শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
জমি কেনার আগে জমির মালিকানা যাচাই করার সূত্রগুলো জেনে নিন

জমি কেনার আগে জমির মালিকানা যাচাই করার সূত্রগুলো জেনে নিন

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: আপনি জমি কেনার আগে কিভাবে জমির মালিকানা যাচাই করে নিবেন, কিভাবে প্রতারণার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন, জমির মূল মালিকানার বৈধতা কিভাবে নিরুপন করবেন, জমি কিনে কিভাবে ভবিষ্যত মামলা-মোকদ্দমা থেকে রেহাই পাবেন। সেসব নিয়েই পড়ুন নিচের নিবন্ধটি।

প্রথমেই দলিলের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আপনাকে যেতে হবে এই দলিল যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অধীনে সম্পাদিত হয়েছে সেখানে। আর সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলেই আপনি সম্পত্তির আসল মালিক সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। তবে, যদি উত্তরাধিকার সুত্রে কেউ কোন সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকে তাহলে শুধুমাত্র এই দলিলই যথেষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে পার্টিশন ডিড বা বন্টননামা চেক করে পূর্ববর্তী মালিক সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। এবার জেনে নিই বায়া দলিল সম্পর্কে। অনেকে এটাকে পীঠ দলিল বলে থাকে। এটা হল প্রাক্তন সকল মালিকদের মালিকানা দলিল। আপনি যে সম্পত্তি কিনতে চাচ্ছেন তার পূর্ববর্তী মালিকদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বায়া দলিল থেকে পাওয়া সম্ভব, যা আপনাকে এই সম্পত্তি সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা প্রদান করবে। তাই বায়া দলিল চেক করে নিন মালিকানা বৈধতা নিরসনকল্পে।

জমি যাঁর কাছ থেকে কিনবেন তিনি কীভাবে জমির মালিক হয়েছেন, তা দেখতে হবে। ক্রয়সূত্রে, ওয়ারিশমূলে, দান বা হেবামূলে যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপযুক্ত দলিল যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে যদি কেউ কোনো জমি বিক্রি করতে চান তাহলেও মূল মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাঁর কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। অনেক সময় ভুয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিল তৈরি করে জমি বিক্রির ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। জমি কেনার ক্ষেত্রে সেটা সরকারি মালিকানা বা অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত কি না, অবশ্যই তা যাচাই করে নিতে হবে। আবার অনেক সময় জমি নিয়ে অগ্রক্রয়ের মামলাও হতে পারে। তাই পার্শ্ববর্তী জমির মালিক অগ্রক্রয়ের দাবিদার কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। কোনোভাবে জমিজমা-সংক্রান্ত বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ বা মধ্যস্থতাকারীকে শতভাগ বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। খতিয়ান (রেকর্ড অফ রাইটস), সত্তলিপি বা পরচা হল ভূমি নির্ণয়ের একটি বিশেষ দলিল বা নথি। এই নথির মাধ্যমে কোন জমির মালিকানা, দখল সম্পর্কে ধারণা পাবার পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন কর নিরূপণ করা যায়।

তবে মনে রাখবেন কোন প্রপার্টির মালিকানার বৈধতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এই মিউটেশন খতিয়ান। মিউটেশন খতিয়ানকে অনেকে “নামজারি” হিসেবেও চেনেন। কয়েকটি ভিন্ন কারণে এই নামজারির প্রয়োজন এত বেশি। এসি ল্যান্ড অফিস থেকে মিউটেশনের তিনটি নথি অবশ্যই খতিয়ে দেখে নিতে হবে। প্রথমতঃ নামজারি প্রপোজাল লেটার বা প্রস্তাব পত্র, দ্বিতীয়ত ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ, যাকে সংক্ষেপে ডিসিআর বলা হয়। আর শেষটি হচ্ছে মিউটেশন খতিয়ান। এই ডকুমেন্টগুলো ছাড়া বৈধভাবে কোন প্রপার্টি বা সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর সম্ভব নয়। আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, এন.ও.সি (নো অবজেক্টশন সার্টিফিকেট), এন.ই.সি (নো এনকামব্রেন্স সার্টিফিকেট) জমির বা প্রপার্টি ক্রয়ের পরবর্তী জটিলতা পরিহার করতে চাইলে লেনদেনের পূর্বেই এই দুটি সার্টিফিকেট চেক করে নিতে হবে। এনকামব্রেন্স শব্দটির অর্থ দায়। হয়ত কোন প্রপার্টি বা জমির বিপরীতে কোন দায় আছে যা বিক্রির পূর্বে মালিক উল্লেখ করবেন না। ক্রেতা হিসেবে তাই আপনাকেই সে সকল খোঁজখবর নিয়ে নিতে হবে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে এই সার্ফিটিফিকেট দুটো সংগ্রহ করে রাখলে পরবর্তী যদি আপনি আবার এই সম্পত্তি বিক্রি করতে চান, তখনও তা কাজে লাগবে। এবার আসি জমির খাজনা রশিদ এবং ভাড়ার রশিদ বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি জমির জন্য একটি বাৎসরিক ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। সুতরাং আপডেটেড ভাড়ার রশিদ নিয়ে তা খতিয়ে দেখুন। সঠিকভাবে এটি পরিশোধিত হচ্ছে কী না তা জানতে সংশ্লিষ্ট অফিস ভিজিট করুন। এটি দেখা গুরুত্বপূর্ণ কেননা জমিতে কোন প্রকার ঝামেলা থাকলে এই ভাড়া পরিশোধ করা সম্ভব না। এ

 

ছাড়াও আপনি যদি কোন ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা বিল্ডিং কিনতে চান তাহলে কেনার আগে এই প্রপার্টির প্ল্যান পাশ করা আছে কী না, ঠিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা থেকে অ্যাপ্রুভাল বা অনুমোদন নেয়া আছে কী না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। সম্পত্তির বিপরীতে কোন দায়, মর্টগেজ বা ব্যাংক লোন আছে কী না, তাও গভীরভাবে খতিয়ে দেখুন। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে যাই চেক করে দেখুন না কেন জমি বা প্রপার্টিতে গিয়ে, নিজ চোখে সরোজমিনে প্রত্যক্ষ করে তবেই সিদ্ধান্ত নিন সেই প্রপার্টি সম্পর্কে।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel