শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা হলে কি করবেন!

স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা হলে কি করবেন!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিকঃ আপনি যদি স্ত্রী কর্তৃক মিথ্যা মামলার শিকার হয়েই যান, তাহলে আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মামলাটি লড়ে যেতে হবে। এজাহারের কপিটি সংগ্রহের চেষ্টা করুন। যদি এমন হয় যে, আপনি জানতে পারলেন না আর হঠাৎ পুলিশ এসে আপনাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে গেল, তাহলে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। তখন আপনার আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। যদি দলিলপত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণ ঠিক থাকে, তাহলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই মিলবে। মামলা থেকে পালিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে আপনার অনুপস্থিতিতেই সাজা হয়ে যেতে পারে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগটির সত্যতা না পেলে আপনাকে নির্দোষ দেখিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেন। জামিন না-হলে পর্যায়ক্রমে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করতে হবে। এছাড়া আপনি মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য আবেদন করতে পারেন। অব্যাহতির আবেদন নাকচ হলে উচ্চ আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন।

মনে রাখতে হবে যদি থানায় মামলা না হয়ে আদালতে সি.আর মামলা হয় তাহলে আদালত সমন দিতে পারেন কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইতে হবে। ক্ষেত্র বিশেষে হাইকোর্ট বিভাগে আগাম জামিন চাইতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি কেউ মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তাহলে তার কি হবে? ‘যৌতুক নিরোধ আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি আপনার স্ত্রী কিংবা স্ত্রীর পরিবারের কেউ আপনাকে ক্ষতিসাধনের ইচ্ছায় মিথ্যা যৌতুকের মামলা করেন কিংবা মামলা করাতে সহায়তা করেন, তাহলে যিনি মিথ্যা মামলা করেছেন বা করতে সহযোগিতা করেছেন তারা প্রত্যেকে ৫ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। তবে এ মামলাটি করতে হবে যখন আপনি মিথ্যা মামলার দায় থেকে বেকসুর খালাস পাবেন। তারপর আদালতে আবেদনের মাধ্যমে মামলাটি করতে হবে।

আর যৌতুক নেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে নিবে বা যারা দিবে তাদের সবারই সাজা হবে। এ জন্য যৌতুক নেওয়ার অপরাধকে বলা হয়েছে জামিন অযোগ্য। যৌতুক নেওয়ার জন্য শাস্তি হবে ১ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ৫০০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডই হতে পারে। ‘যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮’ সালে পাস হওয়া আইনে এ কথাগুলো বলা আছে।

আমাদের জেনে রাখা দরকার যে, যে ব্যক্তি যৌতুক নেওয়া ব্যাপারে সহায়তা করবে তাদেরও একই রকম শাস্তি হবে এবং যে ব্যক্তি যৌতুক দাবি করবে তারও একই রকম শাস্তি হবে। এছাড়া যৌতুক গ্রহণের জন্য যদি কেউ উদ্বুদ্ধ করে বা প্ররোচিত করে বা উৎসাহিত করে সেই ব্যক্তিও যৌতুক নিরোধ আইনের তিন ধারা অনুযায়ী অপরাধী হবে এবং তার শাস্তি হবে।

এবার জেনে নিই আপনার স্ত্রী কেন, কখন, কিভাবে কোথায় মামলা করবেন। আপনার স্ত্রী যৌতুকের শিকার হলে তার কাবিননামাসহ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সরাসরি মামলা করতে পারেন। আবার কাছের থানায় গিয়ে এজাহার করতে পারেন। আর যৌতুকের জন্য মারধরের শিকার হলে আপনার স্ত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে প্রথমে থানায় এজাহার করতে পারেন। এজাহার কোনো কারণে পুলিশ না নিলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রমাণ সহকারে মামলা করতে পারেন। মারধরের শিকার হলে চিকিৎসা সনদ সহকারে মামলা করা উচিত, না হলে মামলা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

যৌতুকের অভিযোগে যে কেবল স্ত্রীই মামলা করতে পারবেন, তা নয়, স্ত্রী যদি আপনার কাছে যৌতুক দাবি করেন, আপনিও স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করতে পারেন। তবে স্ত্রী ভরণপোষণ ও দেনমোহর বাবদ কোনো টাকা দাবি করলে তা যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে না।

এবার জেনে নিই তালাকের পর আপনার স্ত্রী যৌতুক মামলা করলে সে মামলার ফলাফল কি হবে। যৌতুকের অপরাধ প্রমাণ করতে হলে ঘটনার তারিখ থেকে এক বৎসর কাল সময়ের মধ্যে যৌতুকের কেস করতে হবে। উক্ত সময় অতিক্রান্তের পর মামলা রুজু করলে তা সম্পূর্ণ বেআইনী হবে এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ (এ) ধারামতে বাতিল যোগ্য হবে। (১৬ বিএলডি, এডি, ১১৮)। সেকারণ তালাক প্রাপ্তির পর মামলা হলে বাদীপক্ষ থেকে মামলা প্রমাণ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। মনে রাখবেন দ-বিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আপনি নির্দোষ প্রমাণিত হলে মিথ্যা অভিযোগকারী বা মামলা দায়েরকারীর বিরুদ্ধে আপনি পাল্টা মামলা করতে পারেন।

এছাড়া দ-বিধির ১৯১ ও ১৯৩ ধারায় মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদ-সহ অর্থদ-ের কথা উল্লেখ আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ১৭ ধারায়ও মিথ্যা মামলা দায়েরের শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এখানে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই আইনের অন্য কোনো ধারায় মামলা করার জন্য আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন অথবা করান, তবে সেই অভিযোগকারী অনধিক সাত বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-িত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদ-েও দ-িত হবেন।

ফৌজদারী মামলা বিচারের ক্ষেত্রে প্রধান ও মূলনীতি হলো সাক্ষী প্রমান দ্বারা আপনি দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত আদালত আপনাকে নির্দোষ ধরেই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। (৪২ ডিএলআর ৩১, এডি)।

 লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অঅইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel