এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
আমরা গাড়ি কেনা-বেচা করে থাকি। বিশেষ করে দাম ও সহজলভ্যতার কারণে পুরনো গাড়ি বেশী কেনা-বেচা করে থাকি। এতে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন অত্যবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। নতুবা দু’পক্ষকেই চরম খেসারত দিতে হয়। ধরুন, আপনার বিক্রিত গাড়িটি নিয়ে ক্রেতা সড়ক দূর্ঘটনায় কাউকে চাপা দিয়ে হত্যা করল। পুলিশ গাড়িটি জব্দ করলো। সড়ক পরিবহন আইনে মামলা হলো। পুলিশ ও বিচার ব্যবস্থা দেখবে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন কার নামে, তখন আপনি কিন্তু ফেসে গেলেন। আবার আপনি যার কাছ থেকে গাড়িটি কিনেছেন, দাম পরিশোধ করেছেন কিন্তু গাড়িটি নিজ নামে রেজিস্ট্রেশন করেন নাই, এমতাবস্থায় বিক্রেতা যদি আপনার নামে গাড়ি চুরির মামলা করেন কিংবা গাড়ি উদ্ধারে সার্চ ওয়ারেন্ট করেন; তাহলে আপনি ফেসে যেতে পারেন। এরকম নানাবিধ সমস্যা এড়াতে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন ও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সবার জন্য অত্যাবশ্যক। গাড়িটি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় শুরুতেই বিক্রেতা হিসেবে আপনি দুইশত টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে গাড়িটি আপনি কত টাকায় কেন বিক্রি করলেন এবং বিক্রিত গাড়িটির তফসিলসহ আপনার কিংবা আপনার ওয়ারেশদের অদ্য হতে কোনপ্রকার দায়-দাবী রইল না, সেসকল বিষয়গুলো উল্লেখ করে একটি হলফনামা সম্পাদন করুন। অনুরুপভাবে ক্রেতা হিসেবেও আপনি দুইশত টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে গাড়িটি আপনি কত টাকায় ক্রয় করলেন এবং ক্রয়কৃত গাড়িটির তফসিলসহ বিক্রেতার কিংবা বিক্রেতার ওয়ারেশদের অদ্য হতে কোনপ্রকার দায়-দাবী রইল না, সেসকল বিষয়গুলো উল্লেখ করে একটি হলফনামা সম্পাদন করুন। উভয় হলফনামাটি একজন নোটারী পাবলিক আইনজীবী কিংবা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে প্রামানীকরণ করে নিতে হবে। তবে দুটি হলফনামাতে স্ব স্ব ব্যক্তির ছবি সংযুক্ত করতে হবে। এরপর ক্রেতা হিসেবে ট্যান্সফার অব অনারশিপ ফর্ম যেটা টিও ফর্ম নামে পরিচিত আর-সেটা সংগ্রহ করুন। যা আপনি বিআরটিএ অফিস কিংবা বিআরটিএ ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে ক্রেতার নমুনা স্বাক্ষর করে নিন। গাড়ির মালিকানা পরিবর্তনের জন্য বাংকের কর্মকরতার কাছে ব্লু বুকের কপি জমা দিয়ে ফি জমা দেয়ার রশিদ নিতে হবে। রশিদের মূলকপি, ক্রেতার টিন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, বর্তমান ঠিকানা, ফোন বা বিদ্যৎ বিলের সত্যায়িত ফটোকপি ইত্যাদি বিআরটিএ তে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি গাড়ির মূল রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, নতুন ট্যাক্স টোকেনের সত্যায়িত কপি ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে। ক্রেতা যদি ব্যক্তিগত ব্যাবহারের জন্য গাড়িটি ক্রয় করে তাহলে সাধারন ফর্ম আর ক্রেতা যদি প্রাতিষ্ঠানিক কাজে গাড়ি ব্যাবহার করে তাহলে অফিসিয়াল প্যাডে চিঠি প্রদান করতে হবে। সাথে হলফনামার কপিটিও জমা দিতে হবে। দাখিল করার সময় সবকিছু ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হবে। নির্দিষ্ট নমুনা স্বাক্ষর ফর্মে ক্রেতার নমুনা স্বাক্ষর ও ৩ কপি রঙিন স্ট্যাম্প সাইজ ছবি দিতে হবে। মনে রাখবেন মালিকানা পরিবর্তনের জন্য বিআরটিএ অফিসে অবশ্যই গাড়িটি নিয়ে যেতে হবে। একজন মোটরযান পরিদর্শক এসে আপনার গাড়িটি দেখে একটি সিল মেরে দিবে এবং কাগজে সাইন করে দিবে। সেখান থেকে একটি স্লিপ দিবে এবং পরবর্তীতে কবে বিআরটিএ অফিসে উপস্থিত হতে হবে জানিয়ে দেয়া হবে। স্বাক্ষর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার স্বাক্ষরে অমিল থাকবে তাকে বিআরটিএর অফিসে স্বশরীরে আসতে হবে। এজন্য বিক্রেতাকে সবসময় সাথে নিয়ে গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন করার কাজটি শেষ করা উচিৎ। তবে কোনো কারণে ক্রেতা উপস্থিত না থাকলে বিআরটিএ এডির রুমে গিয়ে বিক্রেতার অনুপস্থিতির কারণ এবং ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে কারণগুলো লিখে নোটারি করিয়ে জমা দিতে হবে। অনুরুপভাবে বিক্রেতা হিসেবেও টিটিও ফর্মে ও রাজস্ব স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে হবে। সাথে ২০০ টাকার নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে সম্পাদিত হলফনামাটিও দাখিল করতে হবে। বিক্রেতা সাধারন হলে সাধারন চিঠি কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক হলে অবশ্যই কোম্পানির হেড প্যাডে ইণ্টিমেশন, বোর্ড রেজুলেশন, অথরাইজেশনপত্র প্রদান করতে হবে। গাড়িটি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কেনা হয় তাহলে অবশ্যই সেই ঋণ আগে পরিশোধ করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত ছাড়পত্র, লোন এডজাস্টমেণ্ট স্টেটমেন্ট এবং ব্যাংক কর্তৃক সহকারী পরিচালক বিআরটিএ বরাবর অনুরোধপত্র যা ২০০ টাকার নন জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করতে হবে। আর গাড়িটি যদি ওয়ারেশদের কাছ থেকে কিনতে হয় তাহলে একাধিক ওয়ারিশ হলে টিন সার্টিফিকেট, মূল রেজিস্ট্রেশন সনদ, ওয়ারিশদের সবার স্বাক্ষর ও সবার ছবি সহ নন-জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে একটি হলফনামা প্রদান করতে হবে। মোটর সাইকেল মালিকানা বদলীর ক্ষেত্রে ১০০ সিসি পর্যন্ত ২১২৮ টাকা মালিকানা বদলী ফিস দিতে হয়। ২০০ সিসির জন্য দিতে হয় ২৬৬৫ টাকা। ২২৬০ টাকা দিতে ডিজিটাল নম্বর প্লেটের জন্য আর ৫৫৫ টাকা দিতে হয় ডিজিটাল ব্লু বুক এর জন্য।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইল: seraj.pramanik@gmail.com
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com