শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
খোকসা পাইলট হাইস্কুলের সেই প্রিয় মতিন স্যার’কে মনে পড়ে!

খোকসা পাইলট হাইস্কুলের সেই প্রিয় মতিন স্যার’কে মনে পড়ে!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
খোকসা পাইলট হাইস্কুলের গন্ডি পেরিয়েছি সেই কবে ১৯৯৭ সালে, তবু সেই মধুর দিনগুলির কথা আজও মনে পড়ে, সেই প্রাণপ্রিয় বন্ধুরা আমার, যাদের কাঁধে হাত রেখে রেখে এই পৃথিবীর অলি-গলি চেনা, একটার পর একটা পরীক্ষা পাশ করা, আরও প্রিয় স্যাররা যাদের কাছে আমাদের হাতে-খড়ি, যারা শিখিয়েছেন ভাল ও মন্দের তফাৎ এবং সবসময় ভাল ও সৎ থাকার শিক্ষা। শিক্ষকদের মধ্যে সবার আগে মনে পরে মরহুম মতিয়ার রহমান মতিন স্যারের কথা। তিনি ছিলেন তখনকার এ্যাসিষ্টেন্ট হেড মাস্টার (পরবর্তীতে হেড মাষ্টার) ইংরেজিতে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী। কি ভরাট গলায়ই না ইংরেজি আওড়াতেন! ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি ছিল স্যারের অন্যরকম টান। ইংরেজি বলা ও শেখানোর ধরণ স্যারের ক্লাস করে বুঝেছি ক্লাস কাকে বলে। এখন আর তেমন শিক্ষকদের কথা খুব বেশি শোনা যায়না।

যেহেতু সবাই ছাত্র এবং সবাই শিক্ষক, সেহেতু শিক্ষকতা পেশা ও এর মর্যাদা পৃথিবীব্যাপী সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ও অনন্য এক মাত্রায় স্বীকৃত। শিক্ষককে সম্মান জানানোর অর্থ নিজেকেই সম্মানিত করা। আবার শিক্ষককে আহত করার অর্থ নিজের গায়েই আাঁচড় কাটা। এ নতুন কোনো কথা নয়।

স্যারের হাতে বেত্রাঘাত খায়নি, চুলের কলি টেনে উঠায়নি আর বড় বড় চোখ দেখে প্রসাব করেনি-এমন ছাত্রের সংখ্যা খুবই কম। ইদানিং আমার স্মৃতিকোষে জমে থাকা অমলিন ঘটনারাজি নিখুঁতভাবে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, কখনও কখনও স্মৃতিও প্রতারণা করে। যাঁদেরকে হৃদয়ের মণিকোঠায় রেখেছি শ্রদ্ধার আসনে, সেখানকার কথাগুলো গুছিয়ে বলাও ইদানিং মুসিবত বলে মনে হচ্ছে। স্মৃতির সাথে আবেগের ধাক্কা-ধাক্কিতে অবিকলভাবে স্মৃতিরোমন্থন হতে চলেছে। আজ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তা-ই মনে হচ্ছে।

মতিন স্যার পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়ে আকাশের তারকারাজি হয়ে উর্ধ্বলোকে বিরাজ করছেন। স্মৃতি থেকে তাঁর কথা কোনো মতেই বিস্মৃত করা যাবে না। নীরবে নিভৃতে যখন ভাবি, স্যারের উপস্থিতি চিন্তায় আপনা-আপনি চলে আসে। নিজের জীবনের সাথে, স্মৃতিরাজির সাথে, অন্তরাত্মার সাথে স্যার মিশে আছেন আমার অস্তিত্বের মতো সত্য হয়ে।

মতিন স্যারের মতো শিক্ষকের প্রয়োজন স্বপ্ন দেখানোর জন্য, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। সুন্দর বাচনভঙ্গি, মোলায়েম স্বর, নির্ভয়-সুরত তাঁকে ছাত্রদের মাঝে আশা-ভরসাস্থল হিসেবে পরিণত করেছিলো। কতো ছাত্র তাঁর কাছে জীবনের সঠিক নির্দেশনা পেয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জীবনপথের পাথেয় পেয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

আজকে যখন শিক্ষক ও শিক্ষকতা শব্দযুগল বিভিন্নভাবে কালিমালিপ্ত হচ্ছে, তখন মতিন স্যারের মতো শিক্ষকদের শূণ্যতা সমাজে তীব্রভাবে অনুভুত হচ্ছে।

মতিন স্যার আপাদমস্তক শিক্ষক ছিলেন। তিনি কখনও শিক্ষা ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগী ছিলেন না। একজন শিক্ষকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শিক্ষাকে আনন্দের মাধ্যম করে তোলা, স্যারের এ-গুণটি ছিলো। শ্রুতিমধুর ভাষণ দিয়ে তিনি ছাত্রদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন। এতো সাহিত্য আওড়ানো শিক্ষক আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়তে গিয়েও দেখেনি।

স্যারের পঠন-পাঠন ব্যাপক ছিলো। আজ যা অনেক চাকুরিজীবি শিক্ষকের কাছে কল্পনার মতো মনে হবে। যথাসময়ে ক্লাশে আসাও তাঁর একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো। প্রত্যেক ছাত্রের সাথে শ্রেণিকক্ষে পাঠসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেন। শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে কোনো ছাত্রের নাম ধরে ডাকেন, তখন ঐ ছাত্রের মনে আনন্দের ফুলকি সৃষ্টি হয়। আমার নিজের অনুভূতি থেকেই কথাটি বললাম।

অবসরজীবন স্যার খোকসার শমোসপুর বাড়িতেই কাটিয়েছেন। যে অঞ্চলের মাটি আর হাওয়ায় তিনি বেড়ে ওঠেছিলেন তিনি বারবার সেখানেই ফিরে গিয়ে স্বাচ্ছন্দবোধ করেছেন। সেখানেই তিনি এখন চিরশায়িত আছেন। আর আমরা যারা তাঁর চিন্তার সন্তান, আমরা ছড়িয়ে আছি শুধু দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আমি স্যারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি পরম আল্লাহর কাছে। ।

আসুন, আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেওয়া শিক্ষকদের, যাঁরা এখনও বেঁচে আছেন, দেখা করে আশীর্বাদ নিই; এক গুচ্ছ ফুল হাতে দিয়ে আসি; যারা দূরে তাদের কাছে টোকেন গিফ্ট পাঠাই, পূর্বের স্মৃতি রোমন্থন করে একটা লেটার অব অ্যাপ্রিশিয়েশন পৌঁছিয়ে দেই; কিংবা অন্য কোনো সৃজনশীল উপায়ে সম্মান দেখাই। এসব করার মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে জানিয়ে দেই যে, আমি আপনার একজন পুরনো ছাত্র বা ছাত্রী আপনাকে স্মরণে রেখেছি। তিনি বুঝবেন, তিনি তার প্রিয় ছাত্রছাত্রীর স্মৃতির অতলান্তে হারিয়ে যাননি।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন বিশ্লেষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel