বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
রেজিস্ট্রি কাবিননামা না থাকলেও মুসলিম বিয়ে বৈধ হতে পারে!

রেজিস্ট্রি কাবিননামা না থাকলেও মুসলিম বিয়ে বৈধ হতে পারে!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
আইন অনুসারে বিয়ে একটি দেওয়ানী চুক্তি। অন্যান্য চুক্তির মতোই এতে দুটি পক্ষ থাকে। একপক্ষ বিয়ের প্রস্তাব করে ও অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে। ডি এফ মোল্লা তাঁর ‘মুসলিম আইনের মূলনীতি’ বইয়ে বিবাহের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন “বিবাহ বা নিকাহ এমন একটি চুক্তি যার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য হলো বৈধভাবে সন্তান লাভ ও প্রতিপালন। বিচারপতি মাহমুদ তাঁর ‘আঃ কাদির ও সালিসী মোকদ্দমার রায়ে বলেছেন ‘মুসলিম বিবাহ কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, একটি বিশুদ্ধ দেওয়ানী চুক্তি যার উদ্দেশ্য পারিবারিক জীবন যাপন ও বৈধ সন্তান দান।’

১৯৬১ সালে প্রণীত মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী, বিবাহ করতে ইচ্ছুুক পক্ষদ্বয়কে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক-বয়স্কা এবং সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষের বয়স ন্যূনতম ২১ বছর এবং স্ত্রীলোকের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। বিয়ের জন্য ছেলে ও মেয়ের উভয়ের অবশ্যই স্বাধীন সম্মতি থাকতে হবে। বিবাহ করতে ইচ্ছুক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে এক পক্ষকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং অপর পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। প্রস্তাব দান ও গ্রহণ একই মজলিসে কমপক্ষে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন পুরুষ সাক্ষী কিংবা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলা সাক্ষীর সামনে হতে হবে। তবে সাক্ষীগণকে একই মজলিসে হাজির থাকতে হবে। এটিই বিবাহ বন্ধন সংগঠিত হওয়ার মূল শর্ত।

বল প্রয়োগে সম্মতি আদায়ে বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে বলে এ বিষয়ে ২১ ডিএলআর এ ২১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে। তবে হানাফী মাযহাব অনুসারীদের বিয়ের ক্ষেত্রে ২ জন সাক্ষী এবং শিয়া অনুসারীদের মতে বিয়ের ক্ষেত্রে মতে কোন সাক্ষী দরকার নেই। আর বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুসারে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রার দ্বারা অবশ্যই বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করাতে হবে। কাবিননামায় উভয় পক্ষের স্বাক্ষর ছাড়া মুসলিম বিয়ে আইনসম্মত গণ্য করা যায় না বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে, যা ৫০ ডিএলআর ১৮১ পৃষ্টায় উল্লেখ রয়েছে।

বিবাহ রেজিস্ট্র্রেশন ফি দেনমোহরের ওপর নির্ধারণ হয়ে থাকে। দেনমোহরের প্রতি হাজারে বর্তমানে ১২.৫০ টাকা হারে ফি নিকাহ্ রেজিস্ট্র্রাররা সরকার নির্ধারিত রশিদ প্রদানের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকেন। পূর্বে দেনমোহর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফি চার হাজার টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা ছিল। তবে বর্তমানে তা আর প্রযোজ্য নয়। রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দেয়া হলে নিকাহ্ রেজিস্টার একটি প্রাপ্তি রশিদ দিবেন। রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত কাগজ স্বামী ও স্ত্রী দুজনের কাছেই রাখতে হবে। অন্যথায় স্ত্রী সমস্যায় পরলে আদালতের কাছে সাহায্য চাইতে পারবেন না। উল্লেখ্য রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধের দায়িত্ব বরপক্ষের। সরকার সময়ে সময়ে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ফি পরিবর্তন ও ধার্য্য করে থাকে।

বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিবাহের বৈধতার ক্ষেত্রে দলিলগত সাক্ষীর অভাব ঘটে, ফলে বিবাদ নিষ্পত্তি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মৃতের সন্তানদের উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৈধতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর বিরুদ্ধে খোরপোষ ও মোহরানার দাবির মামলা অগ্রাহ্য বলে গণ্য হতে পারে।

আর বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের সময় নিকাহ রেজিষ্টারের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে-সেগুলো হলো ১. বিয়েতে বর-কনের বয়স যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছর হয়েছে কিনা দালিলিক প্রমাণসহ খতিয়ে দেখবেন, ২. উভয়ের সম্মতি আছে কি-না, ৩. দেনমোহর ধার্য্য হয়েছে কি-না, ৪. বিয়ের প্রকৃত সাক্ষী আছে কি-না, ৫. কারো কোন অধিকার খর্ব হয়েছে কি-না ইত্যাদি, ৬। নিকাহনামার প্রতিটি ঘর যথাযথ পূরণ হয়েছে কি-না। তবে তিনি কাবিননামার ১৮ নম্বর ঘরে স্ত্রীকে তালাক প্রদানের (তালাক-ই-তৌফিজের) ক্ষমতা দেয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল করবেন। আর যদি কেউ বিয়ে রেজিষ্ট্রি না করেন তাহলে আইন কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি হচ্ছে দুই বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড অথবা আর্থিক জরিমানা যা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে অথবা উভয় ধরনের শাস্তিই হতে পারে।

যদি কেউ এ আইন অমান্য করেন তাহলে ভূক্তভোগী একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। কারণ একটি বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করলে তার অনেক সুফল পাওয়া যায়। যেমন ১। বিয়ের পক্ষদ্বয় বিয়ে অস্বীকার করতে পারে না এবং পরস্পর পরস্পরের প্রতি কিছু দায়-দায়িত্ব পালনে বাধ্য হয়, ২। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে বা স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ে করলে বা করার উদ্যোগ নিলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন, ৩। স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় করতে পারেন, ৪। স্বামী/স্ত্রী উভয়ে উভয়ের সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকার হতে পারেন, ৫। বিয়ের সময় দেনমোহর ধার্য না হলেও স্ত্রী ন্যায্য দেনমোহর আদায় করতে পারেন। এছাড়া কাবিবনামা প্রমান না হলে বিয়ে প্রমাণিত গণ্য হবে না বলে ৫৭ ডিএলআর এর ৭১৮ পৃষ্টায় উল্লেখ আছে।

তবে রেজিষ্ট্রি কাবিননামা না থাকলেও মুসলিম বিয়ে বৈধ হতে পারে। এ বিষয়ে মমতাজ বেগম বনাম আনোয়ার হোসেন বিখ্যাত মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণে বিষয়টি স্পষ্ঠ করা হয়েছে।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel