এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: থানা কিংবা কোর্টে যে কোন পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার বা হাজতবাসে কারণে সাময়িক বরখাস্তের প্রথা চালু রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৩ এর পার্ট ১, বিধি ৭৩ এর নোট ১ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ অধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এ বিধিটি সংবিধান ও ফৌজদারী কার্যবিধির সাথে সাংঘর্ষিক। ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত সরকারি কর্মচারীর গ্রেফতার বা হাজতবাসে কারণে সাময়িক বরখাস্তের বিধান কেন অসাংবিধানিক নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন মহামন্য হাইকোর্ট। ৬ এপ্রিল’২০২২ বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
২০১০ সালের সদরপুর থানার একটি ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় তিন মাস হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হন শিক্ষক এম.এ.আজিজ খান। তিনি ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানার চর চাঁদপুর নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ছিলেন। উক্ত মামলায় হাজতবাসের কারণে ২০১৩ সালে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং নিয়মানুযায়ী তিনি খোরপোষ ভাতা পেয়ে আসছিলেন। দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত ফৌজদারি মামলা চলমান থাকায় তাহার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ চলমান রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৩, পার্ট ১, বিধি ৭৩ এর নোট ২, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং আবেদনকারীর মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী দাবী করে মহামন্য হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করা হয়। একই সাথে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না মর্মে রিট আবেদনে প্রার্থনা করা হয়। রিটে শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ডেপুটি পরিচালক (ঢাকা বিভাগ), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদপুর, উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, সদরপুর এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার সদরপুরকে বিবাদী করা হয়েছে।
আমরা সবাই জানি, কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করা আইন বিজ্ঞানের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক। শুধু তাই নয়, ফৌজদারী মামলা বিচারের ক্ষেত্রে প্রধান ও মূলনীতি হলো সাক্ষী প্রমান দ্বারা আপনি দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত আদালত আপনাকে নির্দোষ ধরেই বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। (৪২ ডিএলআর ৩১, এডি)।
সরকারী চাকুরী বিধি, ১৯৭৩ এর ওই অংশটি আমাদের পবিত্র সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত চাকুরির অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক। এ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতার কথা বলা আছে। এছাড়াও বিভাগীয় কোনো কার্য ধারা গ্রহণ ব্যতীত অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবেদনকারীকে সাময়িক বরখাস্তের অধীন রাখা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩১ এবং ৩২ এর পরিপন্থী। একইসাথে এই বিধানটি নিপিড়নমূলক এবং ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহে, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৩, পার্ট ১, বিধি ৭৩ এর নোট ২, কেন সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এবং বাতিল ঘোষণা করা হবেনা এবং আবেদনকারীর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এ রুল নিস্পত্তি ও বাংলাদেশ সরকারি চাকুরি বিধি ১৯৭৩ এর ওই অংশটি বাতিল হলে সংবিধানের বানী চিরন্তন রুপ পাবে, শুরু হবে হবে নতুন এক যুগের।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। ০১৭১৬৮৫৬৭২৮।
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com