শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক :
সবার জানা একটি গল্প দিয়েই লেখাটি শুরু করতে চাই। এক ছিল রাখাল বালক। বনের ধারে সে গরু চরাত। একদিন সে চিৎকার করে উঠল, ‘বাঘ এসেছে বাঘ।’ গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করতে ছুটে এল, হাতে লাঠিসোঁটা, দা-কুড়াল। এসে দেখল, রাখাল বালক হাসছে। বাঘ আসলে আসেনি। সে মজা করছিল। কয়েক দিন পরে আবারও সে চিৎকার করে উঠল, ‘বাঘ, বাঘ।’ সহজ-সরল গ্রামবাসী। একের বিপদে অন্যে এগিয়ে আসে। তারা আবারও দৌড়ে এল বনের ধারে এসে দেখল রাখাল বালক হাসছে। তারা আবারও ‘ডজ’ খেয়ে ফিরে গেল যার যার কাজে। মাস খানেক পরে আবারও চিৎকার করে উঠল সেই রাখাল বালক। ‘বাঘ এসেছে বাঘ’ গ্রামবাসী আবারও ছুটে এল রাখাল বালকের উদ্ধারে। এসে দেখল, রাখাল বালক হাসছে। তোমাদের কী রকম ঠকালাম। আসলে বাঘ আসেনি। তারপর একদিন সত্যি সত্যি বাঘ এল। রাখাল বালক তারস্বরে প্রাণপণে চিৎকার করতে লাগল বাঘ এসেছে বাঘ। গ্রামবাসীর কেউই আর এগিয়ে এল না। কতবার আর ঠকা যায়। বাঘ খেয়ে ফেলল রাখাল বালকটিকে।এই উপদেশমূলক গল্পটা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। এবং এই গল্পের শেষের উপদেশটাও আমরা জানি, সদা সত্য কথা বলিবে, কখনো মিথ্যা বলিয়ো না।
এই গল্পের আরেকটা মেসেজ বা উপদেশ বা বার্তা আছে, যা বড়দের জন্য। জাতীয় জীবনেও সব সময় নেতারা বলতে থাকেন, আপনাদের সামনে বিপদ, বাঘ এসে গেছে। তারা কাল্পনিক সব বিপদের সংকেতধ্বনি বাজাতে থাকেন। ফলে জনগণ বুঝতে পারে না, কোনটা আসল বিপদ। কোনটা নকল বিপদ। কখন আসলেই তাদের সাবধান হওয়া উচিত। কোন অ্যালার্মটা ভুয়া, কোনটা আসল।
করোনা তো আমরা নিজেরাই বিদেশ থেকে ডেকে আনলাম। রেমিটেন্স ভাইয়েরাও ঝোপ বুঝে কোপ মারল। এ মরণ ব্যধির আগমনের ইতিহাস জানার জন্য খুব বেশী লেখাপড়া জানার দরকার নেই। সেদিকে বা নেই গেলাম। আমরা কুষ্টিয়ার মানুষ বুক ফুলিয়ে বলতাম করোনা বুঝি আমাদের নাগাাল পাবে না। কিন্তু আজকে খবরটা পড়লাম কুষ্টিয়া জেলায় এই প্রথম তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত তিনজনই পুরুষ। এদের মধ্যে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, একজন পুলিশ অপরজন ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধ শ্রমিক। আক্রান্ত ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া সূর্যসেন ক্লাবের সামনে। পুলিশের বাড়ি খোকসার ওসমানপুর গ্রামের কাজীবাড়ি। অপরজনের বাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে।
সমস্যাটা হলো, আপনারা যখন এর বিরুদ্ধে ও, ওর বিরুদ্ধে এ, কথার ফুলঝুরি ছোটাচ্ছেন, তখন আমরা নিজের প্রাণটুকু নিয়ে কী করব, কার কাছে যাব, কোথায় পালাব, বুঝতে পারছি না। ইশপের গল্পের বৃদ্ধ ভেকের মতোই আমাদের বলতে হচ্ছে, আপনাদের জন্য যা ছেলেখেলা, আমাদের জন্য তা জীবনমরণ সংকট।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮