনের পুত্র শাহাজুল হোসেন মৃত্যুবরণ করে ২০১২ সালের দিকে। তার একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড ছিল, যার বহি নং-৬৩০৭, ওয়ার্ড নং-৬, ভাতার হিসাব নম্বর ৩৪০৩৭২৬৮, সোনালী ব্যাংক, হালসা শাখা। কিন্তু চেয়ারম্যান ওমর আলী শাহাজুলের মৃত্যুর তারিখ ২৫/৭/২০১৯ ইং তারিখ দেখিয়ে বকেয়া টাকা ৩১,৫০০/-(একত্রিশ হাজার পাঁচশত) টাকা উত্তোলনের জন্য উঠে পড়ে লাগে। অবশেষে তিনি সফল হন। তার ইউনিয়নের চৌকিদার মহিবুল ইসলামকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মৃত শাহাজুল হোসেনের নাতি দেখিয়ে একটি প্রত্যয়নপত্র দেন। চেয়ারম্যানের এ নকল প্রত্যয়নপত্র পেয়ে মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জামসেদ আলী সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজার বরাবর ভাতাভোগী সাহাজুল হোসেনের মৃত্যু পরবর্তী বকেয়াসহ নমিনির মাধ্যমে ভাতা পরিশোধের আদেশ দেন। সে অনুযায়ী চৌকিদার মহিবুল মৃত শাহাজুল হোসেনের নকল নাতি সেজে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে চেয়ারম্যান ওমর আলীকে দিতে বাধ্য হয়। আর এ কাজে সাহায্য করেন মিরপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের ফিল্ড সুপারভাইজার অসিত কুমার বিশ্বাস।
কুর্শা ইউপির ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য রাজিয়া খাতুন। চেয়ারম্যানের যোগসাজশে তার নিজ স্বামী মোঃ ইদ্রিসের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড বানিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছে। এ বিষয়ে মহিলা ইউপি সদস্য রাজিয়া খাতুন কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন না।
সরকারের বয়স্ক ভাতার নীতিমালা অনুযায়ী বয়স্ক ভাতা পেতে হলে পুরুষদের বয়স ৬৫ বছর এবং নারীদের বয়স ৬২ বছর হতে হবে। কিন্তু চেয়ারম্যান ওমর আলীর যোগসাজশে ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের ফিল্ড সুপারভাইজার অসিত কুমার বিশ্বাস এর যোগসাজসে কম বয়স্ক ব্যক্তিদের বয়স বেশী দেখিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ড বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে আসছে। মাজিহাট গ্রামের মৃত ইছরাফ সর্দারের পুত্র ওমেদ আলীর সর্দারের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ২৭/০৬/১৯৫৮, একই গ্রামের মৃত ভাদু মুন্সীর পুত্র নুরুল ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৬/০৩/১৯৫৯, কুর্শা চেয়ারম্যান পাড়ার শরিফুল ইসলাম যার, ভাতা হিসাব নং ০১০১৭৩৬৭, জন্ম তারিখ ৫/৯/১৯৬২। অথচ এদের কারও বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ না হলেও চুক্তিতে ভাতার কার্ড বানিয়ে চেয়ারম্যান কমিশন খাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ১০ নং কুর্শা ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্র।
এদিকে দীর্ঘ চার বছর ধরে ভুয়া নাম দিয়ে ওএমএস’এর চাল উত্তোলন করে আত্মসাত করায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দবির উদ্দিন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ত্রাণ নেয়ার সময় ছবি তুলতে অনীহা প্রকাশ করায় দুস্থ ও অসহায় মানুষের গায়ে হাত দেয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেন আদালত।