রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
কিভাবে আপনি জমির পাওয়ার অব এ্যাটর্নী করবেন

কিভাবে আপনি জমির পাওয়ার অব এ্যাটর্নী করবেন

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: পৈত্রিক সূত্রে অঢেল সম্পত্তির মালিক করিম সাহেব। ছেলেরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পেশাগত কাজে অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেন। করিম সাহেবের বয়স শত ছুঁই ছুঁই। একেবারে বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। সম্পত্তি আর আগের মতো দেখাশোনা করতে পারেন না। বেশ কিছু জমি রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে বেহাত হয়ে গেছে। বিঘা পচিশেক জমি নিয়ে দেওয়ানী আদালতে বেশ কয়টি মামলাও চলছে। এদিকে একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানী তার একখন্ড জমিতে একটি বহুতল বাড়ি নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। রহিম সাহেব খুব ভালোভাবেই জানেন যার সম্পত্তি আছে তার বিপত্তিও আছে। আছে আইনের মারপ্যাঁচ। তিনি তার মত একজনকে এসব দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে চান। ভাবতে ভাবতেই তিনি শরণাপন্ন তার এক পরিচিত আইনজীবীর কাছে। যাঁরা সম্পত্তি ভোগ দখল করেন, রক্ষণাবেক্ষণ করেন, সম্পত্তি কেনা-বেঁচা করে থাকেন তাঁদের জানা উচিৎ পাওয়ার অব অ্যাটর্ণী বা আমমোক্তার নিয়োগ-পদ্ধতি সম্পর্কে। আইনজীবীর পরামর্শ মতে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন’ ২০১২ মোতাবেক করিম সাহেব তার সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ এবং মামলা পরিচালনার জন্য একজন ব্যক্তিকে এবং ওই রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানটিকেও তার ভূমির উন্নয়নের জন্য অ্যাটর্নি বা আম-মোক্তার হিসেবে নিয়োগ দিতে মনস্থির করলেন।

কিন্তু কীভাবে দায়িত্ব দিতে হবে? আপনাকে এখন যা করতে হবে তা হচ্ছে ওই বিশ্বস্থ ব্যাক্তির উপর পাওয়ার অব অ্যার্টনি বা আমমোক্তারনামা করতে হবে। তা হতে হবে লিখিত। এটি একটি আইনগত দলিল। স্ট্যাম্প আইন অনুযায়ী যে দলিল দিয়ে কোনো ব্যক্তিকে অপর কোনো ব্যক্তির পক্ষে হাজির হয়ে ক্ষমতা প্রদান করা তাকে আমমোক্তারনামা দলিল বলে। যাকে মোক্তার নিয়োগ করা হলো তিনি মূল মালিকের পক্ষে সম্পত্তির দান, বিক্রি, হস্তান্তর, রক্ষণাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা, খাজনা প্রদান করে থাকেন। আমমোক্তারনামা দলিলে স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে যাকে পাওয়ার বা ক্ষমতা দেওয়া হলো তিনি কী কী করতে পারবেন, কিংবা পারবেন না।

সাধারণত মোক্তারনামা দুই প্রকার। একটি হচ্ছে সাধারণ মোক্তারনামা, যাকে আমমোক্তারনামা বলা হয়। আরেকটি হচ্ছে খাস মোক্তারনামা, যাকে বিশেষ মোক্তারনামা বলা হয়। সাধারণত মোক্তারনামায় মোক্তারদাতার পক্ষে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয় কিন্তু বিশেষ মোক্তারনামা সম্পাদন করতে হয় নির্দিষ্ট কাজের জন্য। সাধারণত আমমোক্তারনামা যেগুলো জমিজমা হস্তান্তরের সঙ্গে জড়িত নয়, সেগুলো নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারি করে নিলে হয়। কিন্তু জমিজমা হস্তান্তরসংক্রান্ত মোক্তারনামা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করাতে হবে, নইলে এর আইনগত ভিত্তি থাকে না। রেজিস্ট্রেশন দলিল সম্পাদনের তিন মাসের মধ্যে করতে হবে। কোনো মামলা-মোকাদ্দমা পরিচালনার ক্ষেত্রেও আমমোক্তারনামা নিয়োগ করা যায়। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি লাগবে। ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করা হয়েছে। যেকোনো দলিল হস্তান্তর, ক্রয়, বিক্রয়, উন্নয়ন এবং ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ছবি দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

তবে বিদেশে বসবাস বা অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা দিতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দলিল সম্পন্ন করে এবং প্রত্যয়ন করে পাঠাতে হবে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তা সত্যায়িত করাতে হবে।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় মোক্তার নিজের নামে কিংবা প্রতারণামূলকভাবে জায়গাজমি হস্তান্তর বা বিক্রি করেছেন। এ নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমাও কম হয় না। তাই দলিলে শর্তগুলো স্পষ্ট করে লেখা থাকতে হবে।

যেকোনো সময় মোক্তারনামা বাতিল করা যায়। যে রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল সে জেলায় রেজিস্ট্রারের বরাবর মোক্তারনামা বাতিলের জন্য আবেদন করতে হবে। রেজিস্ট্রার এটি রদ করবেন নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং তার জেলার রেজিস্ট্রি অফিসে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন। যদি রেজিস্ট্রি করা না হয়ে থাকে তাহলে আমমোক্তার বাতিল ঘোষণা করে নির্ধারিত স্ট্যাম্পে দলিল সম্পন্ন করা যেতে পারে।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel