বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
বিবাহ বহির্ভূত (জারজ) সন্তানের ভরণপোষণ ও দায়দায়িত্ব কার?

বিবাহ বহির্ভূত (জারজ) সন্তানের ভরণপোষণ ও দায়দায়িত্ব কার?

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া শিশুর অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ে সভ্য সমাজে এখনও রয়েছে নানা জটিলতা। ফলে ধর্ষণের ঘটনা এবং এর ফলে জন্ম নেওয়া শিশুর সামাজিক জীবন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠে। রাষ্ট্রের উদাসীনতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ার ফলে এ রকম অধিকাংশ শিশুই হয়ে ওঠে ভয়ংকর অপরাধী।

গ্রামের এক সম্ভান্ত পরিবারের পরিপাটি চেহারার এক ষোড়শী নারী মামলা করেছেন থানায় একজন তরুণ স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ হচ্ছে, শিক্ষক বেচারা তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করায় এখন সে সন্তান সম্ভাবা। অপরাধ খুবই গুরুতর। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩)-এর ৯ ধারায় শিক্ষক অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে সহসা জামিনের আশা নেই। কারণ, প্রথমত জামিন অযোগ্য ধারার অপরাধ, দ্বিতীয়ত এ মামলায় জামিন শুনানী করার এখতিয়ার নিম্ন আদালতের নেই। সে কারণে অভিযোগকারিনী মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন আসামীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে শিক্ষক বেচারা গা-ঢাকা দিয়েছে। মামলাটি তদন্ত চলাকালে মহিলা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। দীর্ঘ তদন্তের পর আদালত মহিলার পক্ষে রায় দেন এবং ধর্ষক শিক্ষককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেন। আদালত শিশুটির ভরণপোষণের জন্য জেলা প্রশাসনকে প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা প্রদান করতে নির্দেশ দেন। আসলে এই রায়ই কি যথেষ্ট ধর্ষিতা ও তাঁর সন্তানের জন্য? চলুন জানা যাক এ বিষয়ে আইন কী বলে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩)-এর ধারা ১৩-তে বলা হয়েছে যে, ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুটির তত্ত্বাবধান করবেন শিশুটির মা অথবা মা-পক্ষের আত্মীয়স্বজন। এ সময় শিশুটি মায়ের অথবা বাবার অথবা উভয়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে। আরো বলা হয়েছে যে, শিশুটির ভরণপোষণ ব্যয় বহন করবে সরকার। এ ক্ষেত্রে শিশুটি ছেলে হলে ২১ বছর আর মেয়ে হলে বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত সরকার তার ভরণপোষণ ব্যয় বহন করবে।

তবে শিশুটি যদি প্রতিবন্ধী হয়, তবে যত দিন পর্যন্ত সে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করতে না পারে, তত দিন পর্যন্ত সরকার ভরণপোষণ দেবে। আদালত এ ক্ষেত্রে নির্ধারণ করে দেবেন যে শিশুটিকে প্রতি মাসে ভরণপোষণ বাবদ কত টাকা দেওয়া হবে। ধারা ২০-এ বলা হয়েছে যে, এ আইনে দায়ের করা প্রতিটি মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। ধারা ১৩(৩) এ বলা হয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুটির ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। কিন্তু পরে আদালতের নির্দেশে ধর্ষণকারীকে শিশুর ব্যয়ভার নির্বাহ করতে হবে। ধর্ষক ভরণপোষণ দিতে ব্যর্থ হলে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে শিশুর ব্যয়ভার বহন করা হবে।

ধারা-১৩ ও ১৫ তে বলা হয়েছে যে, ধর্ষকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহকৃত টাকা পর্যাপ্ত না হলে সে ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারী হবে এমন সম্পত্তি থেকে ভরণপোষণ ব্যয় নির্বাহ হবে। এ ক্ষেত্রে ওই সম্পত্তির ওপর কোনো ব্যাংক লোন অথবা বন্ধকি থাকলেও শিশুটির অধিকার আগে প্রাধান্য পাবে। ধারা ১৬ তে বলা হয়েছে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলার কালেক্টর প্রথমে ধর্ষণকারীর সব প্রকার সম্পত্তির একটি তালিকা তৈরি করবেন এবং সরাসরি নিলামের মাধ্যমে সেই সম্পত্তি বিক্রি করে শিশুর ভরণপোষণ ব্যয় নির্বাহ করবেন

ধারা ১৪ তে বলা হয়েছে ধর্ষিতা ও সন্তানের ছবি, নাম, বাসা অথবা স্থায়ী ঠিকানা কোনোটাই পত্রিকা অথবা মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না। যদি কেউ জানা সত্ত্বেও ভিকটিমের পরিচয় বা ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ করেন, তবে তিনি এক লাখ টাকা অর্থদ-সহ জেল ভোগ করবেন। ধারা ২৪-এ বলা হয়েছে, যদি কোনো পক্ষ আদালতের রায়ের ফলে নিজেকে বঞ্চিত মনে করেন, তাহলে ওই রায় ঘোষণা হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।

সৃষ্টিকর্তার কি অপার মহিমা, একটি শরীরের ভেতর আরো একটি শরীর গঠন। ধিক সেই স্বামীকে/প্রেমিককে যে তার স্ত্রীকে/প্রেমিকাকে পরিপূর্ণ মর্যাদা দিতে পারে না। শত-সহস্র কোটি ঘৃণাতে বিলীন হয়ে যাক সেই স্বামী/প্রেমিক যে তার স্ত্রীকে/প্রেমিকাকে তার আপনদের একজন ভাবতে পারে না, হৃদয়ের সবটুকু অনুভূতি দিয়ে স্ত্রীকে/প্রেমিকাকে ভালোবাসায় সিক্ত করতে পারে না।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel