শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
আপনি যদি যৌন কামনা চরিতার্থ করার জন্য কোন নারীর উপর বলপ্রয়োগ করেন বা কোন অঙ্গ স্পর্শ করেন বা ইচ্ছাকৃতভাবে আপনি নিজের যৌনাঙ্গ প্রদর্শণ করেন বা কোন বস্তু দ্বারা যৌন অঙ্গ স্পর্শ করেন তাহলে আপনি যৌন পীড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। একথায় আমাদের সামাজিক রীতিনীতি কিংবা আচার-আচরণের সঙ্গে মানানসই নয়, এমন যে-কোনো ব্যবহার বা আচরণই অশালীন আচরণ।
দন্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, উপরোক্ত অপরাধের শাস্তি দু’ বছরের কারাদ- অথবা জরিমানা অথবা উভয়বিধ দ-। ৫০৯ ধারায় নারীর প্রতি ইভটিজিং বিষয়ে বলাা হয়েছে, সেই ব্যক্তি বিনাশ্রম কারাদন্ডে-যার মেয়াদ এক বৎসর পর্যন্ত হতে পারে বা উভয়বিধ দন্ডে দন্ডিত হবে। স্কুল কলেজগামী মেয়েদের রাস্তাঘাটে দেখে শীষ দেওয়া, গান গেয়ে উঠা, চোখ বাঁকা করে তাকানোসহ যে কোন অঙ্গভঙ্গি এ ধারার আওতাভূক্ত হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ধারা-১০ এ বলা হয়েছে, উক্ত ব্যক্তি অনধিক ১০ বৎসর কিন্তু অনূন্য ৩ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন। তবে কোন মহিলার সম্মতি থাকলে এ ধারায় শাস্তি দেয়া যায় না। (১৯৮২ পিএসসি ৯৬৮)।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা-৯ক এ বলা হয়েছে যে, কোন নারীর সম্মতি ছাড়া বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কোন কার্য দ্বারা সম্ভ্রমহানির প্রত্যক্ষ কারণে কোন নারী আত্মহত্যা করলে তার শাস্তির বিধান এই আইনের ৯ (ক) ধারায় রাখা হয়েছে যা সর্বোচ্চ ১০ বৎসর এবং অন্যূন ৫ বৎসর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে এবং ইহার অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবে।
ঢাকা মহানগরী পুলিশ অধ্যাদেশ, ১৯৭৬, ধারা -৭৬ এ বলা হয়েছে, সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ড অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানাদন্ড অথবা উভয় প্রকার দন্ডে দন্ডনীয় হবে।
এছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৫ ধারায় ‘সর্ব সমাজে অশালীন বা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শাস্তি হিসেবে তিন মাস মেয়াদ পর্যন্ত কারাদন্ড বা ৫০০ শত টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড’- শাস্তির বিধান আছে।
জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ৩৪ অনুচ্ছেদ এ বলা হয়েছে ‘‘অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ সকল প্রকার যৌন নিপীড়ন এবং যৌন নির্যাতন থেকে শিশুকে রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকবে। তা প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ জাতীয়, দ্বিপাক্ষিক এবং বহু পাক্ষিক সকল প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে”। এই অনুচ্ছেদে অশ্লীল যৌন আচরণ বা বিষয়বস্তুতে শিশুদের অপব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে ও পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্রকে আহবান জানানো হয়েছে।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। ই-মেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮