রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
উভয়ের সম্মতিতে সহবাস ধর্ষণ নয়!

উভয়ের সম্মতিতে সহবাস ধর্ষণ নয়!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

অনেক নারী তার প্রেমিকের বিরুদ্ধে থানা কিংবা কোর্টে গিয়ে এই মর্মে মামলা করেন যে, তার প্রেমিক পুরুষ তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছে। একাধিকবার বিয়ের প্রলোভনে তারা দুজনে যৌনসঙ্গমে আবদ্ধ হয়েছেন। সর্বশেষ একটি তারিখ দেখিয়ে নারী প্রেমিকা বলেন যে, অমুক তারিখে বিয়ের প্রলোভনে জোর করে সহবাসে লিপ্ত হন।

‘বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ’ এ ধরণের মামলা আসলে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে দাবী করা যায় না। কারণ মুসলিম ম্যারেজ কিন্তু একটি সিভিল কন্ট্যাক্ট। ১৮ বছরের অধিক বয়সী যে কোন নারী নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে, বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে বা গ্রহণ করতে পারে। কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে বিয়ের কথা দিয়ে কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেটি লঙ্ঘন করলে সেটা হবে বিবাহ চুক্তির লঙ্ঘন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি কিন্তু সাক্ষীর সম্মুখে হতে হবে। কাজেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হবে সিভিল ট্রানজেকশন, মোটেই ধর্ষণের অপরাধ নয়।

আমাদের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় ধর্ষণের ব্যাখায় বলা হয়েছে যে, কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ছাড়া ষোল বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে অথবা ষোল বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন। ব্যাখ্যায় বড় জোর প্রতারণা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, মোটেই প্রলোভন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। প্রতারণা শব্দটিও এ আইনে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। আবছা আবছা ধারণামূলক কোন জিনিস দিয়ে অপরাধকে শাস্তিযোগ্য করা যায় না। প্রলোভন শব্দটির ব্যাখ্যা হচ্ছে, কাউকে ভাল চাকুরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা পয়সা নিতে বা দিতে উদ্বুদ্ধ করা, প্ররোচিত করা, কারো মনে বিশ্বাস জন্মিয়ে তাকে দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নেয়া কিংবা স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করা-সেগুলো হবে ‘প্রলোভিত’ করা।

আবার আমাদের ১৮৭২ সালের চুক্তি আইনে ‘ফ্রড’ এর সংজ্ঞার সাথে প্রেমিকাদের অর্থাৎ ভিকটিমের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। সেটা হচ্ছে সত্য নয় জেনেও সেটাকে সত্য বলে দাবী করা কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পালন না করা অথবা অন্য কোনভাবে প্রতারিত করা। তবে এটি হতে হবে অবশ্যই কোন চুক্তির পক্ষদের মধ্যে। এক্ষেত্রে মুসলিম ম্যারেজের দুটি পক্ষ থাকে এবং সেই পক্ষের কেউ যদি প্রতিশ্রুতি কিংবা কনট্যাক্ট ভঙ্গ করে তাহলে সেটি হবে সিভিল রং অর্থাৎ দেওয়ানী প্রকৃতির ভুল। এর জন্য ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ বড়জোড় ক্ষতিপূরণ পেতে পারে। আর মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে ভিকটিম দন্ডবিধি আইনে ৪১৭ ধারায় চিটিং এর অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করতে পারে। কিন্তু ষোল বছরের অধিক বয়সের মেয়ের পক্ষে দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় এ ধরণের উপাদান খুঁজে পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে এ ধরণের পিটিশন মামলার ক্ষেত্রে ট্রাইবুন্যালের বিচারকবৃন্দ যদি ভিকটিমকে ২৭ ধারায় একটু ভালভাবে পরীক্ষা করেন, তাহলে এ ধরণের মামলার সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে ধর্ষণের অপরাধে কোন পুরুষকে শাস্তি প্রদান করতে হলে কেবলমাত্র নারীর বক্তব্য তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করা হয়েছে এরূপ ভাষা গ্রহণ সঠিক নয়। ওই নারীর বক্তব্য অবশ্য অপরাপর সাক্ষীর মাধ্যমে সমর্থিত হবে, যা ১৫ ডিএলআর এর ১৫৫ পাতায় রিপোর্টেড রয়েছে। আর অভিযুক্তের সাথে কথিত ধর্ষিতা প্রাপ্ত বয়স্ক নারী যখন যৌন সঙ্গমে অভ্যস্ত বলে প্রমাণ পাওয়া যায় এবং উক্ত নারী যৌন সঙ্গমে কোন প্রকার বাঁধা প্রদান করেননি বা বাঁধা প্রদানের চেষ্টাও করেননি অথবা কোন প্রকার চিৎকার দেননি তখন কথিত ধর্ষিতা একজন যৌন সঙ্গমে ইচ্ছুক অংশীদার হওয়ায় তা ধর্ষণের অপরাধ বলে গণ্য হবে না বলে উচ্চ আদালত অভিমত প্রকাশ করেছেন। যা ৫৭ ডিএলআর ৫৯১পৃষ্ঠায় রিপোর্টেড রয়েছে।

আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট হানিফ সেখ বনাম আছিয়া বেগম মামলা, যা ৫১ ডিএলআরের ১২৯ পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ১৬ বছরের অধিক কোনো মেয়েকে যদি কোনো পুরুষ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে যৌনকর্ম করে তা হলে তা ধর্ষণের নামান্তর হবে না। মোটকথা, কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ যখন জেনে-বুঝে কোনো শারীরিক সম্পর্কে জড়াবেন তখন পরবর্তীতে সেই সম্পর্ককে ‘ধর্ষণ’ হিসেবে আদালতের কাছে প্রমাণ করা কঠিন হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের দায়ে উপরের আলোচনা অনুযায়ী বড় জোর প্রতারণার মামলা চলতে পারে।

তবে ভিকটিম যদি ১৪ বছরের কম বয়সী হয়, তাহলে সেটিকে ‘ধর্ষণ’ বলা হবে। কারণ এই বয়সী মেয়ে সম্মতি দেয়ার মতো সক্ষমতা রাখে না বলে আইন মনে করে। কাজেই কোন প্রেমিক পুরুষ যদি এ ধরণের মামলার শিকার হন, ভয় না পেয়ে মামলায় লড়ে যান, জয় আপনার অবশ্যম্ভাবী।

লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮, ইমেইলঃseraj.pramanik@gmail.com, তাং- ৪.২.২০২১

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel