শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
কুষ্টিয়ার এক ‘কুম্ভদাসী’র স্বৈরাচারী আচরণ নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা বনাম বাস্তবতা!

কুষ্টিয়ার এক ‘কুম্ভদাসী’র স্বৈরাচারী আচরণ নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা বনাম বাস্তবতা!

 

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

পতিতাদের অসংখ্য নামে ডাকা হতো ইতিহাসের আদিকাল থেকেই। কেউ বলতেন দেহপসারিণী, বেশ্যা, রক্ষিতা, খানকি, উপপত্নী আবার কেউবা জারিণী, পুংশ্চলী, অতীত্বরী, বিজজব্রা, অসোগু, গণিকা ইত্যাদি নামে ডাকতেন। পতিতাদের আবার ৯টি ভাগে ভাগ করেছে, তা হলো-‘কুম্ভদাসী, পরিচারিকা, কুলটা, স্বৈরিণী, নটি, শিল্পকারিকা, প্রকাশ বিনষ্টা, রূপজীবা এবং গনিকা।

‘পতিতা বৃত্তির ইতিহাস’ নামক বইয়ে পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে “পতিতা অর্থাৎ বেশ্যারা হলো সেই সম্প্রদায়ভূক্ত নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করাতে নিজেদের দেহ দিয়ে জীবিকা অর্জন করে।” তবে জর্জ রালি স্কট তার বইতে, আরো এক শ্রেণীর পতিতার কথা বলেছে, যারা অর্থ ছাড়াই পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক করে তাদেরকে সে ‘পেশাহীন পতিতা’ বলে অভিহিত করেছে।

আমার এ লেখার উপজীব্য বিষয় কুষ্টিয়ার কথিত এলিট শ্রেণীর মনোরঞ্জনকারিণী এ নারী কোন শ্রেণীর পতিতা? হিন্দুদের মহাগ্রন্থ পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতে প্রচুর বেশ্যা অর্থাৎ অপ্সরার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন-উর্বশী, মেনকা, তিলোত্তমা, ঘৃতাচী, সুকেশী, সরলা, বিদ্যুৎপর্ণা, সুবাহু এরকম অনেক স্বর্গ বেশ্যার নাম আমরা পাই।

“মহাভারতে উল্লেখ আছে যে,একজন বেশ্যা ভাল প্রকৃতির হলে উচ্চতর জীবনে পূনর্জন্ম লাভ করতে পারে। মহাভারতের যুগে এমন জনা পাঁচেক বিখ্যাত মুনি ঋষির নাম উল্লেখ করা যায়, যারা ‘স্বর্গবেশ্যা’ দেখে কামার্ত হয়ে তাদের সঙ্গে যৌন মিলন করেছিল। মহাভারতের যুগে অপরাপর সম্মান জনক বৃত্তি গুলির মধ্যে পতিতা বৃত্তিই ছিল অন্যতম। রাজদরবারে ও বিবিধ রাজকীয় অনুষ্ঠানে পতিতাদের উপস্থিতি ছিল অপরিহার্য।

আরো এক ধরনের পতিতাবৃত্তি চালু ছিল ভক্তিমূলক পতিতাবৃত্তি। অর্থাৎ পতি বা পত্নী ব্যতীত অন্য কারও সাথে পবিত্র বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে যৌন মিলন। এ ধরনের কাজে যে ব্যক্তি জড়িত তাকে বলে দেবদাসী। কুষ্টিয়ার সেসব দেবদাসীদের নাম পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।

সপ্তম শতকের রাজা হর্ষবর্ধনের সভাকবি ছিল বানভট্ট। বানভট্ট তাঁর “কাদম্বরী” গ্রন্থে লিখেছে, সেকালে বেশ্যারাই দেশের রাজাকে স্নান করাত। এমনকি রাজার পরনের সব পোশাক বেশ্যারাই পরিয়ে দিতো। হিন্দুরা মনে করে ,বেশ্যারা এই সমাজ কে নির্মল রাখে। আর সেই কারণেই দুর্গা পুজার সময় বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য।”দূর্গা পুজার সময় দশ ধরনের মাটি প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য। [তথ্যসুত্র: কালিকা পুরাণোক্ত দুর্গাপূজা পদ্ধতি, প্রবীর কুমার চট্টোপাধ্যায়,কলকাতা, পৃষ্ঠা ৭২,৮৬,১০৮,১২৭]

১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর ব্রিটিশদের অধীনে হিন্দু জমিদাররা সব কিছু পরিচালনা করতেন। জমিদারদের বাংলো-খাসমহল থেকেই পরবর্তীতে পতিতালয়ের সৃষ্টি হয়। সেসময় জামদারদের প্রভাবে কুষ্টিয়াতেও বেশ কিছু নিষিদ্ধ পল্লী গড়ে উঠে। কুষ্টিয়ার বড় বাজার, রকশি সিনেমা হল ও আলিয়া মাদ্রাসার পার্শ্ববর্তী এলাকায়। দেশের অন্যতম বস্ত্রকল মোহিনী মিল প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় খদ্দেরেরও অভাব ছিল না। কুষ্টিয়া বড় ষ্টেশন সংলগ্ন গড়াই নদীর তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠে বৃহত্তর যৌনপল্লী। পোড়াদহ কাপড়ের হাট থাকায় উত্তর কাটদহ ও কাপড়ের হাট এলাকায় যৌনপল্লীর প্রসার লাভ করে। ১৯৭৯ সালের দিকে প্রশাসনের সহায়তায় কিছু জায়গা থেকে উচ্ছেদ হলেও তাদের ছিটেফোটার ফসল কুষ্টিয়ার আলোচিত এ নারী।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, পতিতাদের বাড়াবাড়ি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে সমাজের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। “এমনকি কিছু পতিতা শহরে প্রকাশ্য রাজপথে নৃত্য পর্যন্ত করতো। সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে আবেদন করা সত্ত্বেও এর কোনো প্রতিকার হয়নি। কারণ পুলিশ ধনীদের তৈরি বেশ্যালয় গুলোতে হস্তক্ষেপ করতে সাহস পেত না। শুধু মাত্র দ্বারকানাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা) কলকাতার একটি এলাকাতেই তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন। [তথ্যসুত্র: সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী,১৯৬২,পৃ.৩৫৮-৬০]

আমার এ লেখার সাথে ওই আলোচিত নারীর জীবন চরিত্র ও কুষ্টিয়া এলিট শ্রেনীর বাবুদের চরিত্রের হুবুহু মিল রয়েছে। এ নারীর আচরণ, কর্মকান্ড লেখালেখি এমনকি রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করেও প্রতিহত করার সুযোগ আছে কি? পাঠক সমাধান দেবেন।

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel