শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
চেকের মামলায় আর জেল নয়!

চেকের মামলায় আর জেল নয়!

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:
চেকের মামলার আসামীদের জন্য একটি সুসংবাদ রয়েছে। চেকের মামলায় আসামীদের জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী, সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট এরকম একটি রায় দিয়েছেন। কিন্তু সেই রায়টি কতটুকু বাস্তবায়ন হতে চলেছে কিংবা বাস্তবায়ন হতে কত সময় লাগবে, আসামী ও বাদীর জন্য কতটুকু সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ রয়েছে সেই সম্পর্কিত আইনী আলোচনা জানুন।

চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো আমাদের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী বলে পর্যবেক্ষণ দিয়ে হাইকোর্টের ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর’২০২২ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রায়ের ৫৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করে গত ২৮ আগস্ট’২০২২ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো ব্যক্তিকে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থী। কাজেই চেকের মামলায় কারাগারে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের নামান্তর। আদালত এন.আই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া এন.আই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি গাইড লাইন করে দিয়েছেন। হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো, কারাগারে রাখা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এবং ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের অনুচ্ছেদ ১১ এর পরিপন্থী। বাংলাদেশ-এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠাতে পারে না। আদালত উন্নত বিশ্বের উদাহরণ টেনে বলেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজঅনারের মামলাগুলোকে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ এনআই এ্যাক্ট ১৯৯৪ সালে প্যানেল কোড সংযোজনের মাধ্যমে আধা-ফৌজদারি হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। আদালত পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, চুক্তিগত দ্বায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তিগত দ্বায়-দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি কারাগারে পাঠানো হয় তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। এটা কারো কাম্য নয়। আদালত মনে করেন, এন.আই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারা দ্রুত সংশোধন করে কারাগারে পাঠানোর বিধান বাতিল করা আবশ্যক। আদালত প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, জাতীয় সংসদ অতি দ্রুত এনআই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। আদালত বলেন, মহান জাতীয় সংসদ যতদিন না ১৩৮ ধারার সংশোধন না করেন বা সংশোধনী না আনা হয়, ততদিন পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা আপসযোগ্য হবে। চেক ডিজঅনারের মামলা বিচারের এখতিয়ার সম্পন্ন দেশের সব আদালতে সাজার পরিবর্তে তিনগুণ পর্যন্ত জরিমানা দিতে পারবে।
কিন্তু আসামীদের জন্য দুঃখের সংবাদ এই যে, এতক্ষণ আপনাদের পক্ষে যা কিছু বললাম সেই হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর’২০২২ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১৪ নভেম্বর’২০২২ ইং তারিখ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এ দিনের রায়ের মধ্যে দিয়ে চেক ডিসঅনার মামলার জেল ও জরিমানা সংক্রান্ত বিতর্কের অবসান ঘটবে। ততদিন পর্যন্ত পূর্বের ন্যায় জেল, জরিমানার ব্যবস্থা থাকবে।
লেখকঃ আইনের শিক্ষক, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ইমেইল:seraj.pramanik@gmail.com,  মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮

 

 

 

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel