শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
২১৫ বছর আগে কেরালা’র রাজ্যে নারীদের স্তন ঢেকে রাখতে চাইলে দিতে হত স্তনকর।! আবার এই করের পরিমাণ নির্ভর করত স্তনের আকারের উপর! যার স্তন যতবড় তার কর ততো বেশী! ৩৫ বছর বয়সী কৃষ্ণ বর্ণের অতীব সুন্দরী এক নারীকে প্রায়ই কাজের জন্য বাইরে যেতে হতো! তবে সে সবসময় তার স্তন ঢেকে রাখতো!
হঠাৎ একদিন সে শুল্ক সংগ্রাহকের নজরে পড়লো, শুল্ক সংগ্রাহকরা তার কাছে স্তনশুল্ক দাবী করলো! অস্বীকৃতী জানিয়ে মেয়েটি বললো, স্তন আমার, তাকে আবৃত রাখব, নাকি অনাবৃত রাখব তা ঠিক করার তুমি কে! আমি শুল্ক দেবো না। প্রতিদিন শুল্ক সংগ্রাহকরা তার বাড়িতে এসে তাকে শুল্ক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে লাগলো! দিনে দিনে করের বোঝাও বাড়তে থাকে!
অবশেষে একদিন কর দিতে রাজী হলো মেয়েটি! শুল্ক সংগ্রাহকদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতরে চলে যায় মেয়েটি। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলে তার স্তন দুটি! নিজের স্তনদ্বয়কে কলাপাতার আবরণে মুড়িয়ে শুল্ক সংগ্রাহকের হাতে শুল্কস্বরূপ তুলে দেয় তার রক্ত মাখা স্তন!
তারপর বলল, যে জিনিসের জন্য আমাকে অতিরিক্ত শুল্ক গুনতে হয়, সেই জিনিসই আমি রাখবো না। বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে যায় শুল্ক সংগ্রাহকসহ পাড়া প্রতিবেশী সবাই! অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মেয়েটির মৃত্যু হয়! পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এই ঘটনা! রাজা স্তনশুল্কসহ সকল প্রকার অবৈধ শুল্ক বাতিল করতে বাধ্য হন!
কাহিনী এখনো বাকী! মেয়েটির শরীর তখনও চিতায় দাউদাউ করে জ্বলছে! হঠাৎ একটা লোক দৌড়ে এসে সেই চিতার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে! লোকটা মেয়েটির স্বামী! ভারতের ইতিহাসে, স্ত্রীর সঙ্গে সহমরণে যাওয়া কোনো পুরুষের প্রথম এবং শেষ ঘটনা ! ইতিহাস এই প্রেমিক পুরুষের নাম খোদাই করার তাগিদ অনুভব করেনি! কিন্তু যে আগুন মেয়েটি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো ভারতীয় নারীদের মনে, তা আজও জ্বলজ্বল করছে। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছে!
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’।