শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গড় বিল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার গ্রাহক। করোনাভাইরাস প্রাদুভাবের কারণে বাড়ি বাড়ি না গিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে অফিসে বসেই প্রত্যেক গ্রাহকের গড় বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে। মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল প্রায় দ্বিগুন হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাজারো গ্রাহক। যে কারণে এ সমিতির আওতায় হাজার হাজার গ্রাহককে বিগত মাসগুলোর চাইতে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে।অবশ্য কর্তৃপক্ষ এই গড় বিল করার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে তারা বাধ্য হয়েই গড় বিল করছেন। যাদের বিল বেশি হয়েছে তারা অফিসে আসলে বিল ঠিক করে দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দাদাপুর সড়কের প্রফেসর ড. আনোয়ারুল করিমের। তার বাসায় মার্চ মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ১৩৮৯ টাকা। কিন্তু এপ্রিল মাসের বিদ্যুৎ বিল করা হয়েছে ৩০৪৫ টাকা। ডবলেরও বেশি বিদ্যু বিল আসার কারণ তিনি কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না।
জেলার কুমারখালী উপজেলার এলাকার মিজানুর রহমান জানান, আমার মার্চ মাসের বিল এসেছে ৫০১ টাকা। কিন্তু এপ্রিল মাসে বাড়িতে না এসে বিল করা হয়েছে ৭৪৫ টাকা। এমন অভিযোগ দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুসের। তিনি জানান, মার্চ মাসে তার বিদ্যুৎ বিল এসেছিল ৪০০ টাকা। কিন্তু এপ্রিল মাসে বিল করা হয়েছে ৯৮৯ টাকা।
নুর মোহাম্মদ নামের মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার এক গ্রাহক অভিযোগ করেন মার্চ মাসে ৩১২ টাকা বিল করা হয় কিন্তু এপ্রিলে এসেছে ৫৭৪ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব আলী বিশ^াস জানান, প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশে এমন গড় বিল করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে গ্রাহকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মিটার রিডাররা রিডিং নিতে পারেননি। তাই প্রত্যেক গ্রাহকের গড় বিল করা হয়েছে। এতে দু’চার জনের বিল বেশি হতে পারে বলে স্বীকার করে তিনি জানান, যাদের বিল বেশি এসেছে তারা বিলের কপি অফিসে নিয়ে আসলে বিল ঠিক করে দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, টেলিভিশন লাইভে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে বাড়ি বাড়ি না গিয়ে গড় বিদ্যুৎ বিল করার কথা জানিয়েছিলেন। যদিও এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে কোন লিখিতও নির্দেশ আসেনি। প্রতিমন্ত্রীর এই মৌখিক নির্দেশের কারণেই কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিস থেকে গ্রাহকদের গড় বিল করেছেন। অবশ্য গড় বিল করা হলেও গ্রাহক তার বিদ্যুৎ বিল তিন মাস পরেও পরিশোধ করতে পারবেন। এর জন্য গ্রাহককে কোন বিলম্ব মাশুল গুনতে হবে না বলে জানান বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের দাবি করোনা প্রার্দুভাবের কারণে মিটার রিডাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটারের রিডিং নিতে ভয় পাচ্ছিলো। এজন্য অফিসে বসেই গড় বিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিলের ওপর সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গড় বিল করা হলো এই কথাটা লিখে দেওয়া হয়েছে। এদিকে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ অফিসে বসে গড় বিল করলেও কুষ্টিয়া ওজোপাডিকোর কর্মকর্তারা জানান, তারা গ্রাহকদের গড় বিল করেননি। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে যাদের বিল বেশি হয়েছে তারা বারখাদা পল্লী বিদ্যুতের অফিসে নিয়ে আসলেই বিল ঠিক করে দেওয়া হবে। বজলুর রহমান নামের একজন গ্রাহক অভিযোগ করেন লাইনে দাঁড়িয়ে বিল ঠিক করতে গেলে সারাদিন কেটে যায়। এই ভোগান্তির দায় কে নেবে? কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার সোহরাব আলী বিশ^াস জানান, বর্তমানে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় বিদ্যুৎ এর গ্রাহক সংখ্যা হচ্ছে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ (আবাসিক) গ্রাহকের এভাবে গড় বিল করা হয়েছে।