বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক: অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট-১৯২৩ আইনটি একটি ঔপনিবেশিক আইন। বৃটিশরা ভারত শাসনের সময় তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই আইনটি এ দেশের জনগনের উপর চাপিয়ে দেয়। এটি এমন একটি আইন যেখানে সরকারি বা দাপ্তরিক গোপনীয়তা সংক্রান্ত আইন একত্রিভুত করা হয়েছে। এতে গুপ্তচরবৃত্তি ও গোপন তথ্য আদান প্রদানের মতো অপরাধের বিচার ও দন্ড সম্পর্কে বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই আইনের ৩ নম্বর ধারায় কিছু কিছু কাজকে শাস্তি মূলক অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো এই যে, আইনের জুজুর ভয় দেখিয়ে মফস্বলের এমনকি গ্রামের তহশিল অফিসের নিম্ন পদস্থ কর্মচারীরাও জনগনকে কোনো প্রকার তথ্য দিতে গড়িমসি করে।
৩. নম্বর ধারায় গুপ্তচর বৃত্তির জন্য দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এই ধারার অধীনে কেউ অপরাধ করলে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের ৫ ধারায় তথ্যের আদান প্রদান সংক্রান্ত বিধান রয়েছে।
অফিসিয়াল সিক্রেটস আ্যাক্ট, ১৯২৩- এর ৩ ও ৫ ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নিষিদ্ধ স্থানের দোহাই দিয়ে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুরুতে অধিকার আইন নিয়ে যখন অনেক তোড়জোড় চলছিল, তখন অনেকেই মতামত দিয়েছিলেন উপরোক্ত ধারাটি সংশোধন ছাড়া অধিকার আইনের প্রকৃত বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব না। শেষমেশ তথ্য অধিকার আইন কার্যকর হয়েছে। এতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পূর্বতন সব আইনের উপর নতুন আইনটির প্রাধান্যের কথা। এমনকি অফিসিয়াল সিক্রেটস আ্যাক্ট বা সরকারি গোপনীয়তা আইনও এ ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে না। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯: ধারা-৩ এ বলা হয়েছে যে, প্রচলিত অন্য কোনো আইনেরÑ ক. তথ্য প্রদান সংক্রান্ত বিধানাবলি এই আইনের বিধানবলী দ্বারা ক্ষুন্ন হইবে না, এবং তথ্য প্রদান বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধাবলী প্রাধান্য পাইবে।
এগুলো আশার কথা সন্দেহ নেই। তবুও এই ধারার ফাঁক গলে সরকারি কর্তা ব্যক্তিরা যেন কখনই তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে গোপনীয়তা আইনকে সামনে না নিয়ে আসতে পারেন সেক্ষেত্রে সজাগ ও সচেতন থাকা প্রয়োজন। এই ক্ষেত্রে সাংবাদিকদেরই হতে হবে আরও সচেতন ও প্রশিক্ষিত। কেননা এই আইনের জায়গায় আরেক আইনের অজুহাত তুলে কর্তা ব্যক্তিদের বিপত্তি সৃষ্টি করার ভুরি ভুরি নজির আছে। ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’র দোহায় দিয়ে ১৮ মে’২০২১ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ ৩ ও ৫ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তি ও রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার অভিযোগ এনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ মামলা করে রোজিনাকে জেল হাজতে পাঠান।।
লেখকঃ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও আইন গবেষক। ইমেইলঃ seraj.pramanik@gmail.com মোবাইলঃ ০১৭১৬৮৫৬৭২৮