শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
নারীর যৌনাঙ্গ পরীক্ষায় বাধ্যগত আইন বনাম কপালে টিপ পরার স্বাধীনতা!

নারীর যৌনাঙ্গ পরীক্ষায় বাধ্যগত আইন বনাম কপালে টিপ পরার স্বাধীনতা!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
কপালে টিপ পরায় ঢাকার রাস্তায় হয়রানির শিকার হয়েছেন লতা সমাদ্দার নামে একজন শিক্ষিকা। এ নিয়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে, ফেসবুকের দেয়ালে। নারীরা টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানালেও পুরুষেরাও থেমে নেই। পুরুষেরাও টিপ পরা ছবি দিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। জেগে উঠেছে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা এনজিও, বিভিন্ন সংগঠন, প্রগতিশীল, বাম, ডান নানা শ্রেনী পেশার মানুষ। আন্দোলনকারীরা বলছেন, টিপ পরা আমার স্বাধীনতা।
এইতো সেদিনের কথা। ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের কলকাতা শহরে সুখীমণি রাউর নামে এক নারীর কারাদণ্ড দেয়া হলো। তার অপরাধ তিনি তার যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করাতে অস্বীকার করেছিলেন। সে সময় নিবন্ধিত যৌনকর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক একটি আইন ছিল যে তার যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করাতে হবে। সুখীমণি সেই আইন লঙ্ঘন করেছিলেন, কারণ তার দাবি ছিল – তিনি যৌনকর্মী নন। ঔপনিবেশিক যুগের দলিলপত্র ঘেঁটে স্পষ্টই দেখা যায় যে, সেসময় হাজার হাজার নারীকে তাদের যৌনাঙ্গ পরীক্ষার মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম লংঘনের অভিযোগে সে যুগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এ থেকে বোঝা যায়, কীভাবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এবং ভারতের বুদ্ধিজীবীরা আধুনিক ভারতের সমাজকে নিয়ন্ত্রণ ও সংগঠিত করতে নারীদের যৌন বিচ্যুতির ধারণা গড়ে তুলেছিলেন। যারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ত তাদেরকে ডাক্তার ও তার অধীনস্থ লোকদের কাছে নিজেদের উলঙ্গ করতে হতো। ১৮৭০ থেকে ১৮৮৮ সালের মধ্যে এই আইন লংঘনের জন্য শুধু কলকাতাতেই দৈনিক ১২ জন নারীকে গ্রেফতার করা হতো। নজরদারির ব্যাপারটা টের পেলে অনেক নারীই শহর থেকে পালিয়ে যেতেন। নারীদের প্রতিবাদ অব্যহত থাকলেও আইন বিশেষজ্ঞরা বললেন যে, যৌনাঙ্গ পরীক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে করা না হলে ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মিথ্যা অভিযোগ বেড়ে যাবে। আরেকজন যুক্তি দেন যে, মেয়েদের সম্মতি নিতে হলে তা বিচার প্রক্রিয়াকে পঙ্গু করে দেবে। ঔপনিবেশিক ভারতে শুধু যে যৌনকর্মীদেরই যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করানো হতো তা নয়, বরং খোজা বা হিজড়াদেরও ১৮৭১ সালের একটি বিতর্কিত আইনের অধীনে যৌনাঙ্গ পরীক্ষা করানো হতো। শুধু তাই নয়, ‘নিম্নবর্ণের সকল নারীই সম্ভাব্য যৌনকর্মী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ঔপনিবেশিক ভারতের এক লজ্জাজনক অধ্যায় বলে মনে করা হয় এই আইনকে। অথচ পুরুষদের যৌন আচরণ রাষ্ট্রের আওতার সম্পূর্ণ বাইরে রাখা হয়।
সংক্রামক ব্যাধি আইন নামে ওই আইনের বিধান ছিল যে, যৌনকর্মীদের থানায় গিয়ে নিজেদেরে নিবন্ধন করাতে হবে, তাদের ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে এবং পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকতে হবে। সুখীমণি রাউর সেই আইনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি আদালতে আবেদন করলেন তাকে মুক্তি দেবার দাবি জানিয়ে। তিনি আদালতে বললেন “আমি যৌনকর্মী ছিলাম না, তাই আমি এক মাসে দুবার সেই পরীক্ষা করাতে যাইনি। ” শেষ পর্যন্ত ১৮৬৯ সালের মার্চ মাসে কলকাতা হাইকোর্ট সুখীমণির পক্ষে রায় দেন। বিচারকরা রায়ে বলেন, সুখীমণি রাউর একজন ‘নিবন্ধিত গণ যৌনকর্মী ছিলেন না’। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, যৌনকর্মী হিসেবে নিবন্ধন হতে হবে স্বেচ্ছামূলক, অর্থাৎ নিবন্ধন করানোর জন্য কারো ওপর জোর খাটানো যাবে না।
পেশা হিসেবে যৌনকর্ম ভাল, না মন্দ, গ্রহণযোগ্য, না অগ্রহণযোগ্য, স্বীকৃতিযোগ্য, না পরিত্যাজ্য, কতটুকু স্বাস্থ্যকর, না ক্ষতিকর-আমি এসব দিকে যাচ্ছি না। তাহলে আমরা চাইছি কী? করছিই বা কী? চাওয়া এবং পাওয়ার ভেতর কোন ফাঁক-ফোঁকর থাকছেনা তো? যা কিছুই করেছি বা করছি সুস্পষ্টতা থাকছে তো? পাঠকের কাছে প্রশ্ন।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel