এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
আপনার পদ, পদবী, ব্যক্তিগত অধিকার বা সহায় সম্পত্তিতে আপনার আইনগত স্বত্ব বা অধিকার বিঘ্নিত হলে আপনি ঘোষণামূলক মোকদ্দমা বা স্বত্বের মামলা বা ডিক্লারেশন স্যুট দায়ের করতে পারেন। কিন্তু এ মামলা কেন, কখন, কোথায়, কিভাবে করবেন, কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন, মামলায় বিজয়ী হতে কত সময় লাগবে সেসব বিষয়ে আইনী আলোচনা জানুন।
এ মামলার উদ্দেশ্যে হচ্ছে আপনার স্বত্বকে রক্ষা করা। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৪২ ধারায় আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা আছে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ধরুন, আপনার গ্রামের লোকজন পাশ্ববর্তী গ্রামের রহিম মিয়ার জমির উপর দিয়ে একটি পথের অধিকার দাবী করেন। রহিম মিয়া তাতে রাজী নয়। কারণ গ্রামবাসী রহিম মিয়ার ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর এরুপ দাবীর অধিকারী নয়। এই মর্মে ঘোষণা চেয়ে রহিম মিয়া গ্রামবাসীকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করতে পারে। কেননা, রহিম মিয়ার সম্পত্তিতে তার একক অধিকার রয়েছে। কিন্তু রহিম মিয়ার এ অধিকার গ্রামবাসী অস্বীকার করতে চাই।
দুরকমের প্রতিকার চেয়ে আপনি এ মামলা করতে পারেন। ১। রক্ষামূলক এবং ২। প্রতিকারমূলক। ছোট ছোট কয়েকটি উদাহরণ দিলে এ মামলা সম্পর্কে আরও পরিস্কার ধারণা জন্মাবে। ধরুন, সুমি খাতুনকে এস.এস.সি পরীক্ষার হল থেকে বেআইনী উপায়ে এক্্রপেল্ট করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সুমি খাতুন এস.এস.সি পাশ করেছে মর্মে ঘোষণা চেয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুসারে মামলা দায়ের করতে পারবে। এখানে তার আইনগত পরিচয়ের উপর আঘাত আনা হয়েছে। তাই সে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে পারবে।
স্বত্ব ((Title)) কথাটির সহজ অর্থ হল কোন স্থাবর সম্পত্তির উপর কারো মালিকানা। ধরুন, জালাল মিয়া ২০ শতাংশ জমির মালিক। এখন করিম মিয়া যদি এই ২০ শতাংশ জমিতে জালাল মিয়ার স্বত্ব অস্বীকার করে তাহলে জালাল মিয়া রীতিরকম করিম মিয়ার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী ২০ শতাংশ জমিতে জালাল মিয়ার স্বত্ব আছে এই মর্মে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে পারবে। মনে রাখবেন এ মামলায় মূল প্রতিকার ছাড়া অন্যান্য যে সকল প্রতিকার চাওয়া হয় সেটাকে আনুষঙ্গিক প্রতিকার বলে। যেমন স্বত্ব ঘোষণার মামলায় স্বত্ব ঘোষণার সাথে সাথে দখল উদ্ধারের প্রার্থনাও করতে হয়। এখানে স্বত্ব আছে এই মর্মে ঘোষণা চাওয়া মূল প্রতিকার। আর দখল উদ্ধারের প্রার্থনা আনুষঙ্গিক প্রতিকার। তার মানে বাদী যখন সম্পত্তির দখলে থাকবে না তখন বাদীকে আনুষঙ্গিক প্রতিকার হিসেবে দখল উদ্ধারের প্রার্থনাও করতে হয়। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় স্বত্বের মামলায় আনুষঙ্গিক প্রতিকার প্রার্থনা করাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আপনি কোন কোন বিষয়ে এ মামলা দায়ের করতে পারবেন, আসুন সেসব বিষয়ে জেনে নিই। যেমন বিয়ে সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন উপস্থাপন করা হলে এ সংক্রান্ত মামলা করে প্রতিকার পেতে পারেন। ধরুন, সাথী খাতুন আপনাকে স্বামী দাবী করে বসল। কিন্তু আপনি কোনকালেও সাথী খাতুনকে চেনেন না কিংবা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নাই। বাদী বিবাদীকে বিবাহ করেছেন কি-না এই মর্মে দেওয়ানী আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। বাদী এবং বিবাদী স্বামী এবং স্ত্রী কিনা এই মর্মেও ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যায়। আপনি সাথী খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি এই মর্মে আপনি ঘোষণামূলক মামলা দেওয়ানী আদালতে দায়ের করতে পারবেন। মামলার পক্ষগণের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে কিনা এই মর্মেও ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করা যায়। ধর্মীয় কাজ করার অধিকার একটি আইনগত অধিকার। তাই কেউ যদি আপনার ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করে তাহলে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুসারে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। সন্তানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে, কারও ভোটাধিকার বিষয়ে, চাকুরি বিষয়ে, ওহঃবষষবপঃঁধষ ঢ়ৎড়ঢ়বৎঃু বিষয়ে আপনি স্বত্ব ঘোষনা চেয়ে মামলা করতে পারেন।
তবে এ মামলা ৬ বছরের মধ্যে দায়ের করতে হয়। তামাদি আইনের ১২০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ঘোষণামূলক মামলার প্রকৃত কারণ উদ্ভব হওয়ার সময় হতে ৬ বছরের মধ্যে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হয়। সাধারণত ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হলে সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা কোর্ট ফি দিতে হয়। কিন্তু আনুষঙ্গিক প্রতিকারসহ ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করতে হলে মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি প্রদান করতে হয়।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com