রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
জমি-জমা বন্টন কেন, কখন, কিভাবে?

জমি-জমা বন্টন কেন, কখন, কিভাবে?

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
জমি বন্টন বা ভাগবাটোয়ারা সম্পর্কিত যে মামলা আদালতে করা হয় সেগুলো বিভাগ বন্টন মামলা, বাটোয়ারা মামলা, পারটিশান স্যুট বা বিভাগ মামলা নামে অভিহিত। পৈত্রিক সম্পত্তি ওয়ারিশদের মাঝে সমবন্টন না হলে কিংবা ফিতা বন্টন চিহ্নিত না হলে কিংবা জমির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিরোধ হলে কিংবা সম্পত্তি অন্যান্য শরীকরা জোর করে দখলে রাখলে, প্রাপ্য অংশ কম কিংবা প্রাপ্য অংশ দিতে অস্বীকার করলে সাধারণত এ মামলার উদ্ভব হয়।

আইনটি পার্টিশন অ্যাক্ট, ১৮৯৩ নামে পরিচিত। আগেই জানিয়ে রাখি, এ মামলাগুলো রক্তসম্পর্কীয় শরীকদের সাথে বেশী হয়ে থাকে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আপনাদের মাঝে আরও পরিস্কার হয়ে উঠবে। নয়ন আর চয়ন দু’ভাই। তার বাবার মোট ১৪ বিঘা জমি আছে। বাবার মৃত্যুর পর দু’ভাইয়ের মধ্যে এ সম্পত্তি সমভাবে বন্টিত হবে, আইনও তাই বলে। কিন্তু নয়নের ৮ বিঘা আর চয়নের নামে ৬ বিঘা জমি আর.এস রেকর্ডে প্রস্তুত হয়। সে অনুযায়ী তারা জমি ভোগ দখলরত অবস্থায় আছে। এক্ষেত্রে চয়নের যেকোন ওয়ারিশ বাদী হয়ে, নয়ন বা নয়নের যেকোনো ওয়ারিশকে বিবাদী করে সমবন্টনের নিমিত্তে বিভাগ বন্টন মামলা করতে পারে। আদালতের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করে নিলে জটিলতা কম থাকে বলে আদালতে এ মামলার সংখ্যাও বেশী।

আমরা সবাই জানি, সম্পত্তির শরিক দুই ধরনের। এক. উত্তরাধিকার সূত্রে শরিক যা ইংরেজিতে কো-শেয়ারার বাই ইনহেরিটেন্স বলা হয় আর দ্বিতীয়টি খরিদ সূত্রে শরিক যা ইংরেজিতে কো-শেয়ারার বাই পারচেজ বলা হয়। বাটোয়ারা মামলা করার সময় সকল অংশীদারকে মামলায় পক্ষভুক্ত করতে হয়। কোনো একজন শরিক বাদ থাকলে বণ্টননামা শুদ্ধ হয় না। এ মামলা করতে হলে কিন্তু সম্পত্তির মালিকানা সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র যেমন ভূমি জরিপ খতিয়ান, নামজারি খতিয়ান, মালিকানা দলিল, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদির প্রয়োজন হয়।

সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে ভাগবণ্টন করে বণ্টননামা দলিল করে নেয়ায় ভাল। তবে দলিলটি অবশ্যই রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে। কারণ ওয়ারিশি সম্পত্তির নামজারি করতে, বিক্রি করতে, রেকর্ড করাতে, ব্যাংক থেকে লোন করাতে গেলে, ভবিষ্যতে মামলা মেকদ্দমা থেকে বাঁচতে বন্টননামা দলিল রেজিস্ট্রি অবশ্যই দরকার হবে। এ মামলা বিরোধ দেখা দেওয়ার ছয় বছরের মধ্যে আদালতে যেতে হয়। নতুবা তামাদি দোষে বারিত হয়ে যায়। এই মোকদ্দমা চলাকালে কেউ মারা গেলে সেই মৃত ব্যক্তির ওয়ারেশদের মামলায় পক্ষভুক্ত করতে হয়।

বাটোয়ারা মামলা করার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে, সম্পত্তি আগে উইল বা হেবা করা হয়েছে কিনা। যদি হয়ে থাকে তাহলে উইলের ক্ষেত্রে ১/৩ অংশ বাদ দিয়ে কিংবা হেবা করা হলে হেবার দলিলে যে পরিমাণ মালিকানা আছে সেটা বাদ দিয়ে অন্য সহ শরীকের অংশ বের করতে হবে। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, এ মামলায় দুবার ডিক্রি হয়।
প্রাথমিক ডিক্রির পর বণ্টন না করা হলে আদালত অ্যাডভোকেট কমিশনার নিয়োগ করে অংশ নির্ধারণ করে দেন এবং চূড়ান্ত ডিক্রি প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন আদালতের মাধ্যমে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। বণ্টন ডিক্রি পাওয়ার পরও দখল না পেলে কিংবা পক্ষগণ দখল বুঝিয়ে না দিলে কিংবা হিস্যা বুঝিয়ে না দিলে ‘উচ্ছেদের মামলা’ করা যেতে পারে, স্বত্ব দখলের মামলা করা যেতে পারে।

এছাড়া অংশীদারদের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। ভয়-ভীতি-হুমকি ও জীবননাশের আশঙ্কায় আদালতে ফৌজদারি মামলাও করা যায়। এ মামলা করার আগে মনে রাখবেন, বর্তমান রেকর্ড যদি বাদীর নাম বা তার পূর্বসূরীর নামে না থাকে কিংবা খতিয়ানে যেভাবে উল্লেখ আছে তা নালিশী সম্পত্তির সাথে না মিলে থাকে তাহলে বাদীর সত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। সুতরাং সত্ত্বের আবেদন না করে শুধু পার্টিশন মামলা করলে মামলা খারিজ হতে পারে। এ বিষয়ে ১৭ বিএলডি, ১৭৯ পৃষ্ঠায় এ্যাপিল্যাট ডিভিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রয়েছে।

আর পার্টিশন মামলায় বর্তমান রেকর্ডেড মালিককে অবশ্যই পক্ষ করতে হবে কেননা এই পক্ষভুক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অন্যথায় মামলা খারিজ হবে বলে ৩৭ ডিএলআর, ২১৬ পৃষ্ঠায় এ্যাপিল্যাট ডিভিশনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রয়েছে।

তাছাড়া রেকর্ডেড মালিকের পক্ষভুক্তি ছাড়াই যদি মামলার বাদী ডিক্রী প্রাপ্ত হন এবং সেই ডিক্রী রদ করার জন্য রেকর্ডেড মালিক আবেদন করলে উক্ত ডিক্রী বাতিল হবে-এমনটিই আইনে বলা আছে।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। Email: seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

 

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel