সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ! নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের থেকেই ভিসি নিয়োগের অনুরোধ ইবি শিক্ষকদের সংবিধান সংস্কারঃ সংশোধন না-কি পুনর্লিখন?  সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতাঃ আইন কি বলে? ভূমি অধিগ্রহণে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে কী করবেন? ইবির জিওগ্রাফী বিভাগ: শিক্ষার্থীদের কাছে দরখাস্ত দিয়ে পদত্যাগ করলেন সভাপতি যুগে যুগে দালাল সাংবাদিকদের করুন পরিণতি বনাম কিছু শিক্ষনীয় গল্প! তালাকের নোটিশ গ্রহণ না করলেও ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হয়ে যাবে!
আমাদের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার হাল হকিকত!

আমাদের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার হাল হকিকত!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

বহু বছর আগে মার্কিন মানবতাবাদী মার্টিন লুথার কিং লিখেছিলেন, ‘যে কোন জায়গায় অবিচার ঘটলে তা সমস্ত জায়গার বিচারকে হুমকির মুখে ফেলে। ফরাসী দার্শনিক আঁনাতোলে ফ্রান্স লিখেছিলেন, ‘আইন যদি সঠিক হয় তাহলে মানুষও ঠিক হয়ে যায় কিংবা ঠিকভাবে চলে। অপরাধ সংঘটিত হলে বিচার করার জন্য আমাদের আইনের কোন অভাব নাই। অভাব শুধু ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে। আইন নিজস্ব গতিতে না চলে, চলে চালকের গতিতে। আমরা সবাই জানি, একটি ফৌজদারী মামলা শুরু হয় অভিযোগ দাখিলের মধ্যে দিয়ে। তারপর তদন্ত, অভিযোগ গঠন, সাক্ষী শুনানি পার করে আসে রায়। ফৌজদারী মামলার বিচারে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে অপরাধ সন্দেহাতীত প্রমাণ করতে হয়। এ প্রমাণের একটা বড় ফ্যাক্ট হলো ঘটনার তদন্ত। মামলা আদালতে বিচারে গড়ানোর আগেই তার গতিপথ ও ফলাফল অনেকটা নির্ধারণ করে দিতে পারে এ তদন্ত। সেকারণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে রয়েছে স্বাদীন তদন্ত সংস্থা। আমাদের দেশে পুলিশই তদন্ত করে। ‘শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা’ দেয়ার মতো অবস্থা। আর অভিযুক্তের রিমান্ড নিলেই ছাগলের বাচ্চা হয়ে যায় হরিণের বাচ্চা আর বাবর হয়ে যায় যায় জজ মিয়া। এটা যেন তদন্ত সংস্থা নয়, ছাগল, হরিণ ও অদ্ভুদ জীবজন্তু উৎপাদনের হাতিয়ার।

আবার ফৌজদারী মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া আছে পাবলিক প্রসিকিউটার বা সরকারী উকিলের উপর। মামলার কৌঁসুলি চাইলে পুলিশি তদন্তকে টেক্কা দিতে পারে। কিন্তু টেক্কা দিতে হলে তো ঘটে মাল থাকতে হবে! কে না জানে সরকারী উকিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যোগ্যতার মাপকাঠিতে হয় না, তারা নিয়োগ পান তাদের খুঁটির জোরে। কাজেই সে খুঁটি নড়ালে নড়ে, নইলে তারা বসেই জাবর কাটেন। আমি ওকারতি করতে গিয়ে দেখছি কোন কোন মামলার তদন্ত শুরু হয় ঠিকই কিন্তু শেষ হয় না কখনো। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকেও কোন তাড়া থাকে না। সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কথা আইনে থাকলেও বাস্তবে তা অলীক বস্তু। মামলায় তারিখের পর তারিখ পরে, কিন্তু মামলা বিচারে আর উঠে না। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার স্বাধীন বিচারকরা কাঁচ দিয়ে বেষ্টিত লখীন্দরের বাসর ঘরে বসে লিখে যান “দেখিলাম, শুনিলাম, উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনিলাম, দরখাস্ত মঞ্জুর করিলাম।”সেই লেখাগুলোও আবার লেখেন ‘জিআরও, পেশকার কিংবা বিশেষ শ্রেনীর মানুষ’। সেখানে লেখা থাকে আমার বলামতে লিখিত। বিচারক মহোদয় নিছক একখান কলমের খোঁচা দেন আর কি। একটি কমন প্রবাদ আছে, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড। কিন্তু সেই দেরি করেও যদি শেষ পর্যন্ত জাস্টিস হতো তাহলেও তো হতো। শুধু দেরি-ই হয়, জাস্টিস আর হয় না। সাগর-রুনির মামলার তদন্ত শেষ হয় না, তনুর মামলার বিচার শুরু হয় না। আবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী মামলা ফাইলিং করলে তদন্তে পাঠান এমন ব্যক্তিদের কাছে, যাদের এ সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই। যেমন-আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা। একটি তদন্ত রিপোর্ট পাঠাতেই লেগে যায় প্রায় ছ’মাস। এরই মধ্যে বাদীর প্রায় ছ’টি ধার্য্য তারিখে বিনা কারণে আদালতে হাজিরা দিতে হয়, গুনতে হয় কয়েক হাজার টাকা।

সম্প্রতি আরও কিছু অনুসঙ্গ যোগ হয়েছে। সোস্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইন্টারনেট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্্র মিডিয়া। ছোট বড় সব ঘটনাতেই এসব মিডিয়া সরব। সেখানে আছে পক্ষ, বিপক্ষ আর নিরপেক্ষ। এদের বদৌলতে মামলার তদন্ত, শুনানী ও রায় সবই হয়ে যায় ঝড়ের গতিতে। বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি’রা রাতারাতি হয়ে যায় নির্দোষ, পেয়ে যায় অব্যহতি। আবার বিচার ব্যবস্থা মানলে বিবাদীকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দোষ মানতে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের দেশে আসামী প্রভাবশালী হলে হয়ে যায় আনবীর আরাফাত। মিডিয়ার বদৌলতে অনেক সময় ভিকটিম হয়ে যায় আসামী। তদন্ত অনন্তকালেও শেষ হয় না, তদন্ত হলেও জজ মিয়ারা আবিষ্কার হয়ে যায়। বিচারকদেরও পোষ্টিং হয় নিজের বাড়ি থেকে খেয়ে এসে এজলাসে উঠতে, একই কর্মস্থলে ১০ বছর কাটিয়ে দিতে। অন্যদিকে বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতেই কাঁদতে থাকে।

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel