শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
দোষস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ভিকটিমের জবানবন্দি পেতে আপনি হকদার কি-না?

দোষস্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ভিকটিমের জবানবন্দি পেতে আপনি হকদার কি-না?

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

কোনো মামলা তদন্ত চলাকালে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির নকল কপি কেন আসামিকে সরবরাহ করা হবে না তা জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে রুল জারি করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট। গত ৯ মার্চ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ হত্যা মামলার আসামির পক্ষে এক আবেদন শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন। এর আগে গত ৪ জুলাই’২০২০ নাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি খুন হন। ওই খুনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় আসামি লিপন পাটোয়ারী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। বিচারিক (নিম্ন) আদালতে আসামির দেয়া জবানবন্দির নকল চেয়ে আবেদন করেন। নিম্ন আদালত উক্ত আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আসামি হাইকোর্টে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১এ ধারায় আবেদন করেন। সেটি শুনানি নিয়ে তদন্ত চলাকালে আসামিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির নকল কপি কেন দেয়া হবে না মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি একটি পাবলিক ডকুমেন্ট। এই দলিল পেতে আসামিপক্ষে কোনো আইনি বাধা-নিষেধ থাকার কথা নয়। পাশাপাশি কোনো মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি থাকলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন শুনানির সময় আদালত এরূপ জবানবন্দি জামিন আবেদনের সাথে দিতে বলেন। তখন জবানবন্দির ফটোকপি পাওয়ার জন্য আসামিকে তদন্তকারী কর্মকর্তার দ্বারস্থ হতে হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে দূর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিতে হয়।
শুধু ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নয়, আসামি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিসহ ভিক্টিমের ২২ ধারার জবানবন্দি ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাবলিক ডকুমেন্ট হওয়ায় পাওয়ার অধিকার রাখে। এ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আইনি আলোচনা হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য অধিকার আইনের ধারা ৪-এ বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকবে এবং নাগরিকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে।’ তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে চারটি পক্ষ জড়িত যথা আবেদনকারী, তথ্য সরবরাহের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আপিল কর্তৃপক্ষ ও তথ্য কমিশন। আইনের অনুচ্ছেদ ৯ (২) অনুযায়ী, আবেদনকারীকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য সরবরাহ করবেন। যদি ওই কর্মকর্তা তথ্য না দেন কিংবা আপিল কর্তৃপক্ষের কাছেও আবেদনকারী প্রত্যাখ্যাত হন, তাহলে তথ্য না পাওয়ার বিষয়ে ২৪ নম্বর সেকশন অনুযায়ী তথ্য কমিশনের কাছে অভিযোগ করা যাবে। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সেকশন ২৫ (১০) আবেদনকারীর অভিযোগ ন্যূনতম ৪৫ দিন এবং সর্বোচ্চ ৭৫ দিনের মধ্যে মীমাংসা করবে তথ্য কমিশন। প্রার্থিত সময়ের মধ্যে তথ্য না দিলে তথ্য কমিশন ধারা ২৭ মোতাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জরিমানা এবং আপিল কর্তৃপক্ষ আইনকে অবমাননা করলে বিভাগীয় শাস্তি বিধানের জন্য কমিশন সুপারিশ করতে পারে। তথ্য অধিকার আইনের এই বিধান ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ পদক্ষেপ।
তথ্য আইন আপিল অভিযোগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোড অব সিভিল প্রসিডিউর এবং আদালতের সমন জারি, কোনো অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তথ্য কমিশনের সামনে উপস্থিত করতে বাধ্য করে ইত্যাদি। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের মাধ্যমে সাক্ষী তলব করা, অভিযোগ সম্পর্কে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জেরা করা, বেসরকারি দলিলপত্র উপস্থাপন করা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আসামীকে সরবরাহ করা যাবে না, এমন কথা ফৌজদারী কার্যবিধির কোথাও বলা নেই। তবে পুলিশ কর্তৃক চার্জশীট দেয়ার আগে অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৬৪ ধারার জবানবন্দি অনুলিপি পেতে পারে না মর্মে ৪ ডি.এল. আর, পেজ ১৩৫ মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে তথ্য অধিকার আইনের প্রথম অধ্যায়ের ৩ (খ) অনুযায়ী তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সাথে সাংঘর্ষিক হলে, এই আইনের বিধানাবালী প্রাধান্য পাবে বলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
সংবাদমাধ্যম খুললেই আমরা দেখতে ও পড়তে পারি যে, অমুক আসামী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং ঘটনার সাথে কারা কারা জড়িত তাদের নামও বলেছে। পুলিশ তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শুধু এতটুকুই নয়, আসামী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে কি কি বলেছে, তার বিস্তারিত বিবরণও জানানো হয়। এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে সহজ উত্তর হয় যে, সংবাদকর্মী তার নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে গোপনে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী ‘সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধে’-ওই সংবাদকর্মীকে অভিযুক্ত করা যাবে। এতে একজন সংবাদকর্মীর ১৪ বছরের জেল ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।
প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা একটি ইতিবাচক সংবাদের অপেক্ষায় থাকি। যেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার পাতায় দেখতে পাবো ‘আইনের সকল সাংঘর্ষিক বিষয় দূর হয়েছে।’ সেদিন আমাদের সংবিধানের শ্বাসত বাণী চিরন্তন রুপ পাবে। শুরু হবে নতুন এক যুগের। সেই নতুন যুগের প্রতীক্ষায়!

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা, আইন গবেষক ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel