সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ! নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের থেকেই ভিসি নিয়োগের অনুরোধ ইবি শিক্ষকদের সংবিধান সংস্কারঃ সংশোধন না-কি পুনর্লিখন?  সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতাঃ আইন কি বলে? ভূমি অধিগ্রহণে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে কী করবেন? ইবির জিওগ্রাফী বিভাগ: শিক্ষার্থীদের কাছে দরখাস্ত দিয়ে পদত্যাগ করলেন সভাপতি যুগে যুগে দালাল সাংবাদিকদের করুন পরিণতি বনাম কিছু শিক্ষনীয় গল্প! তালাকের নোটিশ গ্রহণ না করলেও ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হয়ে যাবে!
বিয়ে রেজিস্ট্রি না হলে কিভাবে বিয়ে প্রমাণ করবেন?

বিয়ে রেজিস্ট্রি না হলে কিভাবে বিয়ে প্রমাণ করবেন?

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

কেউ যদি আবেগের বশবর্তী হয়ে কিংবা অন্য কোন কারণে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না করে স্বামী-স্ত্রী রুপে সংসার করতে থাকেন। পরবর্তীতে যে কোন পক্ষ থেকে বিয়ে অস্বীকার করলেও বিয়ে প্রমাণ করা যায়। বিয়ের ছবি এবং বর-কনে কিংবা তাদের প্রতিবেশীদের সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে আদালতে কিন্তু বিয়ে প্রমাণ করা যেতে পারে। এছাড়াও স্বামী ও স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলে, দীর্ঘদিন একটানা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করলে, সন্তানকে বাবা বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্যে দিয়েও বিয়ে প্রমাণ করা যায়।

একটি বাস্তব কেইস ষ্টাডি। মমতাজ বেগম ও আনোয়ার হোসেন ইসলামী শরিয়ত মতে বিয়ে করে ঘর-সংসার করতে থাকেন। কিন্তু তাদের মধ্যে বিয়ের কোনো কাবিননামা রেজিস্ট্রি হয়নি। এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেন মমতাজ বেগমের কাছে যৌতুক দাবি করে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মমতাজ বেগম তার ভরণপোষণ এবং দেনমোহর চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। আনোয়ার হোসেন বিয়েকে অস্বীকার করে আদালতে জবাব দাখিল করে করেন। মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ শেষে পারিবারিক আদালত আদেশ দেয়, তাদের মধ্যে বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে। পারিবারিক আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ আনোয়ার হোসেন ১৯৯৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করেন। হাইকোর্ট বিভাগের একটি একক বেঞ্চ ১৯৯৯ সালে পারিবারিক আদালতের আদেশটি খারিজ করে দেন। হাইকোর্ট বিভাগ তার রায়ে বলেন, তাদের মধ্যে কোনো প্রকার কাবিননামা সম্পন্ন হয়নি যা বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং মমতাজ বেগম তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। হাইকোর্ট বিভাগের এ রায়ের বিরুদ্ধে মমতাজ বেগম লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) দায়ের করেন এবং আপিল মঞ্জুর হয় তিনটি বিষয়কে বিবেচনা করে

১. মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রি না হলে এটি বাতিল, অবৈধ বা অস্তিত্বহীন কি-না;
২. তিন বছর ধরে তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করা এবং বসবাসের শর্ত বৈধ বিয়ে হিসেবে গণ্য হবে কি-না;
৩. হাইকোর্ট বিভাগ রিভিশনাল এখতিয়ার প্রয়োগ করে নিম্ন আদালতের আদেশ এবং পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে বৈধ বিয়ের অস্তিত্বের বিষয়ে বিবেচনা করেছেন কি-না।

আপিল বিভাগে মমতাজ বেগমের পক্ষে ২০০৩ সালে আপিলটি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রাবেয়া ভুঁইয়া। সিভিল আপিল নাম্বার-১৩৯/২০০৩। অবশেষে ৩১ জুলাই ২০১১ তারিখে আপিল বিভাগ মমতাজ বেগমের পক্ষে রায় দেয়। মমতাজ বেগম বনাম আনোয়ার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের রায়ে বিচারপতি এস কে সিনহা মন্তব্য করেছেন, মুসলিম নর ও নারী যদি স্বামী ও স্ত্রীর পরিচয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করেন এবং তাদের মধ্যে যদি রেজিস্ট্রিকৃত কাবিননামা না-ও হয়ে থাকে, তাহলেও এখানে বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতে পারে। তারা উভয়ে স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের মধ্যে মুসলিম আইন অনুযায়ী বৈধ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলেও গণ্য হতে পারে। সুতরাং কাবিননামা ছাড়া স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলে বৈধ বিয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতে পারে।

সম্প্রতি কেরালা হাইকোর্টে বিচারপতি সি এস কারনান বিবাহের সংজ্ঞায় যুগান্তকারী ও যুগোপযোগী এক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়ে যদি বিবাহপূর্ব কোনো শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয় এবং একত্রে বসবাস করে সে ক্ষেত্রে এটিকে ‘বিবাহ’ হিসেবে ধরা হবে এবং একত্রে বসবাসকারী ছেলে-মেয়েদের ‘স্বামী-স্ত্রী’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আর যে ক্ষেত্রে বিবাহের কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাওয়া যায় না বা পাওয়ার কোন উপায় নাই, সেইক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবত স্বামী স্ত্রী হিসাবে একত্র বসবাস ও যৌনসঙ্গম এবং সমাজে স্বামী স্ত্রী হিসাবে পরিচিত থাকলে বিবাহ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

আর বিয়ে অস্বীকার করলে আপনি আইনগত প্রতিকার পেতে পারেন। দ-বিধির ৪৯৩ ধারা থেকে ৪৯৮ ধারা পর্যন্ত বিয়ে-সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান প্রণীত হয়েছে, যার অধিকাংশই জামিন-অযোগ্য অপরাধ। কাবিননামা সম্পন্ন না করে বিয়ে করে পরে তা অস্বীকার করলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ দ-বিধির অধীনে ফৌজদারি আদালতেরও আশ্রয় নিতে পারে। দ-বিধির ৪৯৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীকে প্রতারণামূলকভাবে আইনসম্মত বিবাহিত বলে বিশ্বাস করান, কিন্তু আদৌ ওই বিয়ে আইনসম্মতভাবে না হয় এবং ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন, তবে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অথর্দ-ে দ-িত হবে।

বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৪৯৪ ধারায় বলা অছে, যদি কোনো ব্যক্তি এক স্বামী বা এক স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও পুনরায় বিয়ে করেন, তাহলে দায়ী ব্যক্তি সাত বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৪৯৫ ধারায় বলা অছে, যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় বা পরবর্তী বিয়ে করার সময় প্রথম বা পূর্ববর্তী বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন, তা যদি দ্বিতীয় বিবাহিত ব্যক্তি জানতে পারেন, তাহলে অপরাধী ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড দন্ডিত হবেন এবং অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন। তবে জামিন যোগ্য ধারার অপরাধ।

বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৪৯৬ ধারায় বলা অছে, আইনতঃ বিবাহ নয় জেনেও প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিবাহের অনুষ্ঠান উদযাপন করে তাহলে অপরাধী সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- এবং অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। তবে জামিন যোগ্য ধারার অপরাধ।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel