এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিকঃ
আজ আমরা আলোচনা করব আপনি ভূমি হতে অবৈধভাবে দখলচ্যূত হলে কি করবেন, কিভাবে দখলচ্যূত সম্পত্তি পূণঃ উদ্ধার করবেন, কিভাবে আপনার জমিতে দখল বুঝে নিবেন, কিভাবে প্রতিকার পাবেন-সেসব বিষয় নিয়ে।
প্রতিনিয়ত জমি, বাড়ী, ফ্ল্যাট হতে কেউ না কেউ দখলচ্যূত হচ্ছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রায়ই অন্য লোকজনের স্থাবর সম্পত্তি জোর পূর্বক বা চাতুরী পন্থায় দখল করে নিচ্ছে। যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া যদি কোনো ব্যক্তি তার জমি থেকে দখলচ্যূত হন তবে তিনি আদালতে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে মামলা দায়ের করে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন।
একই সম্পত্তি নিয়ে যদি অপর কোনো ব্যক্তি মামলা করতে চায় তবে তাতে কোনো বাঁধা নেই। কারণ নিজের স্বত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তার দখল পুনরুদ্ধার করার জন্য কোনো ব্যক্তি কতৃক মামলা দায়ের করার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে এই আইনে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে না। এই ধারা অনুসারে দায়েরকৃত মামলায় প্রদত্ত কোনো আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপীল করা যাবে না, অথবা তেমন কোনো আদেশ পুনর্বিবেচনার কোনো অনুমতিও দেওয়া যাবে না।
দেওয়ানী আদালতে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনে মামলার পাশাপশি আপনি সালিশের মাধ্যমেও নিষ্পত্তি করতে পারেন। পাশাপাশি ফৌজদারী আদালতেও মামলা দায়ের করতে পারেন। কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি হতে বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা হতে বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ঐ ব্যক্তির প্রবেশ রোধ করার আদেশ প্রদানের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন।এ ধরণের মামলা অল্প সময়ের মধ্যেই নিস্পত্তি হয়ে থাকে। তবে মামলা করার পূর্বে থানায় ঘটনার বিষয়ে একটি জিডি করতে পারেন।
যিনি স্থাবর সম্পত্তি হতে বেদখল হয়েছেন তাকে বেদখল হওয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে দখল পুনরুদ্বারের দাবিতে ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর ঌ ধারার বিধান মোতাবেক মামলা করতে হবে। বাদি যদি সম্পত্তিতে নিজের স্বত্ব (মালিকানা) প্রমাণে সমর্থ নাও হন কেবল বেদখল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দখলে ছিল প্রমাণ করতে পারেন তবেই তিনি তার পক্ষে ডিক্রী পেতে পারেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা মতে প্রদত্ত ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিউ করার কোন বিধান নেই। তবে মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন করা যাবে। আবার ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে মামলা তামাদি দোষে বারিত হবে। তবে তামাদি আইনে দখলচ্যুতির ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা করা যায়। এ ধারা অনুসারে একজন জিম্মাদারও মালিকের স্বাথে সম্পত্তির দখল পাওয়ার জন্যে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।
এ আইনের ৮ ধারানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি দেওয়ানি কার্যবিধি অনুসারে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বেদখলকৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে পারেন। তবে এ ধারানুযায়ী, দখলচ্যূত ব্যক্তিকে ওই ভূমিতে তাঁর স্বত্ব ছিল বা আছে বলে প্রমাণ দিতে হবে, নইলে এ ধারানুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়। ৮ ধারার সংগে ৯ ধারার এখানেই পার্থক্য।
৯ ধারার ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো: বাদী জমিটি ভোগদখল করে আসছিলেন কি-না । বিবাদী তাঁকে জোর পূর্বক বেদখল করেছেন কি-না, বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি-না।
৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এসব প্রতিকারের ক্ষেত্রে মূল্য বাবদ নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন আদালতে মামলা করতে হবে। দখল পুনরুদ্ধার মামলার ক্ষেত্রে, মূলত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারানুযায়ী যেসব মামলা দায়ের করা হয়, সেগুলোকে স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়। এতে অবশ্যই স্বত্ব প্রমাণসহ খাস দখলের ঘোষণা চাইতে হবে। মামলা জবাবে বিবাদী যদি এক বা একাধিক দলিল দাখিল করেন, তাহলে এ ক্ষেত্রে ৩৯ ধারানুযায়ী পৃথক দলিল বাতিলের মোকদ্দমার দরকার পড়ে না। কারণ ৮ ধারাতেই সব বিষয়ে স্বত্ব প্রমাণসহ দখলের ব্যাপারে প্রতিকারে সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শুধু ৪২ ধারা মতে স্বত্ব ঘোষণার মামলাও বাদী করতে পারেন না, কারণ এ ধারা অনুযায়ী দখল উদ্ধার ছাড়া স্বত্ব ঘোষণা চাওয়া যায় না। তবে ৮ ধারায় মোকদ্দমার আরজিতে এবং মামলার রায়ে ৪২ ধারার বিষয়টি অন্তর্নিহিত থাকে। এ ক্ষেত্রে জমির মূল্য বাবদ অ্যাডভ্যালোরেম কোর্ট ফি দিতে হবে।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com