বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৮ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 


আলোকবর্তিকা কুতুব উদ্দিন স্যারের কথা মনে পড়ে!

আলোকবর্তিকা কুতুব উদ্দিন স্যারের কথা মনে পড়ে!

 

এস.এম. নাজিম রেজা লালু: একজন আদর্শ শিক্ষক তিনিই, যাঁর শিক্ষা ও স্মৃতি দীর্ঘকাল শিক্ষার্থীর মনে গেঁথে থাকে। তেমনি একজন অনুপ্রেরণাদায়ক শিক্ষক ছিলেন কুতুবউদ্দিন আহমেদ। খোকসার ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য ‘খোকসা জানিপুর বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়’ এর সাবেক ইংরেজি শিক্ষক। মানুষের জীবনের একটি সময়ে কোনো না কোনোভাবে শিক্ষকের ভূমিকা একটু হলেও থাকে। ঠিক তেমনিভাবে আমার জীবনেও আছে। এমন একজন শিক্ষক যার অনুপ্রেরণা আশীর্বাদ ও ভূমিকার কথা প্রতিনিয়ত মনে পড়ে। মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসে কিছু মানুষ নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। তেমনি একজন ক্ষনজন্মা, নির্লোভ, পরোপকারী মানুষ ছিলেন আমাদের প্রানপ্রিয় শিক্ষক জনাব কুতুবউদ্দিন আহমেদ।

স্যার ছিলেন আমাদের পাশ্ববর্তী কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কালোয়া গ্রামের মানুষ। জীবনের শুরুতেই ‘ভিলেজ রাজনীতি’ স্যারকে ব্যথিত করেছিল। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন খোকসা পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে। অস্থায়ী নীড় বাসা বেধেছিলেন জানিপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্ব প্রয়াত রেবতী রমণ পাল মহাশয়ের বাড়ীর পশ্চিম পাশে তুষ্ট বাবুর বাড়িতে। চতুর্মূখী বিশাল দোতলা বাড়ী, যা আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই বাড়িটি গড়াই নদীর কড়াল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। কিছুদিন ছিলেন পোকন ভায়ের বাড়ি। সেখান থেকে স্কুলের হিন্দু বোর্ডিং এর পশ্চিম পাশে অস্থায়ী ঘেরা বাসায় অবস্থান করেন। অবশেষে খোকসা উপজেলার পেছনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। স্যারের দুই ছেলে আর তিনটি মেয়ে। স্যার সম্পর্কে বলা বা মূল্যায়ন করা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে সম্ভব নয়। তবে এ অঞ্চলের মানুষ স্যারকে ইংরেজির জাহাজ হিসেবে চিনতেন। তাঁর আদর্শে গড়ে উঠা অসংখ্য ছাত্র সমাজ বলতে পারেন স্যারের অফুরন্ত ভান্ডারের কথা। হালকা কালারের জামা ও সাদা পাজামা পরতেন তিনি। শার্টে থাকতো সোনার চেইন ও সোনার বোতাম। যা সে সময় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। স্যারের ব্যক্তিত্ব ও পান্ডিত্য দেখলে অনায়াসে যে কোন লোকের মাথা নত হয়ে আসতো।

আমি স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম। মাঝে মধ্যে স্যার আমাকে নিয়ে রসিকতা করতেন। বলতেন দেখ ভাস্তে আমরা বেঁটে খাটো মানুষ যারা, তারাতো এভার গ্রীন মানে চির সবুজ। এই কথাগুলো যখন মনে হয়, বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। এক সময় তিনজন শিক্ষক মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘কিম মেডিকেল ষ্টোর’। এঁরা ছিলেন আমার বাবা প্রয়াত শেখ ইন্তাজ উদ্দিন, কুতুবউদ্দিন ও মজিবর রহমান লাল্টু স্যার)। বাবার কলিক ও আমি সরাসরি স্যারের ছাত্র হওয়ার সুবাদে তাঁর সাথে অনেক সহজভাবে মেশার সুযোগ পেয়েছি। তাঁর জীবনের শেষ দিকে কেটেছে চট্টগ্রামে তাঁর বড় ছেলে নাছিম উদ্দিন আহমেদ স্বপনের বাসায়। কিন্তু তিনি কখন খোকসার মানুষের কথা ভোলেননি। স্যারের কথা লিখে শেষ হওয়ার নয়।

আজকে স্যার নেই কিন্তু তিনি রেখে গেছেন তাঁর আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা আর আমাদের মতো অধম ছাত্রদের। স্যারের আত্মার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আসুন, আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নেওয়া শিক্ষকদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। প্রিয় শিক্ষক জ্যোতিন বাবু, শক্তি বাবু, কুতুবউদ্দিন এর মতো শিক্ষকগণ যেনো স্মৃতির অতলান্তে হারিয়ে না যায়, আসুন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ নিই।

লেখকঃ প্রকৌশলী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

ছবি সংগ্রহ “স্বরণীকা কস্তূরিকা, উসাস, খোকসা

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel