লেখক, এম মাইনুল ইসলাম
র্যাগিং শব্দের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। র্যাগ শব্দটি মূলত ইংরেজী র্যাগিং শব্দ থেকেই এসেছে। যার প্রচলিত অর্থ পরিচয় পর্ব। সপÍম-অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপে র্যাগিংয়ের উৎপত্তি হয়। এর পর আশির দশকে ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রচলন শুরু হয় এবং নব্বইয়ের দশকে বাংলাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে ভংয়কর রুপ ধারণ করে। প্রচলিত য়ের নামে আমাদের দেশের বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে চলছে নিরব নির্যাতন। যা নবীন শির্ক্ষাথীদের মাঝে বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম।
সম্প্রতি ইসলামী বিশ^বিদ্যলয়ে ্প্রথম বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী কে ভয়াবহভাবে রাতভর নিপীড়নের যে ঘটনা তা এখন টক অব দ্যা কান্টি এবং একই সময়ে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে এক ছাত্রী র্যাগিংয়ের ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে বিশ^বিদ্যালয় গুলোতে র্যাগিংয়ের দায়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। আবার অনেকেই র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয়, র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে অনেক মেধাবী তরুণ কে, এ কথা কে না জানে ? প্রচলিত র্যাগিংয়ের মাধ্যমে নবীন শিক্ষার্থীদের উপর পৈশাচিক কায়দায় শারিরিক ও মানুষিক নির্যাতন করা হয়। এ ধরনের অমানবিক আচরণ কে ইসলাম হারাম ঘোষণা করেছেন।
নির্যাতন শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো ”জুলুম”। ইসলামের পরিভাষায়, জুলুম কারীকে জালিম বা অত্যাচারি বলা হয়। আর নির্যাতিত ব্যাক্তি কে মাজলুম বলে অভিহিত করা হয়। সব ধরণের জুলুম বা অত্যাচার ইসলামের ভাষ্যনুযায়ী কবিরা গুনাহের সমতুল্য। জালেম ও জুলুমের শাস্তি হবে অত্যান্ত ভয়ংকার। এ বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আল্লাহ তা‘য়ালা আগে থেকেই সতর্ক করেছেন; ‘নিশ্চয়! যারা জালিম, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি ’। (সূরা ইবরাহীম; আয়াত: ২২)
অন্যের ওপর জুলুম, নির্যাতন কারীরা তাদের নিজেদের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা জালিমদের কে কক্ষনো বরদাশত করবেন না। এ ব্যাপারে কোরআনে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চরণ করে বলেছেন; ‘আমি অবশ্যই তোমাদের আগে বহু জাতি কে ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা জুলুমে লিপ্ত ছিল’। (সূরা ইউনুস; আয়ত: ১০-১৩)
মানবতার দিশারী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) বলেছেন; ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘য়ালা অত্যচারীকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে তাকে এমন ভাবে পাকড়াও করবেন যে, সে আর ছুটে যেতে পারবেন না’। (বুখারী-৪৬৮৬, মুসলিম-২৫৮৩)
আল্লাহ তা‘য়ালার নিয়ম অনুযায়ী জালিমরা দুনিয়াতেই লাঞ্চিত এবং অপমানিত হয়ে থাকেন। আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্ছিত হয় এবং তাদের জীবন থেকে বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ফলে জালিমরা সাময়িক ভাবে নিজেকে ক্ষমতাবান মনে করলেও বরং কক্ষনো তারা সফলতার মুখ দেখতে পায় না। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে; ‘নিশ্চয় জালিমরা সফল হতে পারে না’। (সূরা আনয়াম; আয়াত: ২১)
আল্লাহ তা‘য়ালা জুলুম কে পছন্দ করেন না বরং জুলুম করাকে আল্লাহ তার নিজের ওপর হারাম করেছেন। হাদীসে কুদসীতে এসেছে- আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন; হে আমার বান্দা! ‘জুলুম করাকে আমি নিজের ওপর হারাম ঘোষণা করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অন্যের ওপর জুলুম করা থেকে বিরত থাক’। (মুসলিম-৬৭৩৭) অন্যত্র বলা হয়েছে; ‘জুলুমকারী বা ক্ষমতা অপব্যাবহারকারীদের সম্পর্কে তুমি কক্ষনো মহান আল্লাকে উদাসিন মনে করবে না’। (সূরা ইবরাহিম; আয়াত: ৪২)
ইসলামের সঠিক শিক্ষার অভাবে ও নৈতিক শিক্ষা না থাকার ফলে কিছু শিক্ষার্থী র্যাগিংয়ের মতো জঘন্য অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। র্যাগিংয়ের নামে জুুলুম,নির্যাতন করা বা তাদের সহযোগিতা করা কোন মু‘মিনের কাজ হতে পারে না। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা হরহামেশাই জেনে-বুঝে এ ধরনের অপরাধীদের সহযোগিতা করে থাকে। এ ব্যাপারে হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, অত্যাচারিতদের সহযোগিতা করাও জুলুমের শামিল। এ ধরনের জুলুম প্রতিহত করার ব্যাপারে রাসূল (সা:) কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছন; তিনি বলেন, ‘যে ব্যাক্তি কোন জালিমের শক্তি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে তাকে সহযোগিতা করে অথচ সে জানে ওই ব্যক্তি জালেম, তখন সে মুলিম থেকে খারিজ হয়ে গেল’। (মেশকাত - ৪৯০৮)
তিনি আরো বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সেই ব্যাক্তিই মর্যাদার দিক থেকে নিকৃষ্ট সাব্যস্ত হবেন, যে অন্যের পার্থিব কল্যাণে নিজের আখেরাত কে ধ্বংস করছে। অর্থ্যাৎ কোন জালিম কে সাহায্য করছে’। (ইবনে মাজাহ-৪১০১)
বর্তমনে আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে র্যাগিং নামের এই জুলুম ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্বে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে, রুখে দিতে হবে এই অসভ্যতাকে। ইসলাম এই জুলুমের মতো অন্যায় এবং সমাজবিধ্বংসী কাজকে মূলোৎপাটনের জোর তাগিদ প্রদান করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা:) বলেছেন; মানুষ যদি কোন অত্যাচারিত ব্যাক্তি কে অত্যাচারে লিপ্ত দেখেও দু‘হাত চেপে ধরে তাকে প্রতিহত না করে, তবে আল্লাহ তা‘য়ালা অচিরেই তাদের সবাই কে ভয়ানক শাস্তিতে নিক্ষিপ্ত করবেন। (সুনানে তিরমিজি-২১৬৮)
হযরত ওমর ফারুক (রা:) বলেন, ‘জালিমকে ক্ষমা করা মাজলুমের ওপর জুলুম করার শামিল। কাজেই, সম্মেলিতভাবে এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে জালিম কে প্রতিহত করে মাজলুম কে রক্ষা করা প্রতিটি সচেতন মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।
লেখক: শিক্ষক ও প্রবন্ধিক।
সাবেক শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
সম্পাদক ও প্রকাশক : এ্যাডভোকেট পি. এম. সিরাজুল ইসলাম ( সিরাজ প্রামাণিক)
সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয় :কুষ্টিয়া আদালত চত্ত্বর, খুলনা, বাংলাদেশ।
মোবাইল : 01716-856728, ই- মেইল : seraj.pramanik@gmail.com নিউজ: dainikinternational@gmail.com