মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ! নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের থেকেই ভিসি নিয়োগের অনুরোধ ইবি শিক্ষকদের সংবিধান সংস্কারঃ সংশোধন না-কি পুনর্লিখন?  সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতাঃ আইন কি বলে?
জমি-জমা নিয়ে যে কোন ধরণের বিরোধ দেখা দিলে কি করবেন?

জমি-জমা নিয়ে যে কোন ধরণের বিরোধ দেখা দিলে কি করবেন?

 

এ্যডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক :

আজ আমরা আলোচনা করব জমি-জমা নিয়ে বিরোধ হলে কি করবেন, কোথায় যাবেন, কিভাবে সমাধান করবেন, কোন আদালতে যাবেন, কোন ধরণের মামলা করবেন, কতদিন সময় লাগবে।

যখন কোন ব্যক্তির সম্পত্তির বৈধ অধিকারের উপর আঘাত আসে তখন সে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেওয়ানী মামলা করে। আমাদের দেশের ৮০ ভাগ মামলাই হয় জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে। জমির স্বত্ব, দখল, রেকর্ড, অধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দেওয়ানী মামলার সূত্রপাত ঘটে। সময়মত রেজিস্ট্রেশন, মিউটেশন, খাজনা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ না করা, বেনামী লেনদেন এবং সিলিং অতিক্রান্ত জমি নিজের দখলে রাখার কারণেও মামলা-মোকদ্দমার উদ্ভব হয়। কাজেই আমরা একটু সচেতন হলেই জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ কমে আসতে পারে।

সম্পত্তি স্থাবর, অস্থাবর, দৃশ্যমান, অদৃশ্যমান, যৌথ ও একক হতে পারে। মনে রাখবেন মামলায় ডিক্রী লাভ করার জন্য বাদীকে এরূপ প্রমাণ করতে হয় যে, উক্ত মামলা দায়ের করার ব্যাপারে তার বৈধ অধিকার রয়েছে। বাদী তার অধিকার প্রমাণ করে ডিক্রী লাভের যে সকল অবস্থা ও তথ্য আদালতের সামনে উপস্থাপন করে, তাকেই দেওয়ানী আইনে কজ অব একশন বা মামলার কারণ বলা হয়ে থাকে। দেওয়ানী আদালতে যে পক্ষ মামলা দায়ের করে, তাকে মামলার বাদী বলা হয় এবং যার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে বিবাদী বলা হয়। দেওয়ানী মামলায় এক ব্যক্তি বাদী হতে পারে বা একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে বাদীরূপে মামলা পরিচালনা করতে পারে। একইভাবে এক বা একাধিক ব্যক্তি কোন মামলার বিবাদী হতে পারে।

দেওয়ানি মামলা শুরু হয় আরজি গ্রহণের মাধ্যমে। বাদী তার মোকদ্দমার বর্ণনা ও প্রতিকার আরজিতে উল্লেখপূর্বক প্রয়োজনীয় কোর্ট ফিসহ সংশ্লিষ্ট আদালতে মোকদ্দমাটি দায়ের করবেন। দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার মামলার আরজি গ্রহণ করে আরজির গায়ে বা এর সঙ্গে যুক্ত অর্ডারশিটে বা স্লিপে মামলার ফাইলিং নম্বর লিখবেন। যেমন দেওয়ানি মামলা নম্বর ১৩৫/২০২০ ইং। এর অর্থ হলো ওই আদালতের ২০২০ সালে ১৩৫ নম্বর দেওয়ানি মামলা।

একটি মামলা দায়েরের ২য় ধাপ সমন জারি। সমন দু’ভাবে জারি করা হয়। আদালতে জারিকারকের মাধ্যমে এবং আদালতের সেরেস্তা কর্তৃক ডাকযোগে। সমন জারি অন্তে ফেরত আসলে এই পর্যায়ে বিবাদী পক্ষের জন্য জবাব দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য্য হয়ে থাকে। বিবাদী মামলা প্রথম শুনানির তারিখে বা এর আগে বা আদালতের অনুমোদিত সময় দুই মাসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করবেন। তা না হলে মামলাটি একতরফাভাবে শুনানির জন্য নির্ধারিত হবে। তবে দেওয়ানি কার্যবিধি ৮০ ধারার নোটিশ জারি না হলে সরকার জবাব দাখিলের জন্য তিন মাস সময় পাবে। বিবাদী যদি তাঁর দাবির সমর্থনে কোনো দলিলের ওপর নির্ভর করেন, তবে তা ফিরিস্তিসহ দাখিল করবেন। মামলার প্রথম শুনানির তারিখ বা জবাব দাখিলের তারিখের মধ্যে যেটি পড়ে, তা থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ইস্যু গঠন করতে হবে। যেসব বিরোধীয় বিষয়ের ওপর মামলা নিষ্পত্তি হবে, সেসব বিষয়বস্তু নিয়ে ইস্যু গঠন করা হবে। এই পর্যায়ে মোকদ্দমার কোন কাগজপত্র বা দলিলাদী দাখিল করতে চাইলে সেগুলো দাখিলের জন্য তারিখ ধার্য্য হয়। সাধারণত ইস্যু গঠনের পর কোনো তদবির আছে কি না, এর জন্য এ পর্যায়টি রাখা হয়। ইস্যু গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে মামলার চূড়ান্ত শুনানির তারিখ ধার্য হয়ে থাকে। চূড়ান্ত শুনানির (পিএইচ) তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করতে হয় ও পরবর্তী চূড়ান্ত শুনানি (এফপিএইচ) পর্যায়ে বিচারক জবানবন্দি, জেরা, দলিলাদি গ্রহণ করবেন এবং যুক্তিতর্ক শুনবেন।

মামলা শুনানি সমাপ্ত হওয়ার পর অনধিক সাত দিনের মধ্যে আদালত রায় ঘোষণা করবেন। রায় ঘোষণার তারিখ থেকে সাত দিনের মধ্যে ডিক্রি প্রণয়ণ করবেন। এ ছাড়া মামলার যে কোনো পর্যায়ে দুই পক্ষই আরজি, জবাব সংশোধন, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিদর্শন ও স্থানীয় তদন্তের জন্য আদালতে দরখাস্ত দিতে পারবে। মামলার জবাব দাখিলের পর প্রতিদ্ধন্ধীতাকারী পক্ষরা যে কোনো সময় আপস-নিষ্পত্তির জন্য আদালতের মধ্যস্থতায় বা আদালতের বাইরে বসতে পারেন। দেওয়ানি কার্যবিধির ৮৯(ক) ধারা মোতাবেক আপস-নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে, যা এডিআর নামে পরিচিত। আদালতের রায়ে কোন পক্ষ সন্তুষ্ট না হলে সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপীল করার সুযোগ রয়েছে।

এবার আসি কোন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। কোন আদালতে কোন মামলার বিচার হবে তা তিনভাবে ঠিক করা হয়। যথা- আর্থিক এখতিয়ার, আঞ্চলিক এখতিয়ার এবং বিষয়বস্তু ভিত্তিক এখতিয়ার। এবার আসি আর্থিক এখতিয়ার বিষয়ে।বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতে সকল জেলায় সর্বনিম্নে সহকারী জজ, তার উপর সিনিয়র সহকারী জজ, এর উপর যুগ্ম জেলা জজ এবং সবচেয়ে উপরে জেলা জজ। এই আদালতগুলো বিচারের ক্ষমতা টাকার অংক দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন সহকারী জজ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত, সিনিয়র সহকারী জজ দুই থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত, যুগ্ম জেলা জজ চার লাখ টাকার উপর পাচ লাখ টাকা পর্যন্ত, জেলা জজ ৫ লাখ টাকার উপরে যে কোন অংকের আপীল গ্রহণ করতে পারবে।

এরপর আসুন আঞ্চলিক এখতিয়ার বিষয়ে।সম্পত্তি যে এলাকার সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত, সম্পত্তি বিষয়ক মামলা সেই আদালতে দায়ের করতে হবে। স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, বাটোয়ারা, রেহেন পরিশাধ, স্বত্ব নির্ণয় এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা সাধারণত ঐ সম্পত্তিটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার আদালতে করতে হবে।

এবার রয়েছে বিষয়বস্তুভিত্তিক এখতিয়ার। মামলার বিষয়বস্তুর মূল্য যাই হোক না কেন পরিবার বিষয়ক সব মামলা পারিবারিক আদালতের দায়ের করতে হয়।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ই-মেইল: seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel