বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ অপরাহ্ন
মোঃরুহুল আমিন পিয়াস, খোকসা উপজেলা প্রতিনিধি :
কুষ্টিয়ার খোকসায় দোজালিতে গুড়ে ভেজাল মেশানোর অপরাধে দিলীপ বিশ্বাস ওরফে ষষ্টীসহ আরও ২ দোজালি ব্যবসায়ীকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলা গ্রেপ্তার জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। মুজিব৭১বাংলা নামে স্থানীয় একটি নিউজ পোর্টালে ভেজাল গুড় নিয়ে কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ করে পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক নিখিল কুমার বিশ্বাস।
এর জেরে খোকসা থানার এসআই সোহেল বাদী হয়ে মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিন দোজালি ব্যবসায়ীকে আসামি করে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।
পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে খোকসা উপজেলা সদরের ডাকবাংলো রোডে দিলীপ বিশ্বাস ষষ্টী দীর্ঘ দিন ধরে ডিমাগুড় তৈরির নামে গুড়ের সঙ্গে রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে আসছিল।
দীর্ঘদিন ব্যবসা শুরুর পর থেকেই তাদের অপকর্মের জন্য ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়। পরে ভোক্তা অধিকার একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অর্থদণ্ড দিলেও তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগের একাংশের দাপটে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় বহু বছর ধরে অবৈধ ভেজাল গুড়ের কারবার করে আসছিলেন দিলীপ বিশ্বাস ষষ্টী। ভেজাল গুড়ের দোজালি বা কারখানায় মানবদেহের ক্ষতিকারক ক্যামিকেল, রঙ, মেয়াদউত্তীর্ণ চকলেট, চিনি ও নামমাত্র গুড় মিশিয়ে তৈরি করা হতো ডিমে গুড়। আর সেই গুড় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট অঞ্চলে পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রয় করা হতো।
চোখের সামনেই এভাবে ভেজাল খাদ্য তৈরি করার অপরাধে একাধিকবার ভ্র্যাম্যমান আদালতে জরিমানা করা হলেও বারবারই বেড়িয়ে এসেছে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে। মাহমারি করোনার মধ্যেও থেমে ছিলনা এই চক্রের ভেজাল কারবার। আর এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেই কঠোর ব্যবস্থা নেয় খোকসা উপজেলা প্রশাসন ও খোকসা থানা পুলিশ। আর এই নিউজ প্রকাশ করেই বিপাকে পড়ে মুজিব৭১ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদক নিখিল কুমার বিশ্বাস।
সাংবাদিক ও খোকসা উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য নিখিল বিশ্বাস অভিযোগ করেন, জামিনে মুক্তি পেয়েই গত ১৫ জুন রাতে দিলীপ বিশ্বাস ষষ্টী তাকে ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। হুমকির বিষয়টি নিখিলের বাবা ইলেকট্রিক মিস্ত্রী সাধন কুমার বিশ্বাস খোকসা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম রানাকে জানায়।
সাংবাদিক নিখিলের বাবা সাধন কুমার বলেন, স্থানীয় সাংবাদিক নেতাকে জানানোর পরই ১৬ জুন সন্ধ্যায় কালীবাড়ী মাঠে ডেকে নিয়ে ষষ্টী ও তার ছোট ভাই আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত ও গালিগালাজ করে। পাশাপাশি শুক্রবারের (১৯ জুন) মধ্যে নিখিলকে ষষ্টীর দরবারে হাজির করার আল্টিমেটাম দেয়।
এদিকে ভেজাল গুড় ব্যবসায়ী দিলীপ বিশ্বাস খোকসা পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি। আর ওই কমিটির একজন সদস্য সাংবাদিক নিখিলের বাবা সাধন কুমার। এ ব্যাপারে কমিটির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির সভাপতি মাধব কুমার বলেন, আসলে ব্যাপারটি যদি সত্যি হয় তাহলে সত্যিই দু:খজনক। আমরা দুজনকে ডেকে একটা সমাধান করবো।
এদিকে কথা বলা হয় খোকসা থানার তদন্ত ওসি ইদ্রিস আলীর সাথে। তিনি বলেন, আসলে ঘটনাটি খুবই পীড়াদায়ক। তবে এই ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। অভিযোগ পেলেই আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সে যত শক্তিশালীই হোক না কেনো তাকে কোনোপ্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।