বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
যে কাজগুলো করতে আপনাকে আইনগতভাবে স্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে

যে কাজগুলো করতে আপনাকে আইনগতভাবে স্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। যে কোনো সংসারেই সাবলীল ও মধুর আনন্দ বজায় রাখতে প্রয়োজন দু’জনার ঐকমত্য। স্বামীকে মনে রাখতে হবে, স্ত্রীকে হেয় করে বা তার কথা বা কাজকে অবহেলা করলে কিংবা গুরুত্ব না দিলে হৃদয়ের টান কমতে থাকে, জন্ম নেয় অজানা চাপা ক্ষোভ। যা ভালবাসার দূর্গে আঘাত হানতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে একেবারেই স্বামী স্ত্রীর অমতে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যদি একতরফা সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে রয়েছে শাস্তির ব্যবস্থা। এবার জেনে নেয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে স্ত্রীর অমতে স্বামী সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

দেনমোহর, ভরণপোষণ ও সন্তানের অধিকার:
দেনমোহর ও ভরণপোষণ স্ত্রীর অধিকার। এ দুটো থেকে স্ত্রীকে কখনও বঞ্চিত করা যাবে না। ‘সহবাসের আগে এবং পরে স্ত্রী স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করতে পারে এবং স্বামী পরিশোধে ব্যর্থ হলে স্ত্রী সহবাসে যেতে অস্বীকার করতে পারেন।’ (মাহমুদা খাতুন বনাম আবু সাইদ ২১ ডি.এল.আর)। এ অজুহাতে স্বামী স্ত্রী থেকে দূরে অবস্থান করলেও তা পরিশোধে বাধ্য। (১১ ডি. এল. আর. পৃষ্ঠা ১২৪)। স্ত্রী যতদিন তার স্বামীর আস্থাভাজন থাকবে ও স্বামীর ন্যায় সঙ্গত আদেশ পালন করবে, ততদিন স্বামী স্ত্রীকে ভরনপোষন দিবে। তবে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে স্ত্রী আলাদা বসবাস করলে স্বামী ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। (মোঃ ইব্রাহিম হোসেন সরকার বনাম মোসা. সোলেমান্নেসা (১৯৬৭, ১৯ ডি এল আর পৃষ্ঠা ৭৫১)।

“ধনী ব্যক্তির ওপর তার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং গরীব ব্যক্তির ওপর তার সামর্থ্য অনুযায়ী ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা কর্তব্য।” সূরা আল বাকারাঃ ২৩৬

এছাড়া কোনোভাবে বিয়ে বলবৎ থাকুক আর না থাকুক, বৈধ কারণ ছাড়া সন্তানকে কাছে রাখা থেকেও বঞ্চিত করা যায় না। তবে আবু বকর সিদ্দিকী বনাম এস এম এ বকর ৩৮ ডি এল আর এর মামলায় এই নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, যদি আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, সন্তান মায়ের হেফাজতে থাকলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ স্বাভাবিক হবে, সন্তানের কল্যাণ হবে এবং স্বার্থ রক্ষা হবে- সেক্ষেত্রে আদালত মাকে ওই বয়সের পরেও সন্তানের জিম্মাদার নিয়োগ করতে পারেন।

জমি-জমা টাকা-পয়সা বিষয়েঃ
স্ত্রীর নামে যদি কোনো জমি-জমা থাকে, তবে তার অনুমতি ব্যতিরেকে এ সম্পত্তি বিক্রয় করা যাবে না। যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে অনুমতি দেয় কিংবা বিক্রয়ের ক্ষমতা প্রদান করে থাকে (আমমোক্তারের মাধ্যমে), সে ক্ষেত্রে কেবল সম্ভব। তবে আমমোক্তার অবশ্যই আইন অনুযায়ী সম্পাদন করতে হবে। এছাড়া স্বামী স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বা সম্মতি ছাড়া পুরো সম্পত্তি উইল করতে পারবেন না। কারণ, স্ত্রী হচ্ছেন তাঁর উত্তরাধিকার। স্ত্রীর নামে কোনো ব্যাংক হিসাব খুললে এবং তাতে টাকা জমা রাখলে কিংবা সঞ্চয়পত্র খুললে তা স্বামী চালু করলেও স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া এবং স্ত্রী ছাড়া স্বামী তা থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন না। স্ত্রী হচ্ছেন সেই সম্পত্তির মালিক। হিসাবটি স্ত্রীর নামে খোলা হয়েছে। স্ত্রীকে কোনো কিছু উপহার দিলে তা স্ত্রীরই সম্পত্তি। তাঁর অমতে তা সরিয়ে নেওয়া যায় না। যেমন স্ত্রীকে যদি কোনো স্বর্ণালংকার দিলে তা স্ত্রীরই সম্পত্তি। স্ত্রীর নামে ফ্ল্যাট বা জমি কেনা হলে তা তাঁর সম্পত্তি। স্ত্রী ছাড়া কেউ তা হস্তান্তর করতে পারবে না।

স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিরেকে বিয়ে
আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী সম্মতি না দিলে তা কোনোভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। স্ত্রীর অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করলে তা আইনত দ-নীয় অপরাধ হবে। তবে কারও যদি স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে তাঁর বর্তমান স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করছেন, সেই এলাকার সালিসি পরিষদের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে। সালিসি পরিষদে যদি বর্তমান স্ত্রী অনুমতি প্রদান না করেন, তাহলে কোনোভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না।

সালিস পরিষদ এবং স্ত্রীর অমতে বিয়ে করলে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সৃষ্টি হয়। আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দ- হতে পারে। আবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যদি আগের বিয়ের কথা গোপন করেন, তাহলেও দ-বিধি অনুযায়ী কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিরেকে দীর্ঘদিন বাইরে অবস্থান করা
কোন ন্যায়সংগত কারণ ছাড়াই স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিত দীর্ঘদিন বাইরে থাকা যাবে না। এর জন্য ইসলামী বিধান সর্বোচ্চ চার মাসের সময়সীমা বেধে দিয়েছে। স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে এ সময়ের মধ্যে সে তার স্ত্রীর সাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্থাপন করে নিবে।

“যারা নিজেদের স্ত্রীদের কাছে না যাওয়ার শপথ করে, তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে। যদি তারা এ থেকে প্রত্যাবর্তন করে তাহলে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। আর যদি তারা তালাক দেয়ারই সংকল্প করে, তাহলে আল্লাহ সবকিছুই শোনেন ও জানেন।” (সূরা আল বাকারাঃ ২২৬-২২৭)

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel